খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ভারতে হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ শিশুর মৃত্যু

পাট থেকে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিস্কার

গেজেট ডেস্ক

বিশ্বকে চমকে দিয়ে পাট থেকে নতুন এক এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কার করলেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। এর ফলে বেঁচে যাবে অনেক রোগীর প্রাণ। আর তাদের এ সাফল্য বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিভাগের অধ্যাপক হাসিনা খান, রিয়াজুল ইসলাম এবং জীন প্রকৌশল ও জৈব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আফতাব উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল গবেষক এটি আবিষ্কার করেছেন।

ব্যাকটেরিয়া ও পাটের বৈজ্ঞানিক নামের সঙ্গে মিল রেখে নতুন এ এন্টিবায়োটিকের নাম দেয়া হয়েছে ‘হোমিকরসিন’। বেশ কিছু শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে এটি ভালো কাজ করছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গত ২৭ মে বিশ্ব বিখ্যাত ন্যাচার পাবলিশিং গ্রুপের ‘সাইন্টিফিক রিপোর্ট’ জার্নালে তাদের এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
পাট থেকে নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের সন্ধান দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপক। বাংলাদেশের জন্য এটিকে সাফল্য হিসেবেই দেখছেন তারা। কারণ, এর আগে দেশে এ ধরণের নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হয়নি।

এ বিষয়ে গবেষক দলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ড. মো. রিয়াজুল ইসলাম জানান, পাটগাছের মধ্যে অনেক ধরনের অনুজীব যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস থাকে। এই ব্যাকটেরিয়া নিয়ে তিন অধ্যাপক তিনবছর আগে কাজ শুরু করেন। কাজ করতে গিয়ে তারা এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া পান যেগুলো পাটের মধ্যেই বাস করে। এর মধ্যে নতুন একটি ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান তারা পেয়েছেন, যার নাম স্টেফাইলো কক্কাস হোমিনিস।

তিনি বলেন, ‘এই স্টেফাইলো কক্কাস হোমিনিস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমরা দেখলাম, এটি সুন্দর মাইক্রোবিয়াল অ্যাক্টিভিটি দেখায়। অর্থাৎ, নিজ শরীর থেকে এমন কিছু তৈরি করে যাতে আবার অন্য ব্যাকটেরিয়ারা মারা যায়। এটি আমাদের আগ্রহী করে তোলে৷

‘আরও কাজ করে জানলাম, এটি নতুন একটি অ্যান্টিবায়োটিক, যা এর আগে কখনও আবিষ্কার হয়নি।’

জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটি ও যুক্তরাজ্যের একজন অধ্যাপকও গবেষক দলের সঙ্গে কাজ করেছেন বলে জানান রিয়াজুল ইসলাম৷

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন শুধু নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের রিপোর্ট করেছি। ভবিষ্যতে এটিকে কমার্শিয়ালাইস করতে হলে আরও অনেক অ্যাঙ্গেল থেকে কাজ করতে হবে। সেই অ্যাঙ্গেলগুলো নিয়ে আমারা এখন কাজ করছি।’

এখন কী কাজ করছেন জানতে চাইলে গবেষক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘এখন আমরা এটির টক্সিকোলোজিক্যাল অ্যানালাইসিস, অ্যানিমাল মডেলে ট্রায়াল করছি। এরপর আমরা হিউম্যান ট্রায়াল করবে।’

তিন বছর আগে শুরু করা এ কাজ করতে গিয়ে অর্থ ও যন্ত্রপাতির অপর্যাপ্ততায় অনেকবার আটকে যেতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক রিয়াজুল।

তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণা ফান্ড অপ্রতুল। গবেষণার কাঠামো ভালো না। যে ধরণের মেশিনের প্রয়োজন, সে মেশিনপত্র বাংলাদেশে এভেইলেভেল না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে সাহায্য পেয়েছি। কিন্তু সেটি খুবই অপর্যাপ্ত।

‘সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং ইউজিসিতেও প্রোফোজালটা নিয়ে লিখেছিলাম। কিন্তু ফান্ডিংটা সেভাবে আসেনি৷ এই কারণে সময়টা অনেক বেশি লেগেছে৷ অনেক জায়গায় ছোটাছুটি করে কাজটা এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে পেরেছি। এসব সমস্যা মুখোমুখি না হলে আমরা আরও এক বছর কমিয়ে আনতে পারতাম।’

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণেও কাজ খুব ধীর গতিতে এগিয়েছে বলেও জানান ওই গবেষক। সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিগুলো যদি আগ্রহ দেখায়, নতুন এই অ্যান্টিবায়োটিক বাজারে আনতে খুব বেশি সময় লাগবে না বলে জানান রিয়াজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘তাদের সহযোগিতায় এটি সহজভাবে করা সম্ভব হয়েছে।’

গত তিন বছর ধরে চলা এই গবেষণায় গবেষক দলের পাশে ছিল বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ। গবেষক দলে বিসিএসআই-এর প্রতিনিধিসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীও ছিলেন।

২৭ মে বিজ্ঞান গবেষণার জন্য বিশ্বখ্যাত ন্যাচার পাবলিসিং গ্রুপের ‘সাইন্টিফিক রিপোর্ট’ জার্নালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলটির নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের গবেষণাপত্রটি প্রকাশ পেয়েছে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!