বাগরহাটের রামপাল উপজেলার পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক হামিমা সুলতানার বিরুদ্ধ প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযাগে তাকে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদশ দেওয়া হয়েছে। ২৩ মে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকর মহা-ব্যবস্থাপক দিপংকর রায় স্বাক্ষরিত এক পত্রে ওই আদশ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, উপজেলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক রামপাল সদর ইউনিয়নের ঝনঝনিয়া গ্রামের বাসিন্দা হামিমা সুলতানা শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সমিতির সঞ্চয়, ঋণের কিস্তি, ভুয়া ঋণ, বিতরণকৃত ঋণ থেকে আত্মসাৎ, কর্মচারীদের বেতনের টাকা উত্তালন করে আত্মসাৎসহ সর্বমাট ১ কোটি ৮৩ লাখ ২৮ হাজার ৮৩০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সম্প্রতি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের এক নিরীক্ষা প্রতিবদেন এসব তথ্য উঠে এসেছে। অর্থ আত্মসাতের দায়ে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক কর্মকর্তা- কর্মচারী প্রবিধানমালা (২০১৬ এর ৪৪ ১) বিধি মোতাবেক ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক দিপংকর রায় গত ২৩ মে (স্মারক নং পসব্য/প্রকা/ প্রশা-২২/(২৫০)/২০২১-২২/৩৫১৭) মোতাবেক তাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন। সেই সাথে সাময়িক বরখাস্তকালীন সময় তিনি ব্যাংকর কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকুরী প্রবিধানমালা-২০১৬ এর ৪৪(৩) ধারা অনুসার খোরাকী ভাতা প্রাপ্য হবেন বলেও আদশে বলা হয়।
একই তারিখ স্মারক নং পসব্যা/প্রকা/প্রশা-২২(২৫০)/২০২১-২২/ ৩৫১৬ মাতাবেক তার বিরুদ্ধ বিভাগীয় সৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে একটি মামলা দায়ের করা হয় (নং-২৩/২০২১-২০২২)।
অভিযাগ নামায় উল্লেখ করা হয়- হামিমা সুলতানা রামপাল উপজলা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালনকালে সর্ব মোট ১ কোটি ৮৩ লাখ ২৮ হাজার ৮৩০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বিভিন খাত থেকে।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ১নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- সমিতির সদস্যদের সঞ্চয় বাবদ ১৪ হাজার ১৩০ টাকা, ঋণের কিস্তি ১ হাজার ৩৭৫ টাকা, ভুয়া ঋন ১ কোটি ৭৪ লাখ ৬ হাজার ৬০০ টাকা, বিতরণকৃত ঋন থেকে আত্মসাৎ ৫ লাখ ৬৭ হাজার সহ মোট ১ কোটি ৭৯ লাখ ৮৯ হাজার ১০৫ টাকা করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের ২ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালনকালে গত ২৭/৬/২০২১ তারিখ ১টি জেনারেটর ও আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ ১ লাখ ৮৬ হাজার ২২৫ টাকা উত্তালন করে ব্যাংকের হিসাব নম্বরে জমা না করে নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন।
৩ নং নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- কর্মকর্তা- কর্মচারীদের ব্যাংক স্থানান্তরের প্রলোভন দেখিয়ে তিনি ১০ জনের কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা করে মোট ৭০ হাজার টাকা নিয়েছেন। ৪ নং প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৭ সালের জুন মাসের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বেতনের ৮৩ হাজার ৫০০ টাকা উত্তোলন করে তা বিতরন না করে আত্মসাৎ করেছেন।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখিত কার্যকলাপের জন্য চাকুরি প্রবিধানমালা ২০১৬ মাতাবেক যথাক্রমে স্বীয় দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, অদক্ষতা, দুর্নীতি, চুরি ও আত্মসাৎমুলক অপরাধ সংঘটন করায় তাকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ ব্যপারে অভিযুক্ত হামিমা সুলতানার কাছে জানতে চাইল তিনি তার বিরুদ্ধ আনা সব অভিযাগ অস্বীকার করে বলেন, আমাকে শত্রুতামূলকভাবে সমস্যায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার লোন দিয়েছি। মল্লিকেরবেড় এলাকায় রেদোয়ান মারুফ নামের একজনকে ১ লাখ টাকা লোন দিয়েছি। ২০১৭ সাল আমি কর্মকর্তা-কর্মচরীদের বেতন আত্মসাৎ করেছি এ কথা সঠিক নয়। আমি বেতন না দিলে তারা এতদিন আমাকে ছাড় দিতো না। আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার জবাব দিয়েছি। আগামী মাসে শুনানী হবে। দেখা যাক কি হয়।
এ ব্যাপারে উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কবীর হোসেন বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। তদান্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না।