মার্চ ১৯৭১। বিশ্ববাসী তাকিয়ে ছিল পাকিস্তান নামক ভূ-খন্ডের দিকে। পহেলা মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেঃ ইয়াহিয়া খান বেতার ও টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। প্রেসিডেন্ট এ ভাষণে ৩ মার্চ জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা করেন। পূর্ব পাকিস্তানের ১৯ জেলার মানুষ ফুঁসে ওঠে। এ ভূ-খন্ডের রাজনীতির মোড় ঘুরে যায়। তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাড়ে সাত কোটি বাঙালির কন্ঠে শ্লোগান ‘জয় বাংলা’, ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্না মেঘনা যমুনা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর’।
২ মার্চ থেকে হরতাল, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বাঙালি জাতি অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেয়। খুলনার খালিশপুর, দৌলতপুর ও রূপসা শিল্পাঞ্চলে উৎপাদনের চাকা বন্ধ হয়ে যায়। বিএল কলেজ, কমার্স কলেজ, এম এম সিটি কলেজ, সিটি ল’ কলেজ, সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয়, সরকারী মহিলা কলেজ, জিলা, করোনেশন, মহসিন স্কুল, বি কে, মডেল, পল্লী মঙ্গল, সেন্ট জোসেফসসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। জেলা জজ আদালত, ব্যাংক, বীমা, টেলিফোন-টেলিগ্রাম অফিস বন্ধ। বড় বাজার, নতুন বাজার, দোলখোলা বাজার ও দৌলতপুর কাঁচাবাজার খোলা। দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় খুলনার মানুষ পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হয়। তখন বাঙালি ও বিহারী মুখোমুখি অবস্থানে। ২৫ মার্চ গণহত্যার পর রূপসাস্থ সদর দপ্তরের ইপিআর, ভূতের বাড়ির আনসার আর খুলনা পুলিশ লাইনের পুলিশ বিদ্রোহ ঘোষণা করে। পাকিস্তানী সেনারা খুলনার পুলিশ সুপারকে গ্রেফতার করে। গল্লামারীস্থ রেডিও পাকিস্তান, খুলনা কেন্দ্রে সেনা মোতোয়েন ছিল। সার্কিট হাউস, শিপইয়ার্ড, আইডাব্লিউটিএ, নুরনগর ওয়াপদা, জিপিও ও নতুন ফায়ার ব্রিগেডে সেনাছাউনি। এর আগে কে ডি ঘোষ রোড ও কালিবাড়ি রোড এলাকায় বন্দুকের দোকান লুট হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্র জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে সহায়তা করে। বামপন্থীরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে টের পেয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়।
মনি সিংহের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি ২৫ মার্চের পর স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান নেয়। ইতিপূর্বে তাদের শ্লোগান “দুই পাকিস্তানের এক আওয়াজ কায়েম কর গণরাজ”। পাকিস্তান আমলে কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। সুখেন্দু দস্তিদারের নেতৃত্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) একাত্তরে দ্বিধাবিভক্ত হয়। একদিকে সূখেন্দু দস্তিদার ও মোহাম্মদ তোয়াহা এর বিপরীতে আব্দুল হক। খুলনা জেলায় আব্দুল হকের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টির এ অংশ সশস্ত্র সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান নেয়। পাকিস্তান সেনাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলেও আওয়ামী লীগ ও মুক্তিবাহিনীকে বন্ধু ভাবতো না। একাত্তরে অনেক স্থানে মুক্তিবাহিনীর সাথে কমিউনিস্ট পার্টির (এমএল) মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। বিশেষ করে বাগেরহাট ও ডুমুরিয়া এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা তাদের মেনে নিতে পারত না।
