পরমাণু শক্তিধর দেশ পাকিস্তানের নতুন সেনাপ্রধান নিযুক্ত হয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মুনির। কয়েক সপ্তাহের জল্পনা-কল্পনা ও গুজবের পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) সেনাবাহিনীর নতুন প্রধান (সিওএএস) হিসেবে তাকে বেছে নেন।
বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানের প্রথম সারির গণমাধ্যম দ্য ডন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া চলতি মাসের শেষে অবসরে যাচ্ছেন। তার আগে আজ বৃহস্পতিবার বাজওয়ার উত্তরসূরি বেছে নিলেন শেহবাজ।
৬২ বছর বয়সী জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ২০১৬ সাল থেকে ৬ লাখ সদস্যের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন। ২০১৯ সালের আগস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বাজওয়ার চাকরির মেয়াদ তিন বছরের জন্য বৃদ্ধি করেছিলেন। সেই মেয়াদ শেষে আগামী মঙ্গলবার অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ তার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে দেশের নতুন সেনাপ্রধান বেছে নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির (সিজেসিএসসি) চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়েছে।
এছাড়া সেনাবাহিনীর শীর্ষ এই দুই পদে নিয়োগের একটি সারসংক্ষেপ প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভির কাছে পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মরিয়ম আওরঙ্গজেব।
এদিকে নতুন সেনাপ্রধান নিয়োগের কিছুক্ষণ পর মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ। সেখানে তিনি বলেন, সেনাপ্রধান নিয়োগের বিষয়টি আইন ও সংবিধান অনুযায়ী হয়েছে। আর তাই এই নিয়োগকে ‘রাজনৈতিক দৃষ্টিতে’ দেখা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ আশা প্রকাশ করেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি এই নিয়োগকে ‘বিতর্কিত’ করবেন না এবং প্রধানমন্ত্রী শেহবাজের পরামর্শকে সমর্থন করবেন।
পরে পাকিস্তানের এই প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আরও বলেন, প্রেসিডেন্টের উচিত প্রধানমন্ত্রীর ‘পরামর্শকে’ সমর্থন করা যাতে ‘বিতর্কের সৃষ্টি না হয়’। তার ভাষায়, ‘এটি আমাদের দেশ এবং অর্থনীতিকে সঠিক পথে যেতে সহায়তা করবে। বর্তমানে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে।’
পরে খাজা আসিফ একটি টুইটে একই কথা প্রকাশ করে বলেছেন, সেনাপ্রধান নিয়োগের এই পরামর্শটি প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটি এখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের জন্য একটি পরীক্ষা হবে। এখন তিনি দেশ রক্ষার দায়িত্বে থাকা এই প্রতিষ্ঠানটিকে শক্তিশালী করতে পারেন বা এটিকে বিতর্কিতও করতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এটি প্রেসিডেন্ট আলভির জন্যও একটি পরীক্ষা, তিনি রাজনৈতিক পরামর্শ গ্রহণ করবেন নাকি সাংবিধানিক ও আইনি পরামর্শ অনুসরণ করবেন।’
প্রেসিডেন্ট আলভি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার হিসেবে রাজনৈতিক সংঘাত থেকে দেশকে রক্ষা করা তার দায়িত্ব।’
এদিকে পিটিআইয়ের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট ইমরান খানকে উদ্ধৃত করে বলেছে ‘(সেনাপ্রধান নিয়োগের) সারাংশ আসার পর আমি এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট সংবিধান ও আইন অনুযায়ী কাজ করব।’