নড়াইল সদরের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে গত ১৮ জুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্চিত করাসহ শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পোড়ানো এবং পুলিশের কাজে বাঁধা দেয়ার ঘটনায় মির্জাপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মুরসালিন বাদি হয়ে সোমবার (২৭ জুন) নড়াইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-১৭, মামলায় অজ্ঞাত ১৭০/১৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার পর আজ ২৮ জুন পুলিশ আড়পাড়া গ্রামের শাওন (২৮), মির্জাপুর গ্রামের রিমন (২২), মনিরুল ইসলামকে (২৭) গ্রেফতার করেছে। তাদেরকে বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। ইতিমধ্যে এই ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একটি ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের একটি মোট দুটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। জানাগেছে জেলা প্রশাসক গঠিত তদন্ত কমিটিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিট্রেট জুবায়ের হোসেন চৌধুরীকে আহবায়ক ও জেলা শিক্ষা অফিসার এস এম ছাইদুর রহমান ও নড়াইল সদর থানার ওসি শওকত কবিরকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি গঠন হয়েছে।
পুলিশ সুপার গঠিত তদন্ত কমিটিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলামকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৩০ জুনের মধ্য তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ জুন মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাহুল দেব রায় নিজের ফেসবুক আইডিতে নূপুর শর্মার ছবি ব্যবহার করে লেখেন-প্রণাম নিও বস ‘নূপুর শর্মা’ জয় শ্রীরাম। এ পোস্ট দেয়ার পর গত ১৮ জুন সকালে কলেজে আসেন রাহুল। এরপর তার বন্ধুরা পোস্টটি মুছে ফেলতে বললেও সে পোস্ট মুছেননি। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে জানান। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীসহ বিক্ষুদ্ধ জনতা কলেজ চত্বরে থাকা শিক্ষকদের তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ এনে বিক্ষুদ্ধ জনতা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস এবং শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়কে গলায় জুতারমালা পরিয়ে দেন। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায় সহ প্রায় ২ শতাধিক পুলিশ ঘটনা স্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রাহুল দেব রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এঘটনায় ২৬ জুন রবিবার পুলিশ অভিযুক্ত ছাত্র রাহুল দেব রায়ের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলেও নড়াইলের সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেনি।
ঘটনার পরদিন ১৯ জুন দুপুরে মির্জাপুর কলেজের হলরুমে নড়াইল-১ আসনের এমপি কবিরুল হক মুক্তি, স্থানীয় প্রশাসনসহ বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসীর সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
এই বিষয়ে মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের সভাপতি অ্যাডভোকেট অচিন চক্রবর্ত্তী বলেন, কলেজ বন্ধ রয়েছে, অধ্যক্ষ ছুটি চাইলে নিয়ম অনুযায়ী তাকে ছুটি দেওয়া হবে। আর অধ্যক্ষের ব্যাপারসহ অন্যান্য বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত হবে তা জিবি মিটিং থেকে নেওয়া হবে।
নড়াইলের পুলিশ সুপার প্রবীর কুমার রায়ের কাছে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে গলায় জুতার মালা দেওয়ার ঘটনা জানতে চাওয়া হলে মোবাইলে জানান, এটি নিয়ে তদন্ত চলছে । ডিসি মহোদয় তদন্ত কমিটি করেছে, আমরাও তদন্ত কমিটি করেছি। আর আমার জানামতে পুলিশ প্রহারায় এটা হয়েছে, এটা আমার জানা নাই। আমি আর ডিসি সাহেব মেন রাস্তায় ছিলাম, আমরা ওখানে জনগনকে বুঝাচ্ছিলাম এবং ঠেকাচ্ছিলাম। এর ভিতরে হাজার হাজার জনগন। কোথায় কি হয়েছে এটা আমি সঠিক বলতে পারছিনা। তবে আমরা চেষ্টা করেছি জানমালের কোন ক্ষতি না করে উনাদেরকে কিভাবে উদ্ধার করা যায়।
পুলিশের প্রহরায় এমন ঘটনা ঘটেছে প্রশ্ন করা হলে তিনি আরো জানান, এটা আমি দেখি নাই। এটা বলতে পারবো না। তবে যেটা আমি বলতে পারি যে, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যাতে ওখানে যান মালের ক্ষতি ব্যাতিরেখে। ওদের মৃত্যুর হুমকী ছিলো, হাজার হাজার জনগন ক্ষেপে গিয়েছিলো, ওদের কে হাজার হাজার জনগনের মাঝ থেকে সুস্থ শরীরে বের করে আনা টার্গেট ছিল। ডিসি সাহেব ছিলো, ম্যাজিট্রেট ছিলো, আমরা পুলিশ ছিলাম প্রচুর, আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করে এটা করতে পেরেছি।