পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির তোড়ে বদ্ধজলমহলের বাঁধ ভেঙ্গে পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এদিকে, বদ্ধ জলমহলের ইজারাদার এলাকা ছাড়া। আমনের বীজতলাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে মৎস্য ঘের, পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে ৫ থেকে ছয়শ’ পরিবার। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে প্রাথমিকভাবে বাঁধের কাজ সম্পন্ন হলেও আতঙ্কিত এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে উপজেলার দেলুটি ইউপির শিবসা নদীর গেওয়াবুনিয়া ও কালিনগরের ওয়াপদার বাঁধ ভেঙ্গে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। যার ক্ষয়-ক্ষতির রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বুধবার (৫ আগস্ট) দুপুরে জোয়ারের পানির তোড়ে চকরিবরকি নদীর উত্তর মাথার ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এতে গেওয়াবুনিয়া, পারমধুখালী ও চক্রিবকরির ব্যাপক এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়। পানির তোড়ে আমনের বীজতলা, বহু মৎস্য ঘের ভেসে যায় এবং ফসলের ক্ষেত প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বহু বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ছয়শ’ পরিবার।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক সুকৃতি মোহন সরকার জানান, দেলুটি ইউনিয়নে আবারো চকরি বকরি নদীর উত্তর মাথা জোয়ারের পানিতে ভেঙ্গে গেছে। স্থানীয় জনগণ বাঁধদিলেও রাতে আবার বাঁধ ভেঙ্গে গেউয়াবুনিয়া, পারমধুখালী, চকরি বকরি গ্রামের বাড়িঘর, লীজঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। বীজতলার পাতা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
তিনি আরো জানান, পাউবো কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। ফোনে বারবার যোগাযোগ করেও নদীর মালিকের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। নদী রেখে সকলেই পালিয়ে গিয়েছে। এদিকে পরপর জোয়ার ভাটা সরবরাহ হয়ে ভাঙ্গন গভীর ও চওড়া হচ্ছে। কৃষকের আমন ধানের পাতা কেউ কেউ ফেলেছে এবং কেউ কেউ বীজধান ভিজিয়েছেন। চড়াদামে বীজ ধান সংগ্রহ করেও ধান লাগাতে পারবে না। আম্ফানের সময় বাড়িঘর, লীজঘের এবং ঘরের ভিতর থাকা সমস্ত মালামাল হারিয়ে রাস্তার বসবাস করতে হয়েছিল এলাকাবাসীর। আবারো চকরি বকরি নদী ভাঙ্গনের ফলে ‘মরার পরে খাড়ার ঘাঁ’ হয়েছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে গ্রামের মানুষ।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানিয়েছেন, জনৈক আনাম চক্রিবকরির ৩৭ একর জলমহলটিতে মাছ চাষ করে। অথচ খালের উত্তর ও দক্ষিণপাশে দু’টি বাঁধ দীর্ঘদিন মেরামত না করায় বাঁধটি মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। ফলে জোয়ারের পানির চাপে উত্তরপাশের বাঁধ ভেঙ্গে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে বাড়িঘর, বহু রাস্তাঘাট নষ্ঠ হয়ে গেছে। ভেসে গেছে বহু মৎস্য ঘের।
ইউপি চেয়ারম্যান জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবুর পরামর্শে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকীর নির্দেশনামতে শুক্রবার (৭ আগস্ট) দিনভর এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ফলে বাঁধটি আপাতত মেরামত করা সম্ভব হয়েছে। তবে সেটি শঙ্কামুক্ত নয়। ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকাবাসী দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধ দেয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এআইএন