২৫ বছর আগে ৩ টি শিশু ফেলে অন্যত্র বিয়ে করেন আলেয়া বেগমের স্বামী। সন্তানদের বাঁচাতে নেমে পড়েন জীবন যুদ্ধে। শুরু করেন পরের জমিতে কৃষি কাজসহ দিনমজুরের খাটুনি। অনেক চড়াই উৎরায় পেরিয়ে সন্তানদের বড় করেছেন তিনি। তাদের সকলের বিয়ে হয়েছে। যে যার মত করে থাকেন। বাঁচতে হলে আবারও যুদ্ধ করতে হবে। কথাগুলো এ প্রতিবেদককে বলছিলেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার সদর বাজারের পিঠা বিক্রেতা পঞ্চাশোর্ধ আলেয়া বেগম।
তিনি আরও বলেন, আগের মতো এখন আর কষ্ট করতে পারেন না। তাই অনেক ভেবে চিতুই পিঠা বিক্রি করতে নেমে পড়েছেন তিনি। তিনি বলেন, এখন আমি স্বাবলম্বী। সেই সাথে ছোট ভাইয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
আলেয়া বেগম বলেন, ত্রিশ বছর আগে উপলোর সদর ইউনিয়নের বারাশিয়া গ্রামের আব্দুলাহ শেখের সাথে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁদের দাম্পত্য জীবনে ২ ছেলে ও এক মেয়ে জম্ম নেয়। এর কিছুদিন পর স্বামী বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। সংগ্রাম করে সন্তানদের বড় করেছেন। সবার আলাদা সংসার হয়েছে।
বড় ছেলে চিংড়ির ঘেরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দেনার দায়ে ঢাকায় গেছে। ছোট ছেলে দীন ইসলাম বিয়ে করে কাননচক শ্বশুর বাড়ি এলাকায় থাকে। মেয়ে রোজিনা স্বামীর বাড়িতে আছে। রুজির ধান্দায় তাঁর ছোট ভাই আবুল শেখকে নিয়ে নেমে পড়েছেন সাজ (চিতুই) পিঠার ব্যবসায়। ভ্যানে ঘুরে ঘুরে উপজেলা সদর বাজারের বিভিন্ন স্থানে পিঠা বিক্রি করেন।
বিকেল থেকে রাত ১০ পর্যন্ত চলে পিঠা বিক্রি। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি চালের পিঠা বিক্রি করেন তিনি। প্রতিকেজি আতপ চালের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা। গুড়ি করতে নেয় ৫ টাকা। পাঁচটি চুলায় এক সাথে বানানো হয় পিঠা। প্রতিটি পিঠার দাম ৫ টাকা। সাথে সরিষা, ধনেপাতা ও শুঁটকি বাটা (ভর্তা) ফ্রি। প্রতিদিন ভ্যানভাড়া ও কাঠের দামসহ সব খরচ বাদ দিয়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা লাভ হয়। তাঁর পিঠা খাওয়ার জন্য সব সময় ভিড় লেগে থাকে। খরিদ্দারাও তাঁর সাথে খুব ভাল ব্যবহার করেন। এতে আলেয়া বেগম মহাখুশি।
খুলনা গেজেট/ এসজেড