নেপালকে হারিয়ে ১৭ বছর পর সুপার এইটে উঠেছে বাংলাদেশ। মোস্তাফিজ-সাকিবের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২১ রানের বড় জয় পেয়েছে টাইগাররা। এরপর মাঝে অনেকগুলো আসর খেললেও গ্রুপপর্ব পার করা হয়নি। এবার নেপালকে উড়িয়ে লম্বা সময়ের সেই আক্ষেপ মিটিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৭ বিশ্বকাপের পর আবারও সুপার এইটে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। ঈদের দিনে এই জয় দেশের জন্য বড় একটি উপহার।
নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ঈদুল আজহার আনন্দ দ্বিগুন করার কথা জানিয়েছিলেন অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। কথা রেখেছেন ক্রিকেটাররা। সুপার এইট নিশ্চিতের ম্যাচে নেপালকে…রানে হারিয়ে দেশবাসীকে দারুন এক ঈদ উপহার দিল নাজমুল শান্তর দল।
আজ সোমবার (১৭ জুন) কিংসটাউনের আর্নস ভেলে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৯.৩ .ওভারে ১০ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ১০৬ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে ১৯.২ ওভার সব উইকেট হারিয়ে ৮৫ রানে থামে নেপাল। ২১ রানের জয়ে শেষ আট নিশ্চিত করে বাংলাদেশ।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুটা ভালো হয়নি নেপালের। দলীয় ৯ রানের মাথায় তানজিম সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন কুশল। ৮ বলে ৪ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এর দুই বল পরই অনিল শাহকে ফেরান তানজিম। সাকিবের বল তুলে মারতে গিয়ে শান্তর হাতে ধরা পড়েন এই ব্যাটার। আউটের আগে করেন ২ বলে শূণ্য রান।
এরপর অধিনায়ক রোহিত পাউডেল বিদায় নেন দ্রুতই। সাকিবের বলে রিশাদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ৬ বল খেললেও ১ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। এরপর আঘাত হানেন আরেক পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। দলীয় ২৪ রানে তিনি ফেরান আসিফ শেখকে। ১৪ বলে ১৭ করে ফেরেন এই ব্যাটার।
এরপরই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। কুশল মাল্লা ও দিপেন্দ্র সিংহ এর ব্যাটে ভর করে দারুন জবাব দেয় নেপাল। এই দুই ব্যাটারের ৫২ রানের জুটিতে জয়ের আশা জাগায় নেপাল। তবে, ৭৬ রানের মাথায় মুস্তাফিজের কল্যাণে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কুশল। ৪০ বলে ২৭ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এরপর লেজের সারির ব্যাটারদের নিয়ে চেষ্টা করলেও দলকে জেতাতে পারেননি দিপেন্দ্র। ৩১ বলে ২৫ রান করেন সাজঘরে ফেরেন তিনি।
এর আগে, এই ম্যাচের উইকেট কেমন হতে পারে, সেই বিষয়ে ভালোই ধারণা ছিল নেপালের। তাইতো টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত অধিনায়ক রোহিত পাউডেলের। আর নেপালের সেই সাজানো ফাঁদে পা দেয় বাংলাদেশ। প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন ওপেনার তানজিদ তামিম। সোমপাল কামির প্রথম বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মারতে চেয়েছিলেন তামিম। টাইমিংয়ে গড়বড়ে বল যায়নি বেশিদূর। ক্যাচ ধরেন কামি নিজেই। আগের ম্যাচে দারুন শুরু এনে দেওয়া তামিম এই ম্যাচে ফিরলেন গোল্ডেন ডাক মেরে।
এরপর অধিনায়ক শান্ত এসেও পারেননি চাপ সামাল দিতে। উল্টো ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে দলের চাপ বাড়িয়ে ফেরেন সাজঘরে। ৫ বলে ৪ রান করে আইরির বলে বোল্ড হন তিনি। লিটন জীবন পেয়েও জীবন লম্বা করতে পারলেন না। পঞ্চম ওভারে কামিকে পুল করতে গিয়ে বল আকাশে তুলে দেন লিটন। ১২ বলে ১০ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
আর লামিচানের ঘূর্ণিতে সুইপ শট খেলতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন তাওহিদ। ৭ বলে ৯ রান করেন তিনি। সবমিলিয়ে পাওয়ার প্লেতে ৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। পরবর্তীতে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসান চাপ সামালের চেষ্টা করলেও তাদের জুটি বড় হয়নি।
দলীয় ৫২ রানের মাথায় ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় মাহমুদউল্লাহকে। সাকিবের শট মিড অফে দাঁড়ানো ফিল্ডারের হাতে গেলেও দৌড় দেন তিনি। অপর প্রান্তে দাঁড়ানো মাহমুদউল্লাহও ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে যান। তাতেই ভুল হলো। সাকিব বল ফিল্ডারের হাতে থাকায় ফিরে যান, কিন্তু ক্রিজের মাঝামাঝি চলে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ পারেননি। রানআউট হন তিনি। দারুণ ইনিংসের আভাস দেওয়া মাহমুদউল্লাহ ফেরেন ১৩ রানে।
এরপর উইকেটের মিছিলে যোগ দেন সাকিব নিজে। গত ম্যাচে ৬৪ রানের ইনিংস খেললেও এই ম্যাচে ২২ বলে ১৭ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। রোহিতের ঘূর্ণিতে আটকা পড়েন তিনি। পিচ করেই হাল্ক বাঁক খেয়ে আঘাত করে সাকিবের পায়ে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি। এরপর শেষদিকে জাকের আলী-রিশাদ হোসেনরা চেষ্টা করলেও বড় সংগ্রহ গড়তে পারেননি।
খুলনা গেজেট/এএজে/এমএম