নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রয়োজনীয় সব আইন সংস্কার করার প্রস্তাব করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সোমবার (১৩ জুন) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের চরিত্র, গঠন কেমন হবে তা নিয়ে সরকারের কাছে সংবিধান কিংবা আইন পরিবর্তনের প্রস্তাব করতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কারণ সংবিধান কিংবা আইন পাথরে খোদাই করে লেখা নয়।
ইসির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা চাই যেটা সবাই চায়, দেশবাসী যেটা চায়-আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক হয়। এই বিষয়গুলো একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের মাধ্যমে যেন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সেই বিষয়ে কতগুলো প্রস্তাব করেছি। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- নির্বাচনকালীন সরকার তার চরিত্র কী হবে, আচরণ কী হবে, গঠন কী রকম হবে। তবে এই ধরনের বিষয়গুলো সম্পর্কে আমরা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ইসিকে তুলে দেইনি। আমরা বলেছি, যেহেতু সবার প্রত্যাশা বা উদ্বেগের জায়গা, সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নির্বাচন কমিশন যেভাবে মনে করে, একটা নির্বাচনকালীন সরকারের আচরণ কী রকম হওয়া উচিত, তাদের চিন্তা ভাবনা প্রসূত পরামর্শ সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দিতে পারে। প্রয়োজনীয় যাবতীয় আইন সংস্কার করার প্রস্তাব করতে পারে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা বলেছি লেভেল প্লেয়িং ফ্লিড নিশ্চিত করতে হবে। এখন যে নিয়ন্ত্রণ, এমপি বা মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতে পারেন, এতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হয় বলে অনেকের ধারণা এবং তা বাস্তবসম্মত। কাজেই এটাকে পরিবর্তন করার সুযোগ তারা নেবেন কি না, প্রস্তাব করবেন কি না, সেটা বিবেচনা করে দেখতে পারে। তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা যেন সৃষ্টি না হয়, বিশেষ করে নির্বাচনে গণমাধ্যম এবং দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা যেন অবাধে ভোটের তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন সেই কথা বলেছি আমরা। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে আইন সংশোধনের কথাও বলেছি। এছাড়া ভোটের দিন আগের মতো ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া বা বন্ধ করে দেওয়া যেন না হয়, কেন্দ্রভিত্তিক ফল যেন অনতিবিলম্বে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়, সেই কথা বলেছি।
টিআইবির প্রধান নির্বাহী বলেন, আমরা চাই সার্বিকভাবে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যেন হয়। এই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন যে প্রক্রিয়া (বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপ) শুরু করেছে, তারা সবার সঙ্গে আলোচনা করবে, দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করবে; যেহেতু আলোচনা করবে; আমি বলেছি যে সরকারের আচরণ কী হবে, তা যেন স্থির করতে পারেন।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়েও কথা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই যন্ত্র ব্যবহারের কারিগরি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে কোনো ক্রটি যেন না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া সবার কাছে যেন গ্রহণযোগ্যতা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
কমিশন সংবিধান বা আইন পরিবর্তনের কোনো প্রস্তাব করতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা অবশ্যই পারে। পারবে না এমন কোনো কথা নেই। সুষ্ঠু নির্বাচনের অর্পিত যে দায়িত্ব, নিজস্ব বিশ্লেষণে যদি তারা মনে করে, কোথাও কোনো ক্ষেত্রে আইনি সংস্কার প্রয়োজন, কোনো আইন কিন্তু পাথরে খোদাই করে লেখা নয়। সংবিধান কিন্তু পাথরে খোদাই করে লেখা নয়। সংবিধান ও আইন এখন যে অবস্থায় এসেছে সেটা কিন্তু পরিবর্তনের মাধ্যমেই এসেছে। ইসির যদি মনে হয় সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আইনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, তাহলে সেটা তারা করতে পারেন। এখন তারা করবেন কি না সেটা পরের বিষয়।
খুলনা গেজেট/ এস আই