খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর পেয়ে খুশি রাস্তার পাশে ঝুপড়িতে থাকা বৃদ্ধ দম্পতি

শহিদুল ইসলাম, বা‌গেরহাট

প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে জমিসহ পাকা ঘর পেলেন বাগেরহাট সড়কের পাশে ঝুপড়ি ঘরে থাকা বৃদ্ধ দম্পতি রতন কুমার বিশ্বাস (৮০) ও মনিরা বেগম (৬৫)। বৃহস্পতিবার (০৪ মার্চ) দুপুরে বাগেরহাট ট্রাফিক মোড়-দাসপাড়া সড়কের মেগনিতলাস্থ এলাকার ঝুপড়ি ঘর থেকে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি‘র ব্যবহৃত গাড়িতে করে রনসেন গুচ্ছ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আগে থেকে নির্ধারণ করে রাখা দুই কক্ষের একটি পাকা ঘরে তুলে দেওয়া হয় এই দম্পত্তিকে। বৃদ্ধ বয়সে পাকা জমিসহ পাকা ঘর, থাকার চকি, খাবার ও নতুন পোশাক পেয়ে খুশি অসহায় এই বৃদ্ধ দম্পতি।

এসময় বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের সহকারী সচিব এইচএম শাহিন, সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিজিয়া পারভীন, সহকারী কমিশনার ভুমি মোহাম্মাদ শহিদুল্লাহ, ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাচ্চুসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গন্যমান্য ব্যক্তিগন উপস্থিত ছিলেন।

বৃদ্ধ রতন কুমার বিশ্বাস বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু স্বীকৃতি পাইনি। আবেদন করেছি মন্ত্রণালয়ে কি হবে জানিনা। বাবার যত সম্পদ ছিল মানুষে জোর পূর্বক জাল দলিল করে দখল করে নিয়েছেন। এখন আমার দখলে কোন জমি নেই। দশ বছরের বেশি সময় মেগনিতলা রাস্তার পাশে একটি ঝুপড়ির মধ্যে থাকতাম। বিভিন্ন সময় অনেকেই অনেক কিছু দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কিছুই পাইনি। আজকে প্রধানমন্ত্রীর দয়ায় একটি পাকা ঘর পেয়েছি। বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ যাদের চেষ্টায় আমাদের এই ঘর প্রদান করা হল তাদের ধন্যবাদ জানাই। মরার আগ পর্যন্ত পাকা ঘরে থাকতে পারব এই ভেবেই খুব আনন্দ লাগছে মনে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে মারতে চাই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই বৃদ্ধ।

রতন কুমারের স্ত্রী অসুস্থ মনিরা বেগম বলেন, পৃথিবীতে কেউ নেই আমার। ১৫ বছর আগে তার (রতন কুমার বিশ্বাস) সাথে এক সাথে থাকা শুরু করি। কিছুদিন বেড়িবাঁধে থেকেছি। পরে দশ বছর ধরে খেয়ে না খেয়ে মেগনিতলার ঝুপড়িতে আছি। আজ পাকা ঘর পেলাম। জীবনে পাকা ঘরে থাকব তা কখনও ভাবতে পারিনি। আমরা খুব খুশি হয়েছি।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানতে পারি মুক্তিযোদ্ধা দাবি করা রতন কুমার বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি তার সহধর্মিনীকে নিয়ে সড়কের পাশে ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। আমি তার খোজ খবর নেই। তাকে রনসেন গুচ্ছ গ্রামে জমিসহ একটি ঘর দেওয়ার প্রস্তাব দেই। তিনি রাজি হন। সেই প্রক্রিয়া হিসেবে পাকা ঘর, খাট, পোশাক, হাড়ি-পাতিল, খাবারসহ তার জন্য নির্ধারিত ঘরে উঠিয়ে দিয়েছি। বয়স বেশি হওয়ায় শারীরিকভাবেও একটু অসুস্থ্য তারা দু’জন। এজন্য সহজে পানির সংস্থানের জন্য তাদের ঘরের পাশে একটি ডিপ টিউবওয়েলও বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আশা করি বাকি দিনগুলো এই দম্পতি শান্তিতে থাকতে পারবেন।

রতন কুমার বিশ্বাসের মুক্তিযোদ্ধার আবেদনের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে ও জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম।

বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন বলেন, বাগেরহাটবাসীর যেকোন সমস্যা আমাদের প্রিয় নেতা সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের নজরে আসলেই তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেন। রতন দম্পত্তির অসহায়ত্বের খবর শুনে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আমি তার নির্দেষনা অনুযায়ী রতন দম্পতির সাথে দেখা করেছি, কথা বলেছি। সবশেষ সবার সাথে আলোচনার মাধ্যমে তাদের বসবাসের জন্য একটি ভাল ব্যবস্থা হয়েছে। তাদেরকে অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া চলছে।

রতন কুমার বিশ্বাস ও মনিরা বেগম দুইজনের বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার কালদিয়া গ্রামে। দুইজনেরই কোন জায়গা জমি নেই। কোন সন্তানও নেই। দুই জনে দুই ধর্মের হলেও ১৫ বছর ধরে একই সাথে বসবাস করে আসছেন তারা।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!