খুলনা, বাংলাদেশ | ২৭ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১২ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ভারতে দুই ট্রেনের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ, ১২ বগি লাইনচ্যুত

পাইকগাছায় খাল খননের ২০ লাখ টাকা ফিরে গেছে, অ‌নিয়মের অ‌ভিযোগ

শেখ নাদীর শাহ্,পাইকগাছা

নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করতে না পারায় খুলনার পাইকগাছা উপজেলার লতার গয়েশার খাল খনন প্রকল্পের ১৯ লাখ ৮২ হাজার টাকা ফেরত গেছে। সরকারের জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় মৎস্য অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন খালটি খননে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। যদিও স্থানীয় মৎস্য অধিদপ্তরের কার্যালয় থেকে বলা হচ্ছে, চলতি পোদা নদী খননে ভিন্ন প্রকল্পে গয়েশার খালটি খননের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এদিকে উপজেলার পানি বেষ্টিত দূর্গম জনপদের অন্তত ৮টি মৌজার বিস্তীর্ণ এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম গয়েশা খাল। খালটির মাধ্যমে পোদা নদীতে নিষ্কাশিত হয় ঐ এলাকার পানি। তবে খালটি খনন না হওয়ায় চলতি বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশন নিয়ে ইতোমধ্যে নানা আশংকা দানা বেঁধে উঠেছে জনপদের সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাদের দাবি, অঞ্চলের পানি গয়েশার মাধ্যমে পোদায় পৌছায়। তবে গয়েশাকে বাদ রেখে পোদা নদী খনন হলে তার সুফল নিয়েও ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, গত অর্থ বছরে প্রকল্পের আওতায় উপজেলার লতা ইউনিয়নের ২টি খাল খননে বরাদ্দ হয়। যার একটি উলুবুনিয়া মরা নদীর শামুকপোতা আবাসন হতে পুটিমারী মন্দির পর্যন্ত ১.৫৯৭ হেক্টর। যার জন্য ব্যায় বরাদ্দ হয় ১৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। অন্যটি গয়েশার খাল। ঐ সময় উলুবুনিয়া খননে ব্যাপক দূর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগে ব্যাপক আন্দোলন সংগ্রাম করেও সুফল পায়নি এলাকাবাসী।

গত অর্থ বছরে বরাদ্দকৃত লতার অপর খালটি গয়েসা খননে প্রকল্পের আওতায় শিব বাবুু (কল্যাণ সরকারের বাড়ী) বাড়ী হতে শামছুর আলীর বাড়ী পর্যন্ত ১.৬২৫ হেক্টর খননে বরাদ্দ রাখা হয় ১৯ লাখ ৮২ হাজার টাকা।

‘এর আগে খালটি খননে গত বছরের ১ মে খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। তবে ঐবছর খালটি খনন না হলে রাতের আঁধারে প্রস্তর খন্ডটি ভেঙ্গে খালে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর পোদার খাল খননে একই এলাকায় আরেকটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এরপর সেটি ভেঙ্গে ফের গয়সার নামে ফিরিয়ে গত ৭ মে পোদা খননের উদ্বোধন হয়। এর কিছু দিন পর ফলকের গয়সার স্থলে পোদার খাল সম্পৃক্ত করে বর্তমানে নদীটির খনন কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে। সেখানেও রয়েছে ব্যাপক দূর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ।’

অভিযোগে স্থানীয়রা জানান, নদীর মূল সীমানা বাদ রেখে বিশেষ ব্যবস্থায় লোকাল প্রভাবশালী জনৈক জনপ্রতিনিধিকে ম্যানেজ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তিভিত্তিক মূল নক্সা পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে খনন কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে গত অর্থ বছরের বরাদ্দকৃত গয়সার খাল খনন না হওয়ার পেছনে স্থানীয়রা শুধু সুফলভোগী নয়। স্থানীয় প্রভাবশালী ঘের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে কতিপয় সুবিধাভোগীদের দায়ী করছে। বিশেষ করে কপিলমুনির প্রভাবশালী ঘের ব্যবসায়ী শেখ আনারুল ইসলাম সাড়ে ১৯ একর আয়তনের সম্পূর্ণ খালটির অন্তত দু’স্থানে বাঁধ দিয়ে খালটি নিজ পশ্চিম প্রান্তের লীজ ঘেরের সীমানায় অন্তর্ভূক্ত করে ভোগ-দখলে রেখেছেন।