তখন এখানকার নেতৃত্বে ছিলেন আব্দুল মজিদ, রফিকুল ইসলাম, আব্দুর রশিদ, অধ্যাপক খালেদ রশীদ, কামরুজ্জামান লিচু, হাফিজুর রহমান ভূঁইয়া ও আজিজুর রহমান (একাত্তরে জেলে আটক ছিলেন)। রূপসা অঞ্চলে নেতৃত্বে ছিলেন খায়েরুজ্জামান ও জীবন মূখার্জী। ডুমুরিয়া, শোভনা, রূপসা থানার ডোবা ও তালা থানার খলিশখালী ঘাঁটি অঞ্চল হিসেবে গড়ে ওঠে। তাদের একজন আজীজ খান। তিনি খুলনা শহরের শেরে বাংলা রোডস্থ ময়লাপোতায় পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন। সমাজ পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে জনমত সৃষ্টির লক্ষে খুলনার সাপ্তাহিক আওয়াজ পত্রিকায় উপ-সম্পাদকীয় লিখতেন।
এই পত্রিকার মালিক ছিল মুসলিম লীগ সমর্থক। পত্রিকার দপ্তর ফারাজী পাড়ায়। কাজী আব্দুল খালেক এ পত্রিকার সম্পাদক। আজীজ খানের লেখনীতে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য, শোষণ ও বাঙালির বঞ্চনার চিত্র ফুটে উঠত। লেখনীতে স্থান পেত পশ্চিম পাকিস্তানের ২০ পরিবার আইন সঙ্গত ডাকাতির টাকা দু’হাতে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। দাউদ কর্পোরেশন, আদমজী, বাওয়ানী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, ইস্পাহানী, নিশাত গ্রুপ, আমিন এজেন্সিস, গহওর আইয়ুব, সায়গাল, ইউসুফ হারুণ প্রভৃতি ২২ পরিবারের হাতে পাকিস্তানের সমুদয় সম্পদের শতকরা ৬৫ ভাগ জমা রয়েছে। বিদেশে কাঁচা পাট রপ্তানীর ক্ষেত্রে অবাঙালি পাঁচ পরিবার শতকরা ৮০ ভাগ এবং একশ’ বাঙালি পরিবার ২০ ভাগ রপ্তানি করে। ব্যাংক থেকে সুদ সংগ্রহ করা এবং এই টাকা দিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কলুষিত করা তাদের উদ্দেশ্য। বৃহৎ ধনী গোষ্ঠী পূর্ব বাংলার শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত, বুদ্ধিজীবী ও ছোট এবং মাঝারী ব্যবসায়ীদের মত পশ্চিম পাকিস্তানের শ্রমিক ও কৃষকদের একইভাবে শোষণ করে। পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানে সামগ্রিক উন্নয়ন বহুগুণ হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের সুতা কলের শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন মাসিক ১১৭ টাকা অপরদিকে পূর্ব পাকিস্তানের সুতাকল শ্রমিকদের মাসিক বেতন ৭০ টাকা। পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি বাঙালির কাছে পাকিস্তানে চালু মুদ্রা শতকরা ১২ ভাগ এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সাড়ে ৫ কোটি মানুষের কাছে শতকরা ৮৮ ভাগ টাকা। দুই অর্থনীতি, দুই রাষ্ট্রের মত ব্যবহার। অবাঙালি বৃহৎ পুঁজিপতি গোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানকে যে হারে শোষণ করছে তাতে বৃটিশ উপনিবেশিক শোষণও হার মানায়। পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি বাঙালি শোষিত হতে থাকে। এসব তথ্য উপাত্ত দিয়ে তার উপ-সম্পাদকীয় নিঃসন্দেহে জনমত সৃষ্টি করে। খুলনা অঞ্চলের মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠে পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণ নির্যাতন ও বৈষম্যের দিকটি।
