খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলল ২৫০, বাংলাদেশ পেল ৫ উইকেট

নেকাব না খোলায় পরীক্ষা নেয়া হয়নি ইবি ছাত্রীর

গে‌জেট ডেস্ক

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিভাগীয় সেমিস্টার ফাইনালের ভাইভায় নেকাব না খোলায় এক ছাত্রীকে ভাইভায় অংশ নিতে না দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার ভাইভায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।

বিভাগটির এক সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ ডিসেম্বর বিভাগটির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের ভাইভায় নেকাব পরে অংশ নেয় এক ছাত্রী। এ সময় ভাইভা বোর্ডের শিক্ষকরা তার পরিচয় নিশ্চিতের জন্য নেকাব খুলতে বলেন। এ সময় তিনি নেকাব খুলতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রয়োজনে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাকে ভাইভা বোর্ডের সকল সদস্যদের সামনে নেকাব খুলতে বলেন শিক্ষকরা। পরে নেকাব না খোলায় তার ভাইভা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান শিক্ষকরা।

ওই শিক্ষার্থী জানান, নেকাব না খোলায় সেদিন অন্য সবার ভাইভা নিলেও তার ভাইভা নেয়া হয়নি। পরে নেকাব খুলে ভাইভায় অংশ নিলে আবারো তার ভাইভা গ্রহণ করা হবে বলে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে ওই শিক্ষার্থী পুরুষ শিক্ষকদের সামনে নেকাব খুলতে অসম্মতি জানানোয় এখনো পর্যন্ত তার ভাইভা নেয়া হয়নি।

ঘটনার দিন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগে অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি শিমুল রায়, পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা ও বিভাগের শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে বিভাগীয় শিক্ষক ও ভাইভা বোর্ডের সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তাকে ভাইভায় নেকাব খোলার জন্য রিকোয়েস্ট করেছি। তাকে বুজিয়েছি যে- দেখো আমরা তোমার ভাইভা নিচ্ছি তোমাকে আপডেট করার জন্য। চার বছর পর তুমি এভাবে চাকরির ভাইভাতে গেলে রিটেনে ভালো করলেও তোমার চাকরি হবে না।’ যখন সে রাজি হয়নি তখন আমরা পরীক্ষা কমিটির সভাপতির নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে ভাইভা থেকে বের করে দিয়েছি। এর পরে আমরা কয়েক দফায় তার সাথে কথা বলেছি কিন্তু সে তার অবস্থান থেকে ফিরে আসেনি।’

পরীক্ষা কমিটির সভাপতি উম্মে সালমা লুনা বলেন, ‘ভাইভা বোর্ডে আমরা তাকে বলেছিলাম সে যে আমাদের স্টুডেন্ট তা প্রমাণ করার জন্য। কিন্তু তিনি তা প্রমাণ করতে পারেননি। নারী শিক্ষিকা দ্বারা পরিচয় নিশ্চিতের ব্যাপারে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বোর্ডের অন্য শিক্ষকরা অবজেকশন জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, ‘এভাবে করলে তাহলে আমরা মার্ক দিব না।’

বিভাগটির সভাপতি শিমুল রায় বলেন, ‘এর আগে লিখিত পরীক্ষায় আমরা তাকে ফিমেল টিচার দ্বারা রিকগনাইজ করেছিলাম। ভাইভাতেও ফিমেল টিচার ছিলেন কিন্তু সবসময় তো থাকে না, সেক্ষেত্রে আমরা কী করবো? সে জায়গা থেকে আমরা তাকে রিকোয়েস্ট করছিলাম। কিন্তু সে তার অবস্থানে অনড় থাকায় তার ভাইভা নেয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ব ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ইসলামে নেকাব পরা ফরজ নয়। কিন্তু যেহেতু চেহারাটা গুরুত্বপূর্ণ সেক্ষেত্রে নেকাব করা উত্তম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মন্ডল বলেন, ‘কেউ তার ধর্মীয় জায়গা থেকে নেকাব মেইনটেইন করতে চাইলে তাকে সে স্বাধীনতা দেয়া উচিত। বিভাগের পরীক্ষা ও ভাইভাতে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া মূখ্য বিষয়। সেক্ষেত্রে নারী শিক্ষকদের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করে ছাত্রীদের পরীক্ষা ও ভাইভাতে অংশগ্রহণ করতে দেয়া উচিৎ।

ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরীন বলেন, ‘ধর্মীয় বিশ্বাসের যায়গা থেকে নেকাব করে তাহলে শিক্ষিকাদের দ্বারা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পরীক্ষা ও ভাইভাতে সুযোগ দেয়া যায়। তবে ভাইভাতে যেহেতু আই কন্টাক্ট গুরুত্বপূর্ণ সেক্ষেত্রে মুখ খুলে অংশ নেয়া ভালো কিন্তু তাদের জোর করা যাবে না। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিষয়টি আমি যেহেতু জানি না, সেক্ষেত্রে তা জেনে এবিষয়ে কথা বলবো।’

এ বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘এই কাজটি উচিৎ হয়নি। আমাদের সামনেও অনেক সময় এরকম শিক্ষার্থীরা থাকে আমরা সবসময়ই নারী শিক্ষকের মাধমে তাদের আইডেনটিফাই করেছি। ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে গেলে তাদের (শিক্ষকদের) পেনাল্টি হতে পারে।

খুলনা গেজেট/ এএজে

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!