আজ মধ্যরাতে হাজারো জেলে মোংলা পশুর নদীর চীলা মোহনা থেকে একত্রে নৌকা ও শুটকি তৈরির উপকরণ নিয়ে সাগর পারের দুর্গম চর অঞ্চল ও সমুদ্রের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
ঝড়-জলোচ্ছাস আর ভিনদেশী জেলেদের আগ্রাসনের শংকা মাথায় নিয়ে সুন্দরবনের দুবলার চরাঞ্চলে শুটকী মৌসুমকে ঘিরে সমুদ্র যাত্রা শুরু করেছে সমুদ্রগামী জেলেরা।
এ শুটকী মৌসুমকে ঘিরে এ বছরও সুন্দরবনের দুবলা চরাঞ্চলে অন্তত ৩০ হাজার জেলে-ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের সমাঘম ঘটবে বলে আশা করছে বনবিভাগ।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, এবার দুবলার শুটকিসহ পুরো সুন্দরবন বিভাগ থেকে ছয় কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির জন্য এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগরের দুবলা, আলোরকোল, মেহের আলী এবং শ্যালার চরসহ বেশকয়েকটি চরে তারা পরিদর্শন সহ স্থান নির্ধারন করেছেন তারা।
এদিকে সুন্দরবন এলাকায় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় এবার কিছুটা সময় পিছিয়ে শুরু হয়েছে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণের মৌসুম। আগামী চার মাস মোংলা, রামপাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশালসহ সুন্দরবন উপকূলের হাজারও জেলে মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির জন্য সাগরপাড়ে অস্থায়ী বসতি গড়ে তুলবে। এছাড়া বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলে ও মৎস্যজীবীরাও পৌছাবেন দুবলার চরাঞ্চলে।
মৌসুমের শুরুতেই রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে বন বিভাগ। মোংলা থেকে নদী পথে দুবলা জেলে পল্লীর দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। সুন্দরবন সংলগ্ন এ পল্লীর সব কর্মকান্ড জেলে ও মৎস্যজীবিদের ঘিরে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ১৩ টি মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র নিয়ে গঠিত দুবলা জেলে পল্লী।
গত ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশ প্রজনন মৌশুম তাই ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এখানে দেশীয় জেলেরা সাগরে বা সাগরের গহীনে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখলেও ভারতীয় জেলো কিন্ত বসে ছিলনা। তারা ভারতীয় সীমানা পেড়িয়ে বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে শত শত ফিশিং ট্রালার এদেশের ইলিশ ধরে নিয়েছে। তারপরেও দেশীয় জেলেরা শুটকী আহরনের জন্য সমুদ্রে যাত্রা করতে যাচ্ছেন ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে।
চলতি মৌসুমে জেলেরা যাতে সাগরে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার ও শুঁটকি তৈরি করতে পারে সেজন্য প্রশাসনকে নজরদারি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী জেলে ও মহাজনেরা।
কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা সদর দফতর) অপারেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার শেখ মেজবাহ উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, সুন্দরবন এবং সাগর এলাকায় সব সময় দস্যু দমন বনজ সম্পদ ও বন্যপ্রানী সংরক্ষনে অভিযান অব্যাহত থাকে। তবে সাগরে শীতকালীন মৎস্য আহরণের জন্য যাত্রা করা জেলেরা যাতে নির্ভিগ্নে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে সেজন্য মোংলা থেকে দুবলার চর পর্যন্ত কোস্টগার্ডের টহল দল তাদের সাথে থাকবে এবং শুঁটকি প্রক্রিয়া করণের জন্য জেলেদের বাড়তি নিরাপত্তা দিতে কঠোর থাকবে।
প্রতি বছর শীত মৌসুমে সুন্দরবনের গহীণে সাগর পাড়ের দুবলা, মেহের আলীর চর, আলোরকোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেল বাড়িয়া, ছোট আম বাড়িয়া, বড় আম বাড়িয়া, মানিক খালী, কবর খালী, চাপড়া খালীর চর, কোকিলমনি ও হলদা খালীর চরে হাজার হাজার জেলে ও মৎস্যজীবি জড়ো হয়। এসব চরে অবস্থান নিয়ে জেলেরা সমুদ্র মোহনায় মৎস্য আহরণ করে। পাশাপাশি জেলেরা সেখানে নিজেদের থাকা ও শুঁটকি তৈরির জন্য অস্থায়ী ঘর তৈরি করে। জেলেরা সমুদ্র মোহনায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকারের করে শুঁটকি করার পর তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও বাজার জাত করা