পত্রিকার বিভিন্ন সময়ে ক্লিপিং এবং তার রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার ধারণা ছিল। তাদের ধারণা পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য তার লেখা বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। বৈষ্যমের চিত্রগুলো পাওয়ার পর বাঙালিরা মানসিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। পশ্চিম পাকিস্তানীদের শত্র“র দৃষ্টিতে দেখতে থাকে। কমরেড আব্দুল হকের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি ২৫ মার্চের পর শ্লোগান তোলে ‘কৃষক শ্রমিক অস্ত্র ধর পূর্ব বাংলা স্বাধীন কর’ (পাইকগাছাস্থ হেড মাস্টার আমজাদ আলী পাবলিক লাইব্রেরীর সংগৃহীত মেসবাহ কামাল রচিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বামপন্থীদের ভূমিকা)।
পরিবারিক সূত্রের দাবি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ৮ টায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেঃ ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর দোষ চাপান। তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘This Crime canot go unpunished’ । শহরের অধিকাংশ মানুষের কাছে স্পষ্ট হয় যুদ্ধ অনিবার্য। প্রেসিডেন্টের ভাষণ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর পাকিস্তানী সেনা ও পুলিশ আজীজ খানকে তার ময়লাপোতা এলাকার বাসা থেকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের সাথে ছিল মুখোশ পরা কয়েকজন অবাঙালি।
গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট ছিল তিনি আব্দুল হকের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সম্পৃক্ত। তাকে দিনে খুলনা সার্কিট হাউসে, রাতে সার্কিট হাউসের পার্শ্ববর্তী ফায়ার ব্রিগেড রোডস্থ হাসান সাহেবের মালিকানাধীন হোটেল শাহীন ও ফরেস্ট অফিসে রাখা হত। সার্কিট হাউজে পাকিস্তান সেনা সদর দপ্তরের অধিনায়ক ছিলেন লেঃ কর্ণেল শামস উল জামান। এ সময় তার পরিবার পরিজনদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও কথা বলার সুযোগ দেয়া হত না। সাত দিন পর তাকে যশোর সেনানিবাসে পাঠানো হয়। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য এবং সংবাদপত্রে আজীজ খানের উপ-সম্পাদকীয়’র ভিত্তিতে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হত। যশোর সেনানিবাসে সামরিক কর্মকর্তা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা উর্দু ও ইংরেজিতে নিম্নোক্ত বিষয়ে তথ্য তার কাছ থেকে জানতে চাইতেন।
১। খুলনার জাতীয় পরিষদ, প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ এবং কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্তদের অবস্থান কোথায় হতে পারে?
২। খুলনায় বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িতদের মধ্যে কে কে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সমর্থক। বামপন্থীদের মধ্যে কোন অংশ মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দিচ্ছে। পাকিস্তানী রাজনীতি এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে চীন, রাশিয়ার মনোভাব কী?
৩। এই মুহূর্তে বামপন্থীদের রাজনীতি ও রণ কৌশল কী?
৪। জয় বাংলার সমর্থকদের কারা অর্থ যোগান দিচ্ছে?
৫। কালীবাড়ি রোড ও কেডি ঘোষ রোড এলাকার বন্দুকের দোকান লুটের সাথে কারা জড়িত?
৬। একাত্তরের ২৬ মার্চ বৈকালী এলাকা এবং ৪ এপ্রিল গল্লামারী এলাকায় পাকিস্তানীদের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের পরিচয়?
