নাছিমা বেগম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বাক্ষরজ্ঞান। জামিলা বেগম অষ্টম শ্রেণি পাস। তাঁরা দুজনেই গৃহিণী। দু’জনেই এবার নেমেছেন নির্বাচনী লড়াইয়ে। চালনা পৌর নির্বাচনে সংরক্ষিত ৩ নম্বর ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁরা। সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডে ওই পদের প্রার্থীদের একজন অঞ্জনা সরকার স্নাতক (এমএ) পাস।
খুলনার চালনা পৌরসভা নির্বাচনে ৩টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া ১০ জনের মধ্যে এই তিনজনও রয়েছেন। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামা অনুসারে, এই ১০ জনের অধিকাংশেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসির নিচে, পেশা গৃহিণী।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৩৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে স্নাতকোত্তর মাত্র পাঁচজন। ১১ জনই অষ্টম শ্রেণি, স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন তিনজন এবং একজন চতুর্থ শ্রেণি পাস। এইচএসসি পাস ছয়জন এবং মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থী রয়েছেন ১০ জন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেওয়া তাঁদের হলফনামা ঘেঁটে এ তথ্য জানা গেছে।
সংরক্ষিত ১ নম্বর ওয়ার্ডে আমোদিনী রায়, অঞ্জনা সরকারসহ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে উচ্চমাধ্যমিক পাস কনিকা রাণী বৈরাগী ও তিনজন অষ্টম শ্রেণি পাস। পাঁচজনের মধ্যে আমোদিনী রায় বর্তমান সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর, বাকিরা গৃহিণী।
সংরক্ষিত ২ নম্বর ওয়ার্ডের দুই প্রার্থী মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিক পাস মঞ্জু রাণী ধর বর্তমান সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর। হাছিনা বেগম মাধ্যমিক পাস। পেশায় মৎস্যঘের ব্যবসায়ী। সংরক্ষিত ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজনের মধ্যে একজন এসএসসি পাস, একজন স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ও একজন অষ্টম শ্রেণি পাস। এরমধ্যে অষ্টম শ্রেণি পাস জামিলা বেগম বর্তমান নারী কাউন্সিলর, বাকিরা গৃহিণী।
চালনা পৌরসভা নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মাহামুদ হোসেন এ বিষয়ে খুলনা গেজেটকে জানান, ‘কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, আয়ের উৎস জনগণ জানতে পারবেন। ভোটাররাই সিদ্ধান্ত নেবেন, তাঁরা কাকে নির্বাচিত করবেন।’
এদিকে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আইয়ুব কাজী ও নিত্যানন্দ রায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। তাঁদের পেশা ব্যবসা। এ দু‘জনই আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় চালনা পৌরসভা নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে নয়টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন ২৭ জন। তাঁদের মধ্যে ওই দুই জনসহ নয়জনই স্কুলের গণ্ডি পার হতে পারেননি। এ ছাড়া স্নাতকোত্তর চারজন প্রার্থী। ওই ২৭ জনের হলফনামা অনুসারে, প্রার্থীদের মধ্যে কৃষিকাজ করেন ১৪ জন, ব্যবসায়ী আছেন সাতজন, তিনজন চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী এবং ক্ষুদ্রব্যবসা করেন তিনজন প্রার্থী।
স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ১৩ জন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ৮ জন। বাকি প্রার্থীদের রাজনৈতিক পরিচয় নেই।
চালনা বাজার চিলড্রেন পার্ক স্কুলের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) সাগর সেন খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘একজন শিক্ষিত ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে তিনি এলাকার শিক্ষা, সামাজিক ও সব ধরনের উন্নয়নে অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন। কিন্তু কাউন্সিলর প্রার্থীদের শিক্ষার হাল যদি এমন হয়, তবে সেটি হতাশার। তবে একাডেমিক পড়াশোনা না থাকলেও তাঁরা যদি শিক্ষার গুরুত্বটা বোঝেন, স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হন, তাহলেও তাঁরা ভূমিকা রাখতে পারেন।’
খুলনা গেজেট / এআর