খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা কথিত সমবায় সমিতি গুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাত, ঋণদানের নামে চড়া সুদের ব্যবসা পরিচালনাসহ সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতিগুলোর কর্তা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একের পর এক জমা হচ্ছে অভিযোগের পাহাড়।
ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সমবায় সমিতির লাইসেন্স নিয়ে কথিত এ সকল সমিতিগুলো গ্রাম্য সহজ সরল মানুষদের স্বল্প মুনাফায় প্রলুব্ধ করে তাদের থেকে সঞ্চয় উত্তোলন করেই ঐ অর্থ পুনরায় চড়া সুদে গ্রাহকদের মাঝে ঋণ বিতরণের নামে কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। আর এভাবেই চলছে প্রতারক চক্রগুলোর সমবায় সমিতির অন্তরালে চড়া সুদ আদায় ও লোক ঠকানোর ব্যবসা।
এমনকি আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বে সমিতির কর্তা ব্যক্তিরা একে অপরের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের বিষটি সামনে আনছেন। আর এমন পরিস্থিতিতে জামানতের টাকার দাবীতে উপজেলার কোথাও কোথাও ভুক্তভোগী গ্রাহকরা লিখিত অভিযোগ দায়ের, বিক্ষোভসহ সংশ্লিষ্ঠদের অবরুদ্ধ করার ঘটনাও ঘটিয়েছেন। যদিও অর্থ প্রাপ্তির আশ্বাসে সংশ্লিষ্ঠদের মুক্ত করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা৷
এ ছাড়া গত কয়েক বছরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নিন্ম আয়ের মানুষদের কোটি কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে একাধিক প্রতারক চক্র। সর্বশেষ এমন পরিস্থিতে জামানতের টাকা হারানোর ভয়ে বেশ খানিকটা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার দেলুটির জিরবুনিয়া গ্রাম উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে ২৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে জেলা সমবায় অফিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ঐ সমিতির সাধারণ সম্পাদক। এরপর জেলা সমবায় কার্যালয় থেকে অভিযোগের তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অভিযোগে জানানো হয় , জিরবুনিয়া গ্রাম উন্নয়ন বহুমুখী সমিতির সভাপতি ভোল্টন মন্ডল ও ম্যানেজার অজয় বিশ্বাস পরস্পর যোগসাজশে গ্রাহকদের ২৬ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে নিজেদের কাছে রেখেছেন। এছাড়া ম্যানেজার অজয় বিশ্বাস হিসেবের খাতায় না উল্লেখ করেই গ্রাহকদের নগদ ৫ লাখ টাকা নিজের কাছে রেখেছেন। এমনকি হরিণখোলার শিউলী মল্লিক নামের সমিতির এক সদস্য ঋণের ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও তাকে খেলাপি দেখানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সমিতির সভাপতি ভোল্টন মন্ডল তার বিরুদ্ধের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো সমিতির পূর্বের কমিটি এসব করেছে বলেও পাল্টা অভিযোগ করে তিনি সত্যতা যাচাইয়ে তদন্তের দাবি করেন।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, জেলা সমবায় কর্মকর্তা বিষয়টির তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তাকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছেন। এমাসেই তদন্ত শেষ করা হবে। তারপর বিস্তারিত জানা যাবে। তবে দৈনন্দিন প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা নিজেদের কাছে মজুদ রাখার কোন নিয়ম নেই বলেও জানান তিনি।
এরআগে, উপজেলার জোনাকি গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের দেড় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। এমনকি জামানতের টাকা তুলতে না পেরে পাওনা টাকার দাবিতে পৌরসদরের সরল বাজারস্থ জোনাকী গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির অস্থায়ী কার্যালয় ঘেরাও করে সেখানে বিক্ষোভ শুরু করে ভুক্তভোগী সমিতির সদস্যরা।
এ সময় সমিতির নির্বাহী মোঃ আলাউদ্দীন গাজী ও সভাপতি মোহাম্মাদ আলীকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরবর্তীতে দু’মাস পর থেকে পাওনা টাকা গ্রাহকদের পর্যায়ক্রমে পরিশোধের প্রতিশ্রুতিতে অবরুদ্ধদের মুক্ত করা হয়।
সচেতন এলাকাবাসীর অভিমত, সমবায় সমিতির নিবন্ধন দেয়ার আগে যদি ভালমতো ভেরিফাই করা হয় তাহলে এই প্রতারণা বহুলাংশে কমবে। রেহাই পাবে শত শত নিন্ম আয়ের সাধারণ পরিবার। তাছাড়া তদারকির অভাবে সমবায়ের মতো খাতকে চরম অনিশ্চয়তায় ফেলেছে অসাধু চক্র। এ খাতে নিরীক্ষা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানান তারা।
খুলনা গেজেট/ টিএ