খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৪৫
  মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

পদ্মা সেতু : দক্ষিণাঞ্চল হবে দেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোন 

মোহাম্মদ মিলন

পদ্মা সেতুতে শেষ স্প্যানটি বসানোতে স্বপ্ন স্পর্শ করলো বাংলাদেশ। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত এক সুতোয় গেঁথে দৃষ্টি সীমায় পূর্ণ রূপে ভেসে উঠেছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো। সরকার আশা করছে ২০২২ সালের জুনে সেতুতে গাড়ি চলবে। আর এই সেতুটি চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্ন পূরণ হতে হবে। মানুষের ভাগ্য বদলে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে পদ্মা সেতু। খুলবে অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের দ্বার। আরও সহজ হবে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা ঘোরার পাশাপাশি বাড়বে কর্মসংস্থান। দক্ষিণাঞ্চল হবে দেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোন। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, পদ্মা সেতু চালু হলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা হচ্ছে- খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা। বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী।



খুলনা বিশ্ব‌বিদ‌্যালয়ের অর্থনী‌তি ডি‌সি‌প্লিনের প্রধান প্রফেসর ড. ‌মো: না‌সিফ আহসান বলেন, স্বপ্নের সেতু এখন সম্পূর্ণ দৃশ্যমান। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ হতে চলেছে। এ অঞ্চলে বৈরি অবস্থা ছিল, কিন্তু সেটি পেরিয়ে উঠছে। পদ্মাসেতুর কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর উজ্জীবিত হবে। বাড়বে পোর্টের ব্যবহার। চট্টগ্রাম বন্দর শক্তিশালী ঢাকা-চট্রগ্রামের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ থাকার কারণে। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানীর সাথে মোংলা বন্দরের দূরত্ব কমবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে ঢাকা-মোংলা বন্দরের অন্তত ৮৭ কিলোমিটার দূরত্ব কমে আসবে। ফলে ব্যবসায়ীরা সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মোংলা পোর্ট ব্যবহারে আগ্রহী হবে। বর্তমান অবস্থায় মোংলা বন্দর থেকে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন বাণিজ্য সম্ভব। পদ্মা সেতু চালু হলে তা বেড়ে ১০ বিলিয়নে চলে যাবে। মোংলা পায়রা সমুদ্র বন্দর, সুন্দরবনসহ এ অঞ্চলে সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প গড়ে উঠবে। সার্বিকভাবে দক্ষিণাঞ্চল একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হবে। দেশের জিডিপিতে ২ দশমিক ৫ শতাংশ অবদান রাখতে পারবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি কাজী আমিনুল হক বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলার গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য পরিবহন করে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে রফতানি ও আমদানি করতে উৎসাহিত হবেন। পদ্মা সেতু নির্মাণের পর পায়রা বন্দরের গুরুত্বও বাড়বে। প্রয়োজনীয় আধুনিকায়ন করা হলে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে এই বন্দরও এক বৃহত্তম বন্দরে রূপান্তরিত হবে। এমনকি ভুটান, পূর্ব নেপাল ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব প্রদেশের জন্য পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর হিসাবে ভূমিকা রাখতে পারবে।

তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতু হলে দেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত খুলনার হিমায়িত মৎস্য ও পাট শিল্প থেকে আয় আরও বাড়বে। পাশাপাশি কমে যাবে পণ্য পরিবহণের খরচ। একইভাবে পদ্মা সেতুতে রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকায় দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহন, সাধারণ মানুষের যাতায়াতসহ পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গেও রেল যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের এক নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচিত হবে। নেপাল-ভুটান পোর্ট ব্যবহার করবে। খান জাহান আলী বিমানবন্দর এখন পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর হতে যাচ্ছে। এ অঞ্চল থেকে দেশের দূর-দূরান্তে পণ্য পরিবহনে ব্যবসায়ীরাও দারুণভাবে উপকৃত হবেন। এর সঙ্গে চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ এবং পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরু হলে দক্ষিণাঞ্চল হবে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চল।



খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি ও খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, আজ পদ্মা সেতুর ৪১ তম অর্থাৎ শেষ স্প্যান বসানোতে পুরো সেতু দৃশ্যমান হয়েছে। এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপ নিয়েছে পদ্মাসেতু। সেতুটি চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলসহ সারাদেশের উন্নয়নের মাইলফলক স্পর্শ করবে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে এগিয়ে যাবে খুলনাসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চল। মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরের ব্যবহার বাড়বে। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতুর ফলে এ অঞ্চলের উন্নয়নের নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটবে।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) মহান বিজয়ের মাসে সুদীর্ঘকালের প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানোর কাজ সাফল্যের সাথে সম্পন্ন হওয়ায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সকল প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নিজস্ব অর্থে এই সেতু নির্মাণ প্রধানমন্ত্রীর সাহস, দৃঢ়তা, মনোবল, দূরদর্শীতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বাস্তবে রূপ লাভ করতে পেরেছে। সেতুর একচল্লিশতম স্প্যান বসায় এখন পদ্মার দুই তীর তথা দেশের দুটি বৃহৎ ভূ-খন্ডের সংযোগ সাধিত হয়েছে। পদ্মা সেতু উন্নয়নের মাইল ফলক যা এদেশের মানুষের কাছে নতুন প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। একই সাথে এই সেতু যতদিন থাকবে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অমর কীর্তিরূপে গৌরব বহন করবে। এই সেতু নির্মাণে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে এবং সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। পদ্মা সেতুর প্রেরণা কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের সকল উন্নয়ন ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সম্ভব হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উপাচার্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পদ্মা সেতু নির্মাণের সাথে প্রকৌশলী, কর্মকৌশলী ও শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

খুলনা গেজেট /এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!