প্রয়োজনীয় সংষ্কারের অভাবে হুমকির মুখে রয়েছে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-২এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট গ্রামের বেড়িবাঁধ। খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে প্রতিনিয়ত ভাঙছে এই বেড়িবাঁধ। যে কোন মুহুর্তে জরজীর্ণ এই বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা। ফলে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে বিছট গ্রামের বাসিন্দাসহ আশে পাশের গ্রামে বসবাসকারিরা।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে হাজরাখালি খেয়াঘাটগামী খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙন দীর্ঘদিনের। নদী ভাঙনরোধে কার্যকরি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রায় দুই দশক ধরে ভাঙছে এই বেড়িবাঁধ। খোলপেটুয়া নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিছট গ্রামের শতাধিক ব্যক্তি গৃহহারা হয়ে গ্রামের পাশ্ববর্তী এলাকায় বেড়িবাঁধের উপর টোং ঘর বেধে বসবাস করছে। বসতবাড়ি ও ধানের জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। অনেকে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্রে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বেড়িবাঁধ সরিয়ে নিতে নিতে গ্রামের অর্ধেকের বেশি চলে গেছে নদীগর্ভে। নদী ভাঙনে বিছট গ্রামের গাজীবাড়ি মসজিদ, মোড়লবাড়ি জামে মসজিদ, এফতেদায়ী মাদ্রসা, এতিমখানা ও সরকারি পুকুরসহ অসংখ্য ঘরবাড়ি খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে চলে গেছে।
সঠিকভাবে সংষ্কার না করায় পাউবো’র বেড়িবাঁধটি জরাজীর্ণ হয়ে বর্তমানে রিংবাঁধে পরিণত হয়েছে। নদীর প্রবল জোয়ারের চাপ বা জোয়ারের সময় দমকা হাওয়া বা ঝড় বৃষ্টি ইলেই যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে জরাজীর্ণ এ বেড়িবাঁধ। এর ফলে প্লাবিত হতে পারে প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা ও পার্শ্ববর্তী বড়দল ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগে সংস্কারের নামে সাধারণ মানুষের রেকর্ডিয় জমির মধ্য দিয়ে বিকল্প বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর থেকে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বিছট গ্রামের নদী রক্ষা বাঁধ আবারো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে একসময় বিছট গ্রাম উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
স্থানীয়রা আরও বলেন, আমরা ত্রাণ বা অনুদান চাই না, চাই নদীর ভাঙনরোধে টেকসই বেড়িবাঁধ। তা না হলে প্রতিবছর যে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগে বা ঘূর্ণিঝড়ে নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি নদীর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়ে একাকার হয়ে যাবে। পানিবন্দি হয়ে পড়বে উপজেলার চার ইউনিয়নের মানুষ।
তৌষিকে কাইফু বলেন, খোলপেটুয়া নদীর আদি গতিপথ হারিয়ে বিছট গ্রামের নদী সংলগ্ন কৃষি জমি ভাংতে শুরু করেছে। বিষয়টি সাতক্ষীরা-৩ আসনের সাংসদ অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হককে অবহিত করা হয়েছে।
জেলা পরিষদের সাবেক মেম্বর মোঃ আব্দুল হাকিম বলেন, প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে ভাঙছে বিছট গ্রামের পাউবো’র বেড়িবাঁধ। অব্যহত নদী ভাঙনে গ্রামের শতাধিক মানুষ গৃহহারা হয়েছে। শতাধিক বিঘা ফসলি জমি চলে গেছে নদী গর্ভে। মাঝে মধ্যে নামমাত্র সংষ্কার করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধটি স্থায়ীভাবে সংস্কার না হওয়ায় প্রতিবছর খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে পানির আঘাতে নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙে রিং বেড়িবাঁধে পরিণত হয়। এলাকা প্লাবিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষের রেকর্ডিয় সম্পত্তির উপর দিয়ে বিকল্প বেড়িবাঁধ দিতে হয়েছে। এ সময় তিনি নদীর অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তির উপর দিয়ে স্থায়ী, টেকসই নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান বলেন, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান মিশুক-কে সাথে নিয়ে ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে। একই সাথে ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। অতি দ্রুতই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এনএম