৭। জাতীয় দৈনিকের খুলনা প্রতিনিধিরা কারা কোন মতাদর্শে বিশ্বাসী।
৮। খুলনার স্থানীয় সাপ্তাহিকগুলোর মধ্যে কারা পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার পক্ষে, কারা বিপক্ষে।
মাঝে মধ্যে বুট পরা অবস্থায় সেনা কর্মকর্তারা পা দিয়ে তাকে আঘাত করত। কিল, চড়, ঘুষি ও লাঠি দিয়ে প্রহার করত। তার শরীরের বিভিন্নস্থান ক্ষত চিহ্ন দৃশ্যমান হয়। জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতনের কারণে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেন। বাইরের কোন খবরা-খবর জানার সুযোগ তার ছিলনা। মাঝে মধ্যে অন্ধকার কক্ষে রাখা হত। নিয়মিত ওষুধ সরবরাহ করা হত না। পানি চাইলে তাকে গালাগালি করা হত। তাকে পেট ভরে খাওয়ার সুযোগ দেওয়া হত না। তিনি অন্য বন্দীদের সাথে কথা বলার সুযোগ পেতেন না। যশোর সেনানিবাসে আটক থাকাকালীন সময়ে খুলনা শহরের কোন তথ্য তার জানা ছিল না। সেনা কর্মকর্তারা শত নির্যাতন করেও তার মুখ থেকে এসব প্রশ্নের উত্তর পায়নি। একাত্তরের ২৭ আগস্ট যশোর সেনানিবাস থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। এই চার মাসে পরিবারের পক্ষ থেকে তার জন্য খাবার, ঔষধ, ফল ও পোষাকাদী সরবরাহ করা হলেও পাকিস্তানী সেনারা তা আত্মসাৎ করত। তিনি সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ময়লাপোতাস্থ বাসায় থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী শান্তিধাম মোড় থেকে তার সম্পাদনায় স্বরলিপি নামে পত্রিকা প্রকাশিত হত। পত্রিকাটি প্রকাশনা ছিল দু’মাস পর পর। পাকিস্তান জামানায় তার সম্পাদনায় যশোর থেকে ইশারা ও প্রান্তিক নামে অনিয়মিত পত্রিকা প্রকাশ পায়। তার অনন্য সৃষ্টি ১৯৭২ সালে গড়ে ওঠা শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ময়লাপোতা মোড়ের স্কুল অব মিউজিক।
১৯৩১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তার জন্ম এবং ১৯৭৫ সালের ২২ মে মৃত্যু। বাগেরহাট মহকুমার ফকিরহাট থানার সৈয়দ মহল্লায় তার জন্ম। আব্দুল হক খান তার পিতা। তার উত্তারাধিকারী শেরে বাংলা রোডস্থ উত্তরণ প্রেসের মালিক তিশা আব্দুল হক খান। মৃত্যুর পর শিক্ষক নেতা শেখ আমানুল্লাহ স্মরলিপি পত্রিকায় আমার বন্ধু আজীজ খান শিরোনামের প্রবন্ধে লেখেন “তার অকাল মৃত্যু দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নিঃসন্দেহে শুণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সে ছিল প্রচলিত ব্যবস্থা-গড্ডালিকা স্রোতের বিরুদ্ধে এক জীবন্ত প্রতিবাদ। এই শোষণ ভিত্তিক সমাজের গোটা ব্যবস্থাকে তার কাছে মনে হত অমানুষিক বঞ্চনার শিকার”। শেষ দিকে আজীজ খান রাজনীতি থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে উন্নত সংস্কৃতি চর্চ্চার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। কলম আর বন্দুক একই সাথে চালানোর পথ বাদ দিয়ে শুধু কলম ধরেছিলেন তিনি।
সুন্দরবন আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক সুশান্ত সরকার ভুলি কেমনে নামক এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন আজীজ খানের সম্পাদনায় বিদ্যুৎ কান্তি সরকারের আঁকা প্রচ্ছদে স্মরলিপি নামক সাহিত্য পত্রিকা তখন বাংলাদেশের প্রতিনিধি স্থানীয়। এই পত্রিকায় আজীজ খান “বাংলা সাহিত্যে বিষয়বস্তু সমস্যা নামক ধারাবাহিক প্রবন্ধ লিখে জনমত সৃষ্টি করেন। পত্রিকাটিও জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
ভাষা সৈনিক ডাঃ আব্দুল মানাফ ব্যক্তিগত পরিবারের আলোকে আজীজ খান নামক প্রবন্ধে লিখেছেন তার স্মৃতি রক্ষার্থে কোন ছবি টানানোর প্রয়োজন হবে না। রাস্তার নামকরণ দরকার নেই। স্কুল অব মিউজিক আজীজ খানের শ্রেষ্ঠ স্মৃতিসৌধ।