খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ কার্তিক, ১৪৩১ | ৩১ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৫৪
  দ্রুতই সিটি করপোরেশন, জেলা-উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভায় স্থায়ীভাবে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে : স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা

পদ্মা সেতু : এবার স্বপ্ন পৌঁছে যাবে বাড়ি

কাজী মোতাহার রহমান

মাওয়ায় পদ্মা নদীর ওপর সেতু। পর্বতসম আত্মবিশ্বাসের অবিশ্বাস্য এক রূপকথা। সেতু উদ্বোধনের খবরে নতুন করে জেগেছে মানুষের স্বপ্ন। দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয়েছে সেতু। এটি অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা, সক্ষমতা ও প্রতিরোদ্ধ ইচ্ছাশক্তির প্রতীক। সেতু কেন্দ্রীক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গড়ে উঠতে শুরু করেছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তিন কোটি মানুষের স্বপ্ন দ্বার খুলে যাচ্ছে। সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দেশকে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে।

এ অঞ্চলে শিল্পকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিপণন, সরবরাহ ও কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণকে ত্বরান্বিত করবে। এসব কার্যক্রম কিছু মাঝামাঝি পর্যায়ে। কিছু ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

সেতুর সঙ্গে কানেক্টিভিটি তৈরি হচ্ছে। সড়ক উন্নয়নের ব্যাপক কাজ চলছে। মোংলা ইপিজেড-শিল্পাঞ্চল সেটি তো আছেই। প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি তা পেতে সময় লাগবে। কিন্তু সেতুকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকা- হবে, তা নিশ্চিত। ইতোমধ্যে দেখাও যাচ্ছে। এজন্য এঅঞ্চলের মানুষ ধন্য। অনেক ত্যাগ তিতীক্ষার ফসল আজকের গর্বের সেতু। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এজন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। আর এ আন্দোলনের শেকড় গাড়ে বৃহত্তর উন্নয়ন সমন্বয় সংগ্রাম কমিটি। এ সংগঠনের সকল স্তরের কর্মীদের ত্যাগ দক্ষিণাঞ্চলের জনপদের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেতু বাস্তবায়নের জন্য কারাবরণ করতেও হয়েছে সংগঠনের কর্মীদের। এটি বাস্তবায়ন হওয়ায় এ অঞ্চলের জনগন গর্ব করে বলতে পারবে পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার। এর মধ্য দিয়ে আমূল পরিবর্তন আসবে।

সেতু হওয়ার পর অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকা- গুলোকে গতিশীল করতে প্রয়োজনীয় সড়ক, সেতু ও বিদ্যুতের মতো অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে- যাতে এ অঞ্চলে শিল্পকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। ঢাকায় দ্রুত আসা-যাওয়া ও পণ্য আনা-নেওয়া করবে। বিশ্বের প্রথম সারির অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ও দাতা সংস্থাগুলোর বিরোধিতার মুখে নিজস্ব শক্তি ও সাহস নিয়ে নিজ অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

এসব প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দেড় শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলাকে যুক্ত করার জন্য কাজ করছে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়।

উদ্বোধন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যোগাযোগের স্বপ্ন দ্বার খুলে যাবে। ইতোমধ্যে মানুষের মধ্যে সাজ সাজ রব। অপেক্ষা শুধু উদ্বোধনের। জাজিরা থেকে ভাঙ্গা হয়ে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত ফোর লেন সড়ক নির্মাণের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। গোপালগঞ্জ থেকে নড়াইলের লোহাগড়ার কালনা পর্যন্ত ফোর লেনের সড়কের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি উন্নত হবে কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত। এদিকে বরিশাল থেকে ভোলা, পটুয়াখালীর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে।

সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে কুয়াকাটা পর্যন্ত ইতোমধ্যে যোগাযোগের জন্য সড়ক প্রস্তুত হয়েছে। এক্ষেত্রে পায়রা সেতু সংযোগ করেছে। পায়রা সেতু বাংলাদেশের সড়ক সেতু, যা পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৭০ মিটার। এ সেতু নির্মাণের পর থেকে বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ১১১.৫ কিলোমিটার যাত্রাপথে ফেরি পারাপারের প্রয়োজন শেষ হয়। ঢাকা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী এলাকার পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ করা হয় এ সেতু। দক্ষিণাঞ্চল মূলত কৃষিনির্ভর এলাকা। এখানে কৃষিপণ্য উৎপাদিত হলেও যোগাযোগের অভাবে চাষিরা দাম পান না। খাদ্যভা-ার খ্যাত উত্তরাঞ্চলে খাদ্য উৎপাদন হওয়ার পাশাপাশি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকারখানাও গড়ে উঠেছে। হচ্ছে বড় বড় বিনিয়োগ। মূলতঃ যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে এমন পরিবর্তন এসেছে। দক্ষিণাঞ্চলে কৃষিপণ্য উৎপাদন হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ার কারণে সেখানকার কৃষি ও কৃষক তিমিরেই থেকে যায়।

সেতু চালু হওয়ার পর থেকে সেই অন্ধকার কেটে যাবে। সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চলাচল, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে যোগাযোগের মহোৎসব শুরু হবে, সেই অবস্থাকে বিবেচনায় রেখেই এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, বলে মনে করছে এ অঞ্চলের মানুষ। পদ্মা সেতু চালু হলে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হবে মোংলা বন্দরের। ঢাকার সাথে কমবে দূরত্ব। এজন্য সড়ক পথের কার্যক্রম ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সেতুকেন্দ্রিক উন্নয়ন কাঠামো নির্মাণ এসব সড়ক নির্মাণের লক্ষ্য।

সেতু উদ্বোধনের দু’দিন বাকি। ইতিমধ্যেই বেশকিছু কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অবকাঠামো গড়ে উঠেছে তার চারপাশে। নতুন নতুন বাড়িঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার দুই পাশে জমির দাম বেড়ে গেছে। উদ্বোধনের পর এসব উন্নয়ন কার্যক্রম বেড়ে যাবে বহুগুণ। মানুষের জীবনে পরিবর্তনের ছোয়া লেগেছে; অপেক্ষায় আছে ২৫ জুনের। যেন স্বপ্ন পৌঁছে যাবে বাড়ি। শুধু সেতু নির্মাণ হলেই হবে না, মানুষ শুধু ঢাকায় যাওয়া আসে করলেই হবে না, অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকা- যুক্ত হতে হবে। সেজন্য অপেক্ষা ২৫ জুনের। শিল্পায়নের জন্য অবকাঠামো মূল কথা। আমাদের অভিজ্ঞতাও আছে। ঢাকা ময়মনসিংহ, ঢাকা সিলেট ও ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়ক ফোর লেন হওয়ার সঙ্গে শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব এলাকা এখন বড় শিল্প এলাকা। এখানে কর্মসংস্থান, উৎপাদন, সেবা ও রপ্তানি আয়ে ভূমিকা রাখছে।

সেতুকে কেন্দ্র করে যেসব অবকাঠামো গড়ে উঠছে এখানেও শিল্প কারখানা গড় উঠবে। এখন উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে, এটা কাঙ্খিত জায়গায় যেতে হয়তো ৫-৬ বছর লাগবে। তবে যেসব অর্থনৈতিক জোন এসব অঞ্চলে গড়ে উঠেছে, সেগুলো উৎপাদনে যাওয়ার মতো জায়গা নিয়ে যেতে হবে। এ সেতুর সাথে আন্দোলন সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় জড়িত হয়েছে। সেক্ষেত্রে অনেকখানী গর্বের দাবিদার বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। এ অঞ্চলের মানুষের লালিত স্বপ্ন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা ওয়াসা ও পীর খানজাহান আলী (র.) সেতু বাস্তবায়নে উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। তাদের এ সফলতা সর্বজন স্বীকৃত। আগামী দিনে ১৮ দফা কর্মসূচী বাস্তবায়নে উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির কর্মকর্তারা বিগত দিনের ন্যায় ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।

 

খুলনা গেজেট/ আ হ আ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!