খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করে পিএসসির প্রজ্ঞাপন
নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ব্যাটিংয়ে উড়ন্ত সূচনা থেমে গেল পাওয়ার প্লের পর। শেষদিকে টপাটপ উইকেট হারিয়ে মিলল না বড় পুঁজি। তারপরও নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। বোলিংয়ের শুরুতে তরুণ পেসার মারুফা আক্তার কোনো রান না দিয়ে এনে দিলেন দ্রুত ৩ উইকেট। কিন্তু সেই ধাক্কা সামলে হার্শিতা মাদাভি ও নিলাকশি ডি সিলভার শতরানের জুটিতে বড় জয় পেল শ্রীলঙ্কা।

রোববার রাতে কেপটাউনের নিউল্যান্ডসে ২০২৩ আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ১২৬ রান তোলে তারা। এরপর ১০ বল হাতে রেখে ৩ উইকেটে ১২৯ রান করে লক্ষ্য পূরণ করে লঙ্কানরা।

নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটি বাংলাদেশের টানা ১৩তম হার। আগের তিন আসরের কোনোটিতেই জয়ের স্বাদ মেলেনি তাদের। ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো উইকেটে ১৫০ রানের আশেপাশের পুঁজি দরকার ছিল। তেমন কিছুর আভাস প্রথমে মিলেছিলও। কিন্তু খেই হারিয়ে ফেলা লাল-সবুজ জার্সিধারীরা আটকে যায় সাদামাটা সংগ্রহে। বোলিংয়েও একইভাবে সুর কেটে যায় ইনিংসের পরের অংশে।

চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১০৪ রানের জুটিতে দলকে জয় পাইয়ে দেন হার্শিতা ও নিলাকশি। ৫০ বলে আট চার ও এক ছক্কায় অপরাজিত ৬৯ রান করেন হার্শিথা। দুটি চারে ৩৮ বলে অপরাজিত ৪১ রান আসে নিলাকশির ব্যাট থেকে। দুজনই জীবন পান একবার করে।

প্রথম ওভারেই পেসার আচিনি কুলাসুরিয়াকে দুটি চার মারেন শামিমা সুলতানা। তবে পরের ওভারের প্রথম বলেই পড়ে যায় উইকেট। মুখোমুখি হওয়া প্রথম ডেলিভারিতে সাজঘরে ফেরেন মুর্শিদা খাতুন। হার্শিতার সরাসরি থ্রোতে রানআউট হন তিনি।

শামিমার বাউন্ডারি আনা চলতে থাকে। যোগ্য সঙ্গী হিসেবে যুক্ত হন সোবহানা মোস্তারি। তৃতীয় ওভারে বাঁহাতি স্পিনার সুগান্দিকা কুমারিকে টানা তিনটি চার মেরে স্বাগত জানান তিনি।

পঞ্চম ওভারে ভাঙে ২১ বলে ২৮ রানের জুটি। ওশাদি রানাসিংহেকে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন শামিমা। থামে চারটি চারে সাজানো তার ১৩ বলে ২০ রানের ইনিংস।

আক্রমণে ফেরা কুলাসুরিয়ার ওপর চড়াও হন মোস্তারি। তিনি দুটি চার হাঁকালে দারুণভাবে পাওয়ার প্লে শেষ হয় বাংলাদেশের। ষষ্ঠ ওভার শেষে সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৪৮ রান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে এটি নারীদের সর্বোচ্চ স্কোরের কীর্তি।

এরপর কমে আসে রান তোলার গতি। মোস্তারি ও অধিনায়ক নিগার সুলতানা সিঙ্গেল-ডাবল নিয়ে এগোতে থাকেন। তবে নবম ওভারে বল হাতে নিয়েই তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করেন লঙ্কান দলনেতা চামারি আতাপাত্তু। ভাঙে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩১ বলে ৩৫ রানের জুটি।

পাঁচটি চারের সাহায্যে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৯ রান করেন মোস্তারি। তবে ৩২ বল লেগে যায় তার। এরপর আরও ধীরগতির হয়ে যায় রানের চাকা। বাড়তে থাকে চাপ। বড় শট খেলা হয়ে পড়ে জরুরি। সেই চেষ্টায় রানাসিংহের করা ১৬তম ওভারে বিদায় নেন নিগার ও লতা মণ্ডল।

একটি চারে ৩৪ বলে ২৮ রান আসে নিগারের ব্যাট থেকে। ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে আউট হন তিনি। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে স্টাম্পড হওয়া লতা করেন ১৩ বলে ১১ রান। নিগারের সঙ্গে তার ২৪ রানের জুটিতে লাগে ৩৩ বল।

