খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীতে ফার্মগেটে বণিজ্যিক ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৫ ইউনিট কাজ করছে
  গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে ৩ শিক্ষার্থী নিহত
  ঝিনাইদহে ২ ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ট্রাক চালকের মৃত্যু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলল ২৫০, বাংলাদেশ পেল ৫ উইকেট

পরের হক পূরণের মাধ্যমেই সমাজে শান্তি আসতে পারে

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী

সর্বত্র আজ চলছে একই শ্লোগান, মোদের দাবি মানতে হবে, মেনে নাও। চারদিকে আজ দফা আর দাবির পাহাড়। সবাই ব্যস্ত নিজের অধিকার আদায় করা নিয়ে, কিন্তু অন্যের হক আদায়ের ব্যাপারে কোন মাথাব্যথা নেই। আর এখানেই বাঁধছে গন্ডগোলটা। সমাজের পরোতে পরোতে আজ মানুষ শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত। শাসকবৃন্দ প্রজাদের দিকে খেয়াল রাখছে না, প্রজারাও শাসকশ্রেণীকে সম্মান ও মান্য করছে না, মালিকরা তাদের শ্রমিককে ন্যায্য পাওনা দিচ্ছে না, শ্রমিকরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে না, ছোটরা বড়দেরকে সম্মান করছে না, বড়রা ছোটদেরকে স্নেহ করছে না, ধনীরা গরীবদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করছে না, সন্তান পিতামাতাকে সম্মান করছে না, স্ত্রী তার ন্যায্য হক বা অধিকার পাচ্ছে না, স্বামী তার স্ত্রীর হক আদায় করছে না, – এই ধরনের হাজারো সমস্যা আজ কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে সমাজটাকে। সবাই যখন নিজের হক বা অধিকার নিয়ে দিশেহারা তখন পৃথিবীতে কিভাবে শান্তি আসতে পারে? কিন্তু ইসলামের শিক্ষা কি? কুরআন হাদিসের বেশীরভাগ জাগাতেই বলা হয়েছে অন্যের হক আদায় করো। আর প্রত্যেকে যখন অন্যের হক আদায় করবে তখনই সারা বিশ্বে শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।

ইসলামে শাসককে বলা হয়েছে, প্রজাসাধারণের খেদমত করবে। আর প্রজাদেরকে বলা হয়েছে, ন্যায়পরায়ণ শাসককে সম্মান করবে। সরকারি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ ও শাসকশ্রেণীকে বলা হয়েছে, তোমরা জনগণের সামান্যতম মালও আত্মসাৎ করবে না। আর আমাদের শাসক ও কর্মকর্তাদের নীতি হলো, জনগণের সামান্য মালও ছাড়বো না। হাদিসে মানবতার আদর্শ মহানবী বলেন: আমরা কোন ব্যক্তিকে সরকারী পদে নিয়োগ করলাম। অতঃপর সে একটা সূঁচ পরিমাণ অথবা তার চেয়ে বেশী আমাদের কাছে গোপন করল (অর্থাৎ আত্মসাৎ করল)। এক্ষেত্রে সে খেয়ানতকারী গণ্য হবে। সে কেয়ামতের দিন তা নিয়ে হাজির হবে (মুসলিম)।

হাদিসে আছে, যে জনগণের খাদেম হয় সে সমাজের নেতা হয়। আর বর্তমানে অবস্থা এমন হয়েছে যে, যেই সমাজের নেতা হয় সেই জনগণের খাদক হয় । আল্লাহর রসুল (স.) হুকুম দিয়েছেন, তোমরা শ্রমিকের মজুরি দিয়ে দাও তার গায়ের ঘাঁম শুকানোর আগেই। আর আমাদের ক্ষেত্রে কি হয়? মজুরি আদায় করতে গিয়ে ঘাঁম বের হয়ে যায়। তবে এ ব্যাপারে শ্রমিকরাও পিছিয়ে (!) নেই। তারাও চাই কিভাবে কাজে ফাঁকি মারা যায়। ছোটদেরকে বলা হয়েছে, বড়দের সম্মান করবে, আর বড়দের বলা হয়েছে ছোটদের স্নেহ করবে। একথা বলা হয়নি যে, বড়রা ছোটদের কাছ থেকে সম্মান আদায় করে নেবে আর ছোটরা বড়দের কাছ থেকে স্নেহ আদায় করে নেবে।

হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ছোটদের স্নেহ করে না, বড়দের সম্মান করে না এবং আলেম বা জ্ঞানী ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা করে না সে আমার উম্মতভুক্ত নয় (তারগীব: আহমাদ, হাকিম))। স্বামীকে বলা হয়েছে স্ত্রীর হকের ব্যপারে যত্নবান হবে, আর স্ত্রীকে বলা হয়েছে স্বামীর হক আদায় করবে।

হাদিসে আছে, আমি যদি কাউকে সেজদা করার হুকুম দিতাম তাহলে স্ত্রীদেরকে বলতাম তাদের স্বামীদেরকে যেন সেজদা করে। স্বামীরা যাতে তাদের স্ত্রীদের হক আদায় করে সে ব্যপারেও কড়া তাগিদ দেয়া হয়েছে। হুজুর (স.)-এর জীবনের শেষ বাণীতেও স্ত্রীদের হক আদায় করে ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করার কথা বলা হয়েছে। ধনীদের বলা হয়েছে গরীবদের সাহায্য করবে, আর গরীবদের বলা হয়েছে ধনীদের মুখাপেক্ষী হবে না, তাদের কাছে কিছু চাইবেনা। ইসলামের কি চমৎকার বিধান! হতদরীদ্র ও নিঃস্ব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতি উৎসাহ প্রদান করতে দয়ার নবী (সাঃ) এরশাদ করেন, যদি কোন ব্যাক্তি কোন বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দান করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতের সবুজ বস্ত্র পরাবেন। যদি কেউ কোন ক্ষুধার্তকে খানা খাওয়ায় আল্লাহপাক তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। আর যদি কেউ কোন পিপাসিতকে পানি পান করাবে মহান আল্লাহপাক তাকে জান্নাতের মোহরযুক্ত পানীয় পান করাবেন (আবু দাউদ, তিরমিজী)। গরীবদের প্রতি নবীর শিক্ষা, করো না ভিক্ষা; মেহনত করো সবে। সন্তানকে বলা হয়েছে, পিতামাতাকে সম্মানকর, যথাসাধ্য খেদমত করো; আর পিতামাতাকে বলা হয়েছে তাদের জন্য সাধ্যমত খরচ করো, ভালোর ব্যবস্থা করো।

এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালার হুকুম হলো: পিতামাতার সাথে সদ্বব্যবহার করো। তাদের কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনিত হয়; তবে তাদেরকে উহ্ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। বরং তাদের সাথে বিশেষ মর্যাদা সহকারে কথা বলো। বিনয় ও নম্রতার বাহু তাদের জন্য প্রসারিত করো এবং বলো: হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন, যেমন তারা আমাকে শৈশবে স্নেহ-বাৎসল্য সহকারে লালনপালন করেছেন (সূরা বনী ইসরাঈল: ২৩-২৪)। হাদিসে কড়া তাগিদ দিয়ে মানবতার মূর্তপ্রতিক, সর্বযুগের, সর্বকালের, সর্বশ্রেষ্ঠ মহা মানব দয়ার নবী (স.) এরশাদ করেন, ওই ব্যক্তির নাক ধুলো-মলিন হোক, ওই ব্যক্তির নাক ধুলো-মলিন হোক, ওই ব্যক্তির নাক ধুলো-মলিন হোক, (আর এক হাদিসে মতে ধ্বংস হোক) যে তার মাতাপিতা অথবা উভয়ের একজনকে বার্ধক্যে পেল আর সে তাদের খেদমত করে নিজেকে জান্নাতে পৌঁছাইতে পারল না (মুসলিম)। এটাই ইসলাম। এভাবেই কায়েম হতে পারে পরিবার, সমাজ ও দেশে প্রকৃত শান্তি। অন্য কোন থিওরী ও মতবাদে শান্তি আসতেই পারে না

লেখক : মৎস্য-বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!