সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্তের শাঁখরা কোমরপুর এলাকায় লাবণ্য নদীর উপর নির্মিত বেইলি ব্রিজের দক্ষিণ পাশে মৎস্য ঘেরের পানি নিষ্কাশনের ড্রেনের মধ্যে বোরকা পরে পাগল বেশে শুয়ে ছিলেন রিজেন্ট গ্রুপের প্রভাপশালী চেয়ারম্যান সাহেদ করিম।
সীমান্তের ইছামতি নদী পেরিয়ে চোরাই পথে কোলকাতা যাবার জন্য নৌকার অপেক্ষা করছিলেন তিনি। কিন্তু র্যাব-৬ এর অভিযানে সাহেদ করিমের কোলকাতা যাওয়া আর হলো না। অবশেষে সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম থেকে হেলিকপ্টারে উড়ে যেতে হলো ঢাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাতক্ষীরার দেবহাটার শাঁখরা কোমরপুর বেইলি ব্রিজের দক্ষিণ পাশে মৎস্য ঘেরে পানি সরানোর জন্য একটি সরু ড্রেন রয়েছে। ফজরের নামাজের সময় এই ড্রেনের পাশেই বোরকা পরিহিত অবস্থায় ঘুরাঘুরি করেন এক ব্যক্তি। স্থানীয়রা তাকে দেখে ভেবেছিলেন পাগল। ভোর হওয়ার পর ড্রেনে শুয়ে ছিলেন রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম। এসময় মাছধরা জেলেরা দেখে ভেবেছিলেন কোনো পাগল শুয়ে আছে। কেননা ওই এলাকায় এমন একজন পাগল রয়েছে। সেই পাগল যেখানে সেখানে শুয়ে থাকে। কিন্তু কে জানতো বোরকা পরিহিত পাগল সেজে থাকা লোকটি দেশের সর্বাধিক আলোচিত মোস্ট ওয়ান্টেড সেই প্রতারক সাহেদ। এর কিছুক্ষন পরে র্যাবের কয়েকটি গাড়ী এসে দাড়ায় কোমরপুর বেইলি ব্রীজের মাথায়। গাড়ী থেকে নেমে তারা কি যেন খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে ভোর ৫ টা ১০ মিনিটের দিকে পেয়েছি পেয়েছি বলে চিৎকার করতে থাকেন র্যাব সদস্যরা। এসময় ড্রেনের মধ্যে বোরকা পরে শুয়ে থাকা অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করে র্যাব সদস্যরা। এসময় সাহেদকে কাদামাটি মাখা অবস্থায় দেখা যায়। এঘটনা জানতে পেরে হতভম্ব হয়ে পড়েন স্থানীয়রা।
এভাবেই করোনা পরীক্ষা না করেই ভূয়া সার্টিফিকেট দেওয়াসহ নানা অভিযোগে বহুল আলোচিত প্রতারক ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃ সাহেদ করিমকে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্তের লাবণ্যবতী নদীর তীর থেকে বুধবার ভোর ৫টা ১০মিনিটে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব) সদস্যরা। তার কাছ থেকে জব্দ করা হয় গুলিসহ অবৈধ অস্ত্র।
রিজেন্ট কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর থেকেই প্রতারক সাহেদ আত্মগোপনে ছিলেন। বোরকা পরে নারী সেজে বাংলাদেশ থেকে
পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। সীমান্ত নদী ইছামতি পারাপারে নৌকার অপেক্ষায় বোরকা পরে পাগল বেশে শুয়ে ছিলেন ড্রেনে। আটকের পর সেখান থেকে গাড়িতে করে সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে আনা হয় সাহেদকে। সকাল ৮টার দিকে হেলিকপ্টার যোগে র্যাবের একটি বিশেষ টিম তাকে নিয়ে যায় ঢাকায়। ফলে নৌকা চড়ে নদী পার হয়ে আর কলকাতায় যাওয়া হলো না। হেলিকপ্টারে উড়ে ঢাকায় যেতে হলো সাহেদকে।
এ ব্যাপারে র্যাব কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, প্রতারক সাহেদকে গ্রেফতার করতে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা তার দিকে নজর রাখতে শুরু করেছিল। বুধবার ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্তের শাখরা কোমরপুর এলাকা দিয়ে বোরখা পরে নারী বেশে নৌকায় করে নদী পার হওয়ার পরিকল্পনা করেছিল সাহেদ। কিন্তু সীমান্ত নদী পার হওয়ার আগেই র্যাবের টিম তাকে গ্রেফতার করে। এঘটনায় সাতক্ষীরার দেবহাটা থানায় সাহেদের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র আইনে একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ওই র্যাব কর্মকর্তা।