শান্তিপূর্ণ পর্যায় থেকে ক্রমশ সহিংস রূপ নিচ্ছে শ্রীলঙ্কার সরকার পতন আন্দোলন। সোমবার দেশটির সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের ব্যক্তিগত বাসভবনসহ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপির বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
দেশটির দৈনিক পত্রিকা ডেইলি মিররের বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যম এএনআই জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যার পরে শ্রীলঙ্কার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুরুনেঙ্গালায় মাহিন্দা রাজাপাকসের ব্যক্তিগত বাসভবন আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকরীরা।
একই দিন দেশটির সাবেক মন্ত্রী জর্জস্টোন ফেরনান্দো. এমপি সনাথ নিশান্থা, এমপি রমেশ পাথিরানা, এমপি মাহিপালা হেরাথ, এমপি থিসা কুতিয়ারাচ্চি, এমপি নিমল লাঞ্জা ও কলোম্বর সংলগ্ন উপশহর মোরাতুয়ার মেয়র সমন লাল ফেরনান্দোর বাড়িতেও অগ্নিসংযোগ করেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
এছাড়া, রাজাপাকসে ভাইদের রাজনৈতিক দল পোদুজানা পেরুমুনার প্রধান কার্যালয়েও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। সাধারণ জনগণের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন ইন্টার ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ফেডারেশনও এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে দৈনিক মিরর।
ইতোমধ্যে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে কলম্বোতে দুই জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।
সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের কাছে পদত্যাগপত্রও জমা দিয়েছেন তিনি। তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার ব্যক্তিগত বাসভবনে আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা।
এক প্রতিবেদনে এএফপি জানিয়েছে, সোমবার সকালে কলম্বোতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রির কাছে সরকার সমর্থক ও বিরোধীদের সংঘাত হওয়ার পর থেকে নতুন মাত্রা পেয়েছে জনবিক্ষোভ। রাজধানীর প্রধান হাসপাতাল কলোম্বো ন্যাশনাল হসপিটালের মুখপাত্র পুষ্পা সোয়সা জানিয়েছেন, সংঘাতে আহত হয়ে অন্তত ৭৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে সংঘাতের পর উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করতে বাধ্য হয়েছে শ্রীলঙ্কার পুলিশ। প্রথমে কেবল কলম্বোতে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছিল, পরে দেশজুড়ে কারফিউ বর্ধিত করা হয়েছে। কিন্তু কারফিউ অমান্য করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন বিক্ষুব্ধ জনগণ।
করোনা মহামারি, উচ্চাভিলাষী ও অলাভজনক বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারের বিনিয়োগ, ত্রুটিপূর্ণ করনীতি ও সরকারি অব্যবস্থাপনার কারণে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপকভাবে কমে যায়। এর ফলে অনেকদিন ধরে জ্বালানি তেল, খাদ্য, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করতে পারছে না দেশটি।
পাশপাশি, ঝড়ের গতিতে বাড়তে থাকা মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে শুরু হয় ভয়াবহ আর্থিক ও মানবিক সংকট।
মাসের পর মাস ধরে এই অবস্থা চলতে থাকায় এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে শ্রীলঙ্কার জনগণ। গত মার্চ থেকে শ্রীলঙ্কার ছোট-বড় সব শহরে শুরু হয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সবাইকে পদত্যাগ করতে হবে।
জনগণের দাবি আংশিক মেনে নিয়ে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে একসঙ্গে পদত্যাগ করেন মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্য। তারপর সোমবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান মাহিন্দা রাজাপাকসে। ইতোমধ্যে সর্বদলীয় সরকার গঠনের জন্য বিরোধী বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহও জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ড।
কিন্তু কোনো কিছুতেই কমছে না জনগণের বিক্ষোভ। এদিকে, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন দাতাসংস্থা শ্রীলঙ্কা সরকারকে শর্ত দিয়েছে— দেশের পরিস্থিতি শান্ত না হলে আর্থিক সহায়তা মিলবে না।