প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে রবিবার (১৩ অক্টোবর)সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গাপূজার সমাপ্তি হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় উপজেলার ৮২টি পূজামণ্ডপে পূজা-অর্চনা, শ্রদ্ধা নিবেদন এবং প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে ভক্তরা পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসব উদযাপন করেন। দুর্গোৎসবের প্রতিদিনই হিন্দু সম্প্রদায়ের সকল বয়সের নারী-পুরুষ মণ্ডপে-মণ্ডপে গিয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেন। পাশাপাশি দূর্গতি নাশিনী দেবীদুর্গার কৃপা লাভের আশায় তারা আরাধনা করেন।কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য উপজেলার প্রতিটি মন্ডপে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল। প্রতিটি পূজামণ্ডপে বিপুলসংখ্যক আনসার, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। এছাড়াও নৌ বাহিনীর নিয়মিত টহলের ফলে সনাতন ধর্মলম্বীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
এদিকে রোববার দিনশেষে দেবী দুর্গার বিদায়বেলায় আনন্দ-বেদনার মিশ্রণ অনুভূতিতে দেবী দুর্গার ভক্তদের হৃদয় সিক্ত করে তোলে। দশমীতে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেন ভক্তরা। বিকাল ৩টা থেকে নগরীর জেলখানা ঘাটে ভৈরব নদে প্রতিমা নিরঞ্জন শুুরু হয়। এছাড়া ফুলতলা, পাইকগাছা, রূপসা, দাকোপে পৃথক পৃথকভাবে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়।
নআমাদের তেরখাদা প্রতিনিধি জানান, উপজেলা কেন্দ্রীয় মন্ডপ থেকে চিত্রা নদী অভিমুখে মন্ত্রচ্চারণ ও পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে বিজয়ার শোভাযাত্রা করে। পরে সেখানে বিভিন্ন মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরবিন্দ প্রসাদ সাহা ও সাধারণ সম্পাদক শংকর কুমার বালা বলেন, দেবীদুর্গার বিসর্জনের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়ভাবে আমাদের দুর্গোৎসব শেষ হল। বিগত পাঁচ দিন সকাল থেকেই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই পুজায় আনন্দ উল্লাস করেছেন। উপজেলা প্রশাসন,পুলিশ প্রশাসন,নৌবাহিনী,স্থানীয় রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও সকল সচেতন মানুষের সহযোগীতায় অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের শারদীয় দুর্গোৎসব সমাপ্তি হয়েছে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিএম ইমদাদুল হক বলেন, ‘প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার সমাপ্তি হল। উপজেলার কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই অত্যন্ত সুন্দরভাবে পূজার সমাপ্তি রয়েছে। পূজায় যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না ঘটে তেরখাদা থানা পুলিশ সে বিষয়ে অত্যন্ত সোচ্চার ছিল।’
নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর জানান, দেবীদুর্গাকে বিসর্জনের মাধ্যমে ৫দিন ব্যাপী দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটেছে। রোববার সন্ধ্যা ৭টা থেকে যশোর শহরের লালদীঘিতে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া শুরু হয়। প্রতিমা বিসর্জনকে ঘিরে শহরের লালদীঘিতে হাজারো মানুষের ঢল নামে।
যশোর পৌরসভার তত্ত্বাবধানে শহরের ৪৯টি মন্ডপের প্রতিমা লালদীঘিতে বিসর্জন দেওয়া হয়। বিসর্জন উপলক্ষে লালদীঘি এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিমা বিসর্জনের সময় অনেক ভক্ত অশ্রুসিক্ত থাকেন।
যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে সন্ধ্যায় বিসর্জনের আনুষ্ঠানিক শুরুতে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তৃতা করেন সভাপতি দীপংকর দাস রতন। এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ, যশোর সেনানিবাসের লেফট্যানেন্ট কর্নেল মোস্তফা কামাল, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর সাংগঠনিক জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুলসহ শহরের বিভিন্ন স্তরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ।
এর আগে বিকাল থেকেই মন্দির মন্ডপে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে দুর্গা মাকে বিদায় জানান ভক্তরা। লালদীঘি ছাড়াও জেলার বিভিন্ন নদী এবং পুকুরেও এদিন সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
খুলনা গেজেট/কেডি