রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘গুরুতর অসুস্থ’ বলে দাবি করেছেন ব্রিটেনের সাবেক গুপ্তচর ক্রিস্টোফার স্টিলে। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে যা ঘটছে তা পুতিনের অসুস্থতার একটি ফল। তবে তিনি ঠিক কী ধরনের অসুস্থতায় ভুগছেন এবং তা নিরাময়যোগ্য অথবা পরম কি-না সেটি পরিষ্কার নয়। তবে আমি মনে করি এটি অবশ্যই হিসেব-নিকেশের অংশ।
সাবেক এই ব্রিটিশ গুপ্তচর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে নথি তৈরি করেছেন। ২০১৬ সালে মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগও তুলেছিলেন তিনি। স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্রিস্টোফার দাবি করেছেন, আমরা রাশিয়া এবং অন্যান্য স্থানের সূত্র থেকে যা শুনছি তা হল, ‘পুতিন আসলেই বেশ গুরুতর অসুস্থ।’
রাশিয়ান প্রেসিডেন্টের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট একজন অলিগার্চকে বলতে শোনা গেছে, পুতিন ব্ল্যাড ক্যান্সারের কারণে গুরুতর অসুস্থ। রেকর্ডকৃত এক বার্তায় অজ্ঞাত ওই অলিগার্চকে পশ্চিমা পুঁজিবাদী একজন উদ্যোক্তার সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে শোনা যায়।
গত সপ্তাহে রাশিয়ার বিজয় দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার পর থেকেই পুতিনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। অনুষ্ঠানের ছবিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে অত্যন্ত দুর্বল দেখা যায় এবং সবুজ কাপড়ে ঢেকে রাখা তার হাঁটু অনেক দর্শকের নজর কাড়ে।
মস্কোর রেড স্কয়ারে সামরিক কুচকাওয়াজ উপভোগের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রবীণ এবং জ্যেষ্ঠ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাঝে বসে থাকতে দেখা যায় পুতিনকে। সেই প্রবীণদের মাঝে একমাত্র পুতিনকে ঘন ঘন কাঁশি দিতে দেখা যায়। তুলনামূলক মৃদু ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস আবহাওয়া মোকাবিলার জন্য অতিরিক্ত কাপড় পরিহিত দেখা যায় তাকে।
মার্কিন ম্যাগাজিন নিউ লাইনস ওই রেকর্ডিং হাতে পেয়েছে। এতে অলিগার্চকে বলতে শোনা যায়, পুতিনের পিঠে যে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল তা কোনো না কোনোভাবে তার ব্ল্যাড ক্যানসারের সাথে সংশ্লিষ্ট। অজ্ঞাত এই অলিগার্চ বলেন, অস্ত্রোপচারের সময় প্রেসিডেন্ট ‘উন্মাদ’ হয়েছিলেন।
সম্প্রতি ১২ মিনিটের একটি ভিডিও টুইটারে শেয়ার করা হয়। পুরো ভিডিওতে পুতিনকে টেবিল শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে থাকতে দেখা যায়।
গত মাসে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর সাথে বৈঠকের সময় টেবিলের এক কোণ শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে থাকতে দেখা যায় পুতিনকে অলিগার্চ বলেছেন, ‘আমরা সবাই পুতিনের মৃত্যু কামনা করি। তিনি রাশিয়ার অর্থনীতি, ইউক্রেনের অর্থনীতি এবং অন্যান্য অনেক দেশের অর্থনীতি একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছেন। একেবারে ধ্বংস করেছেন। সমস্যা তার মাথায়। একজন উন্মাদ মানুষ পৃথিবীকে ওলট-পালট করে দিতে পারে।’
এদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্যান্সার এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত বলে দাবি করেছেন ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ একজন কর্মকর্তা। স্কাই নিউজকে তিনি বলেছেন, পুতিনের মানসিক ও শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ এবং তিনি খুবই অসুস্থ।
সম্প্রতি প্রকাশ্যে এবং সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের সময় রুগ্ন চেহারা ও অস্বাভাবিক উদাসীন দেখা যায় ৭০ বছর বয়সী পুতিনকে। পরে পারকিনসন-সহ ক্যান্সার এবং অন্যান্য গুরুতর রোগে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়ার রহস্যময় টেলিগ্রাম চ্যানেল ‘জেনারেল এসভিআর’র বরাত দিয়ে মার্কিন দৈনিক নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিন ক্যানসারের অস্ত্রোপচার করতে যাচ্ছেন। অস্ত্রোপচারের সেই সময়ে সাময়িকভাবে দেশটির কট্টরপন্থী সাবেক পুলিশ প্রধান নিকোলাই প্যাটরুশেভের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারেন তিনি।
রাশিয়ান অনুসন্ধানী গণমাধ্যম দ্য প্রজেক্টের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, রাশিয়ার শক্তিশালী রাষ্ট্রনেতা ভ্লাদিমির পুতিন গত কয়েক বছরে একজন ক্যানসার চিকিৎসকের কাছে অন্তত ৩৫ বার গেছেন। তিনি নিজের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে এতটাই উন্মাদ হয়েছেন যে, তিনি অপ্রচলিত এবং আদিম থেরাপিও নিয়েছেন।
ক্যানসার নিরাময়ের আশায় হরিণের শিং যখন নরম ও রক্তপিণ্ডের মতো থাকে তখন তা কেটে সংগৃহীত রক্তে পুতিন গোসল করেছেন, এমন কথাও বলা হয়ে থাকে বলে দাবি করেছে গণমাধ্যমটি। কাজাখস্তান এবং মঙ্গোলিয়া সীমান্তের কাছে রাশিয়ার আলতাই অঞ্চলে রোগমুক্তি পাওয়ার আশায় হরিণের শিংয়ের রক্তে গোসল করার কুসংস্কার প্রচলিত আছে।