এব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাশ খালটি খনন না হওয়ার পেছনে শুধুমাত্র সুফল ভোগীদের দোষারোপ করে এর জন্য দায়ী করলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। মূলত তিনি কৌশলে দখলের বিষয়টি এড়িয়ে যান। অন্যদিকে পোদা নদী খননের সাথে যৌথ অপর খনন প্রকল্প উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের নাছিরপুরের খালটির খনন চলতি বছরের ৬ এপ্রিল শুরু করে চলতি বছর ৩০ মে’ শেষ হয়ে গেলেও শুধু উদ্বোধনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।

এনিয়ে জানতে চাইলে মৎস্য বিভাগের এ কর্মকর্তা দাবি করেন, স্থানীয় দখলদারদের কারণে খনন শুরু করতে না পারায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা করা হয়েছে। যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে একই মেয়াদে অপর মরা নদী পোদা খননের মেয়াদ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত জোড়াতালির প্রায় অর্ধেকাংশ খনন হয়েছে।

এদিকে পাইকগাছার বহুলালোচিত দু’টি খাল ও একটি মরা নদী খননে একের পর এক ফলক পরিবর্তন, সময় বৃদ্ধি, খাল খনন না করে টাকা ফেরত যাওয়ার মূল কারণ একই সুতায় বাঁধা বলে মনে করা হচ্ছে। এবং একটির সাথে আরেকটি সরাসরি সম্পৃক্ত।

এলাকাবাসী বলছেন, সাসটেইনেবল কোস্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় ১০ কোটি টাকা ব্যায়ে ৯ কি:মি: তালতলা খাল পূণ:খনন ও ৭ কি:মি: পোদা নদীর পুণ:খনন প্রকল্পে তালতলা বন্ধ থাকলেও পোদার বরাদ্দকৃত অংশের টাকায় সমুদয় খনন কাজ সম্পন্ন কিংবা গয়েসার খাল খনন কোনভাবেই সম্ভবনা। তাছাড়া গয়সাকে বাদ রেখে পোদার খনন সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনা কিংবা নিষ্কাশনে কতটা সফলতা বয়ে নিয়ে আসবে সেটা নিয়ে শুরুতেই নানাভাবে এলাকাবাসীকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

এব্যাপারে কথা হয় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কাজল কান্তি বিশ্বাসের সাথে। তিনি বলছিলেন, গয়সা বাদ রেখে পোদার খনন কোনভাবেই এলাকাবাসীর সুফল বয়ে আনবেনা। মূল সমস্যা থেকেই যাবে। তবে তিনি দাবি করেন, পোদার খননের পাশাপাশি একই সাথে গয়সার খনন সম্পন্ন করা হবে। যদিও তার দাবির সাথে বাস্তবতার বড্ড অমিল রয়েছে।

এনিয়ে তালতলা-নাছিরপুর খাল খনন নিয়ে স্থানীয় কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার জানান, খাল খনন শুরু হলে দু’দিনেই পানি কমিয়ে দেবেন তিনি।

সব মিলিয়ে এলাকাবাসী মনে করছেন, খাল খনন প্রতিবন্ধকতার পেছনে শুধুমাত্র সুফলভোগীরাই দায়ী নন। অন্তরালে রয়েছে অন্য কারণ। যা অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসবে বিস্তীর্ণ জনপদের সাধারণ মানুষকে পানির নিচে তলিয়ে রাখার পরিকল্পিত প্রয়াস নিয়ে ভিন্ন খেলা, ভিন্ন আয়োজনে। এনিয়ে তারা কারণ অনুসন্ধানপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

খুলনা গেজেট-এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!