জার্মান কোচ জোয়াকিম লো চাইলে বলতেই পারেন, আমার হাজারটা সমস্যা থাকলেও পর্তুগালকে হারানো তার মধ্যে একটা নয়। ইউরো ২০২০ এ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে তার প্রমাণই দিয়েছে জার্মানি। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের জালে জড়িয়েছে চার গোল। ৪-২ ব্যবধানের জয় নিয়ে ‘এফ’ গ্রুপের মৃত্যুকূপ থেকে নকআউটে যাওয়ার আশাটাও বাঁচিয়ে রেখেছে ডি ম্যানশ্যাফটরা।
জার্মান কোচ জোয়াকিম লো চাইলে বলতেই পারেন, আমার হাজারটা সমস্যা থাকলেও পর্তুগালকে হারানো তার মধ্যে একটা নয়। ইউরো ২০২০ এ নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে তার প্রমাণই দিয়েছে জার্মানি। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের জালে জড়িয়েছে চার গোল। ৪-২ ব্যবধানের জয় নিয়ে ‘এফ’ গ্রুপের মৃত্যুকূপ থেকে নকআউটে যাওয়ার আশাটাও বাঁচিয়ে রেখেছে ডি ম্যানশ্যাফটরা।
ঘরের মাঠ মিউনিখে জার্মানদের শুরুটা বেশ ভালোই ছিল। শুরু থেকে বলের দখলটা রেখেছিল পায়ে, প্রতিপক্ষ রক্ষণেও ছড়াচ্ছিল ত্রাস। একবার বলও জড়িয়েছিল জালে, কিন্তু অফসাইডের ঘরে বাতিল হয় সেটি। এরপরই কোত্থেকে যেন পর্তুগাল পেয়ে বসল প্রথম গোলটা।
দুরন্ত এক প্রতি আক্রমণ শেষে মাত্র ৩৮ সেকেন্ডে পর্তুগাল রক্ষণ থেকে জার্মান বিপদসীমায় এল বলটা। শুরুটা হয়েছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোতে, নিজেদের বক্সে বল কেড়ে সতীর্থকে বাড়িয়েছিলেন, এরপর মাত্র কয়েকটা সেকেন্ড সময় পেয়েছেন, দৌড়ে এসে এ বক্সে ডিয়েগো জোটার স্কয়ার করা বলটা থেকে করেছেন গোল। তাতে পর্তুগাল এগিয়ে গিয়েছিল ১-০ গোলে।
তাতে একটা আক্ষেপও ঘুচিয়েছিলেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। জার্মানির বিপক্ষে ছিল না কোনো গোলে সহায়তা, ইউরো ২০২০ এর এই ম্যাচে ১৫ মিনিটেই সেখানে টিক পড়ে গিয়েছিল তার।
জার্মানি যেন তাদের বিধ্বংসী রূপটা জমিয়ে রেখেছিল এই পিছিয়ে পড়ার জন্যেই। পিছিয়ে পড়ে খোঁচা খাওয়া বাঘের মতো সাড়াশি আক্রমণে চেপে ধরেছে রোনালদোদের। প্রথমার্ধ বিরতির আগেই রুবেন ডিয়াজ আর রাফায়েল গেরেরোর কাছ থেকে আদায় করল দু’দুটো আত্মঘাতী গোল। তাতে রোনালদোর গোলের শোধবোধ তো হলোই, দলও গেল এগিয়ে।
কিন্তু প্রতিপক্ষ আক্রমণে যখন রোনালদো থাকেন, এক গোলের অগ্রগামিতা নিরাপদ থাকে কী করে? সেজন্যে বিরতির পরেও গোলের জন্য হন্যে হয়ে আক্রমণে উঠেছে জার্মানরা। ফলটাও এল। ৫১ মিনিটে কাই হ্যাভার্টজের গোলে জার্মানি গেল ৩-১ গোলে এগিয়ে। এ গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও জার্মানরা মাতে গোল উৎসবে। আগের গোলে যোগান এসেছিল তার থেকে, ৬০ মিনিটে নিজেই গোল করে বসেন রবিন গোসেন্স।
নিজেদের মেজর টুর্নামেন্টের ইতিহাসে পর্তুগালের চার গোল হজমের রেকর্ড ছিল একটি, ২০১৪ সালে এই জার্মানির কাছেই ৪-০ গোলে হেরেছিল পর্তুগাল। সেই জার্মানিই আজ দ্বিতীয় ‘হালির’ স্বাদটা দেয় তাদের। সঙ্গে একটা অনন্য ‘কীর্তিও’ গড়ে বসেছে পর্তুগাল। ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ইউরোজয়ী দল শিরোপা ধরে রাখতে এসে হজম করে চার গোল।
ম্যাচে ফেরার অনেক সময় ছিল পর্তুগালের হাতে। একটা গোল শোধও করেছিল তারা। রোনালদোর প্রথমার্ধের গোলটার যোগান দিয়েছিলেন জোটা, সেই জোটাই রোনালদোর ক্রসে গোল করে ৬৭ মিনিটে ম্যাচ ফেরান পর্তুগালকে। ম্যাচে সেলেকাও দাস কুইনাসদের সুখস্মৃতির শেষ সেখানেই। জোয়াও মুটিনিওর দূরপাল্লার শট ৭৯ মিনিটে প্রতিহত হয়েছে ক্রসবারে, এরপর ৮৯ মিনিটে পেপে, রোনালদো আর রুবেন ডিয়াজের সম্মিলিত চেষ্টা গোলে রূপ নেয়নি। ফলে হারের বিষাদ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় রোনালদোদের, আর দুরন্ত জয়ে জার্মানি বাঁচিয়ে রাখে শেষ ষোলর আসা।
এই জয় ‘এফ’ গ্রুপে জার্মানিকে নিয়ে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে, ঝুলিতে আছে তিন পয়েন্ট। দিনের অন্য ম্যাচে ফ্রান্স ড্র করেও আছে শীর্ষে, তাদের সংগ্রহ চার পয়েন্ট। এই ফলাফল এফ গ্রুপের শেষ দিনের লড়াইগুলোকে এনে দিয়েছে দারুণ রোমাঞ্চের সামনে। শেষ দিনে যে কারো সম্ভাবনা আছে শেষ ষোলয় যাওয়ার, ফ্রান্স ছাড়া সবারই সম্ভাবনা আছে বিদায় নেওয়ারও।
নক আউটে ওঠার লড়াইয়ে আগামী ২৪ জুন জার্মানি আতিথ্য দেবে হাঙ্গেরিকে। আর পর্তুগাল একই সময়ে লড়বে ফ্রান্সের বিপক্ষে।