পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খান ক্ষমতায় এসেছিলেন ২০১৮ সালের জুলাইয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে। তখনও দেশটির সেনাবাহিনীর ভূমিকা তার বিজয়ের পথ তৈরি করে দিয়েছে- এমন কথাই প্রচলিত ছিল।
পাকিস্তানকে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেট জয়ে নেতৃত্ব দেয়া ইমরান খান ব্যাপক দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই আর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো অর্থনৈতিক সংকটের কারণেই ধীরে ধীরে বিপাকে পড়তে শুরু করে তার সরকার। এক পর্যায়ে গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান নিয়োগ নিয়ে সেনাবাহিনীর সাথেও দ্বন্দ্বে জড়ান তিনি।
আবার রাশিয়া যখন ইউক্রেনে হামলা শুরু করে, তখন তার মস্কো সফরও পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবে নেয়নি।
এর মধ্যেই তার ক্ষমতাসীন জোটের বড় অংশ এমকিউএম তাকে ছেড়ে বিরোধী জোটে যোগ দিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারায় তার সরকার।
এ ঘটনার কয়েকদিন আগে থেকেই ইমরান খান বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছিলেন, এরা ‘বিদেশি রাষ্ট্রের’ সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি আরো অভিযোগ করেছিলেন, এই ষড়যন্ত্রের পেছনে আছে যুক্তরাষ্ট্র, কারণ তিনি রাশিয়া এবং এবং চীনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এজন্যেই তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে তিনি দাবি করেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
তবে ডেপুটি স্পিকার কাসেম সুরি রুল জারি করেন যে এই অনাস্থা প্রস্তাব পাকিস্তানের সংবিধানের পঞ্চম অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে, যেটিতে রাষ্ট্র এবং সংবিধানের প্রতি আনুগত্যের কথা আছে।
এরপর ইমরান খান পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার কথা ঘোষণা করেন। এর ফলে ৯০ দিনের মধ্যে পাকিস্তানের পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা।
কিন্তু এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান বিরোধী নেতারা। তারা প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সংবিধানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনেন। এরপরই তারা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে যান এই বলে যে অনাস্থা ভোট আটকে দিয়ে সরকার তার সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছে।
এর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ বিরোধী দলগুলো সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় এবং তাদের আবেদনে বলা হয়, যেভাবে অনাস্থা প্রস্তাবটি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে আটকে দেয়া হয় তা ছিল বেআইনি ও অসাংবিধানিক।
আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট সুয়ো মোটো রুল জারি করে। সেই রুলের শুনানির পর সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দেয়, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধীদলের আনা অনাস্থা প্রস্তাবটি খারিজ করে জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি বেআইনি কাজ করেছেন, এবং এতে পাকিস্তানের সংবিধানের ৯৫ ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে।
আদালত ৯ এপ্রিল (শনিবার) ভোটাভুটি সম্পন্ন করার আদেশ দেয়।
শনিবার সারাদিন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন তিন-চার দফা মুলতুবি হবার পর পাকিস্তানে মধ্যরাতের পর অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
গত ৩ এপ্রিল বিরোধী দলের এমপিরা জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছিলেন, উদ্দেশ্য ছিল তাকে ক্ষমতা থেকে সরানো। বিরোধীরা আশা করছিলেন, পার্লামেন্টে যেহেতু তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই কাজটা সফল হবে।
কিন্তু সেদিন ঘটনা নাটকীয় মোড় নেয় যখন জাতীয় পরিষদেরর ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি দ্রুত এই প্রস্তাব আটকে দেন। তিনি বলেন, সরকার ফেলে দেয়ার জন্য ‘একটা বিদেশি রাষ্ট্রের’ সাথে ‘পরিষ্কার আঁতাত’ দেখা যাচ্ছে।
ইমরানের পরাজয়ে জাতীয় পরিষদ এখন একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবে।
অক্টোবর ২০২৩এ পরবর্তী নির্বাচন হবার কথা। তার আগে নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকবেন।
ইমরান খান অনাস্থা ভোটের আগে বলেন, তিনি বিরোধী সরকারকে স্বীকৃতি দেবেন না। তিনি বলেন, আমেরিকার নেতৃত্বে ষড়যন্ত্র করে তাকে ক্ষমতা থেকে সরানো হচ্ছে।