দলীয় একশ রানের মধ্যে পড়ে যায় ৫ উইকেট। শেষ চার ওভার কাজে লাগাতে ১৬ বছর বয়সী মারকুটে ব্যাটার স্বর্ণা আক্তার ও রিতু মনির দিকে তাকিয়ে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তাদের কেউই উইকেটে গিয়ে সুবিধা করতে পারেননি।

মনোযোগের ঘাটতিতে রানআউট হন রিতু। ক্রিজ পৌঁছানোর আগেই মাথা পেছনে ঘুরিয়ে সতীর্থ নিরাপদ আছে কিনা দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। সেসময় সুগান্দিকার সরাসরি থ্রো ভেঙে ফেলে স্টাম্প। কিছুদিন আগে নারী অনূর্ধ্ব-১৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আলো ছড়িয়ে জাতীয় দলে অভিষেকে স্বর্ণা কাটা পড়েন স্লগ সুইপ করতে গিয়ে।

১০ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে বড় সংগ্রহের আশা ভেস্তে যায় বাংলাদেশের। শেষ ওভারে অফ স্পিনার চামারির দ্বিতীয় শিকার হন নাহিদা আক্তার। ইনিংসের শেষ বলে অবসান হয় বাউন্ডারির জন্য অপেক্ষা। তবে কারও ব্যাট থেকে নয়, সেটা আসে বাই থেকে।

প্রথম ১০ ওভারে ৩ উইকেটে ৭২ রান তোলে বাংলাদেশ। পরের ১০ ওভারে ৫৪ রান তুলতে পড়ে ৫ উইকেট। শ্রীলঙ্কার পক্ষে অফ স্পিনার রানাসিংহে ৩ উইকেট পান ২৩ রানে। ২ উইকেট নিতে চামারির খরচা ১৯ রান।

লক্ষ্য তাড়ায় নেমে চামারি খেলতে থাকেন স্বাচ্ছন্দ্যে। তবে বিপজ্জনক বাঁহাতি ব্যাটারকে মাথাব্যথার কারণ হতে দেননি মারুফা। তৃতীয় ওভারে মিড অনে তার সহজ ক্যাচ লুফে নেন লতা। চামারির ১৭ বলে ১৫ রানের ইনিংসে ছিল তিনটি চার।

উইকেট মেডেন নেওয়ার পর আক্রমণে ফিরে তোপ দাগেন ১৮ বছর বয়সী মারুফা। পরপর দুই শিকার ধরে জাগান হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও। ভিশমি গুনারত্নে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফিরতি ক্যাচ দেন। নিচু হওয়া বলে বোল্ড হন আনুশকা সাঞ্জিওয়ানি।

২৫ রানে ৩ উইকেট তুলে সুবিধাজনক অবস্থায় চলে যায় বাংলাদেশ। মহাবিপাকে পড়ে লঙ্কানরা। সেখান থেকে পাল্টা লড়াই শুরু করেন ওপেনার হার্শিতা। যোগ্য সঙ্গী হিসেবে তিনি পান নিলাকশিকে।

পাওয়ার প্লে শেষে শ্রীলঙ্কার স্কোর দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ২৭। ইনিংসের মাঝপথে রান বেড়ে হয় ৩ উইকেটে ৪৯। অর্থাৎ পরের ১০ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল আরও ৭৮ রান।

বাংলাদেশকে হতাশায় আচ্ছন্ন করে কঠিন সেই পথ দারুণভাবে পাড়ি দেন হার্শিতা ও নিলাকশি। নাহিদার করা নবম ওভারে বেঁচে যান নিলাকশি। পয়েন্টে তার ক্যাচ ফেলেন মুর্শিদা। তখন ৫ রানে খেলছিলেন তিনি। স্পিনার নাহিদা ফের আক্ষেপে পোড়েন ১৫তম ওভারে। হার্শিতাকে স্টাম্পড করার সুযোগ হাতছাড়া করেন উইকেটরক্ষক শামিমা। তখন তিনি ছিলেন ৪৫ রানে।

রিতুর করা পরের ওভারে ১৭ রান আসে। সেখানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। চার মেরে ফিফটি পূরণ করার পর ফ্রি হিটে হার্শিতা হাঁকান ম্যাচের একমাত্র ছক্কা। ওই ওভারে পরে আরও একটি চার মারেন তিনি।

টানা দ্বিতীয় জয়ে আসরের সেমিফাইনালের পথে এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা। উদ্বোধনী ম্যাচে আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছিল তারা। বাংলাদেশ নিজেদের পরের ম্যাচে আগামী মঙ্গলবার খেলবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!