দেশে বিগত পাঁচ বছরে মোটা চালের দাম ৫৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে। আর পাঁচ বছর আগের তুলনায় এখন খোলা আটার দাম ৫৭ শতাংশ বেশি।
সরকারের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির (এফপিএমসি) বৈঠকে এই হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। এতে জানানো হয়, ২০২০ সালের মার্চে দেশে মোটা চালের গড় দাম ছিল ৩১ টাকা ৪৬ পয়সা, যা গত মার্চে দাঁড়িয়েছে ৪৯ টাকা ১১ পয়সা। এই পাঁচ বছরে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে চালের দাম।
বৈঠকে খোলা আটার দামের পরিস্থিতিও তুলে ধরা হয়। জানানো হয়, ২০২০ সালের মার্চে খোলা আটার গড় দাম ছিল প্রতি কেজি ২৭ টাকার কিছু বেশি। গত মার্চে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৩ টাকা। অবশ্য গত বছর খোলা আটার দাম আরও বেশি ছিল, প্রতি কেজি প্রায় ৫৯ টাকা। পণ্যটির দাম গত বছরের তুলনায় কমলেও ২০২০ সালের চেয়ে এখনো ৫৭ শতাংশ বেশি।
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে গতকাল রোববার খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সভাপতি খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। কমিটিতে ৮ জন মন্ত্রী ও ১০ জন সচিব সদস্য।
কমিটির গতকালের সভায় কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এতে চলতি বছর বোরো মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে ৫ লাখ টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এবার দাম প্রতি কেজিতে দুই টাকা বাড়ানো হয়েছে।
বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, প্রয়োজনে কৃষকের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টনের বেশি ধান কেনা হবে। ধানের পাশাপাশি এবার ৪৫ টাকা কেজি দরে ১১ লাখ টন সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হবে। গতবার এটি ৪৪ টাকা কেজি দরে কেনা হয়েছিল। এ ছাড়া ৪৪ টাকা কেজি দরে এক লাখ টন আতপ চাল কিনবে সরকার। ৩৪ টাকা কেজি দরে ৫০ হাজার টন গমও কেনা হবে।
আগামী ৭ মে থেকে ধান কেনা শুরু হবে এবং ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তা চলবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বেশি ধান কেনা হবে হাওর থেকে। তিনি বলেন, কৃষক যাতে তাঁর উৎপাদনের ন্যায্যমূল্য পান,
সে জন্য এবার ধানের দাম কেজিতে দুই টাকা বাড়ানো হয়েছে। খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, বিশ্ববাজারে দাম, দেশের দর, মজুত ইত্যাদি পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, ২০২২–২৩ অর্থবছরে চাল উৎপাদিত হয়েছে ৩ কোটি ৯১ লাখ টন। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য ছিল প্রায় ৪ কোটি ১৬ লাখ টন। চাল, গম ও ভুট্টা মিলিয়ে খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল প্রায় ৪ কোটি ৮৫ লাখ টন। উৎপাদিত হয়েছে ৪ কোটি ৪৮ লাখ টনের কিছু বেশি।
চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ৪ কোটি ৩৪ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য ঠিক করেছে। দুটি মৌসুমের হিসাব পাওয়া গেছে। যেখানে দেখা যায় আউশের উৎপাদন গত মৌসুমের প্রায় সমান হয়েছে—প্রায় ৩০ লাখ টন। আমনের সাময়িক প্রাক্কলনে প্রায় ১ কোটি ৬৬ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছে বলে ধরা হয়েছে, যা গত মৌসুমের চেয়ে ১২ লাখ টন বেশি।
চাল ও আটা দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য। চালের দাম যখন বাড়তি, তখন আটার দামও চড়া। যদিও বিশ্ববাজারে গমের দাম ২০২০ সালের পর্যায়ে নেমে এসেছে। এমনকি বাংলাদেশে গম আমদানির দুটি উৎস রাশিয়া ও ইউক্রেনে গমের দাম ২০২০ সালের মার্চের চেয়েও কম।
খুলনা গেজেট/এইচ