প্রতারণা ও সাধারণ বেকার যুবকদেরকে চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই শিক্ষার্থীর নাম মেহেদী হাসান মুরাদ। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার এসব প্রতারণামূলক কর্মকান্ডের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগীসহ এলাকার সাধারণ জনগণ।
এদিকে বিষয়টি জনসম্মুখে আসলে তাকে আটকে রেখে থানায় সোপর্দ করে স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে অর্থ আত্মসাতের মামলায় তাকে আটক করেন পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, মুরাদ ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয়ে নাম ভাঙিয়ে ও নিবন্ধনহীন ভুঁইফোর সংগঠন তৈরী করে নিজ এলাকা রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সাধারণ বেকার যুবকদেরকে চাকুরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মেহেদী হাসান মুরাদ নিজেকে তার তৈরি ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনী সহায়তাকারী সংস্থা’র মানবাধিকার কর্মী, সমাজ সেবক, ওয়াল্ড চাইল্ড ইয়ুথ ফোরামের প্রধান নির্বাহী অফিসার, নিজের নামে তৈরী ভুইফোর নিবন্ধনহীন মুরাদ খান নিউজ ৭১ ডট কম( MKNews71.com) এর কর্নধার দাবি করে। এসব পরিচয় ব্যবহার করে নানা কৌশলে সে যুব উন্নয়নে চাকুরি দেওয়ার নামে এবং ওয়াল্ড চাইল্ড ইয়ুথ ফোরাম সংঠনের নামে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও দাতা সংস্থা থেকে পথ শিশুদের সহযোগিতা ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর নাম করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতেন। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য সে বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী শিক্ষকদের উপদেষ্টা বানাতেন এবং তাদের পরিচয় ব্যবহার করে সংগঠনকে মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করতেন এবং এভাবে সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতেন মুরাদ।
এছাড়া সে লোক দেখানোর নামে অনেক সময় দু-একজনকে সহযোগিতা করে সে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করে মানুষকে ধোঁকা দেয় এবং বাকী অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়।
তারা আরও জানান, এলাকায় ক্রাইম নিউজের নাম করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। গ্রামবাসী মুরাদ ও তাঁর সহযোগীদের এসব কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে এসব প্রতারণার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে। একইসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এসব প্রতারণার বিচার চেয়ে স্মারক লিপি দিয়েছে। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ মুরাদ ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
এ বিষয়ে ওয়াল্ড চাইল্ড এন্ড ইয়ূথ ফোরামের উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মন্ডল বলেন, ‘যদি এমন কিছু হয়ে থাকে এটা খুবই দুঃখজনক। আমি তো বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করি। আমি ভাবছিলাম এটা সামাজিক সংগঠন এবং ভালো একটা সংগঠন। তার অনুরোধে এখানে আমি যুক্ত হই। তবে এখন মনে করছি এখানে আর থাকা যাবে না।’
মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে লোকজন মুরাদকে আটকে রাখে। পরে সে নিজেই সারেন্ডার করে। থানায় তার নামে মামলা করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে।’
খুলনা গেজেট/ টিএ