মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে আজ বৃহস্পতিবার জার্মানি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধরত ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গেও। তাদের বৈঠকে যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হবে।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর মিউনিখ সফরের কর্মসূচির তথ্য তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এ সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্তত সাত দেশ ও তিন আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ নেতার সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটিই হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম বিদেশ সফর। ৬০তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের সভাপতি রাষ্ট্রদূত ড. ক্রিস্টোফ হিউজেনের আমন্ত্রণে এ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন তিনি। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নীতি নিয়ে এ সম্মেলন ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি মিউনিখের হোটেল বায়েরিশার হফে অনুষ্ঠিত হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মিউনিখ সম্মেলনে প্রায় ৬০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা, মিডিয়া, সুশীলসমাজ, সরকারি এবং বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রায় ৫০০ প্রতিনিধি থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের উদ্বোধনী আয়োজনে এবং ক্লাইমেট ফিন্যান্স-সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন। জার্মানপ্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত একটি নাগরিক সংবর্ধনায়ও যোগ দেবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার সফরসঙ্গী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ আজ সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে যাত্রা করে সন্ধ্যায় মিউনিখ পৌঁছাবেন। সফর শেষে প্রধানমন্ত্রীর ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উদ্দেশে মিউনিখ ত্যাগ করে ১৯ ফেব্রুয়ারি পৌঁছার কথা রয়েছে।
ড. হাছান মাহমুদ জানান, মিউনিখ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজ, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুতে, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটি ফ্রেডরিকসেন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। পাশাপাশি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, জার্মানির আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী ভেনজা শুলজ, বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এক্সেল ভ্যান ট্রটসেনবার্গ এবং মেটার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স প্রেসিডেন্ট স্যার নিক ক্লেগের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে।
জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের পরিবর্তন কি না এ প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের অবস্থান হচ্ছে, আমরা সব সময় যুদ্ধের বিরুদ্ধে এবং আমরা চাই পৃথিবীতে শান্তি ও স্থিতি বিরাজ করুক। জেলেনস্কি যেহেতু অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছেন। সেখানে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনাই হবে।’
জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের কারণে রাশিয়ার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হবে কি না এ প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে প্রভাব পড়ার প্রশ্নই আসে না।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়া আমাদের অত্যন্ত বন্ধুপ্রতিম দেশ। রাশিয়া মুক্তিযুদ্ধে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, মুক্তিযুদ্ধের পর আমাদের দেশ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এমনকি চট্টগ্রাম বন্দরে মাইন অপসারণ করার সময় রাশিয়ার একজন নাগরিকও মৃত্যুবরণ করেছে। সুতরাং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আমাদের অত্যন্ত উষ্ণ, ঐতিহাসিক এবং মুক্তিযুদ্ধের যে বন্ধনে আমরা আবদ্ধ হয়েছি, সে বন্ধন অনেক দৃঢ়। সুতরাং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের হেরফের হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।’
সংলাপের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি আনার মূলমন্ত্র নিয়ে ১৯৬৩ সাল থেকে জার্মানির মিউনিখে হয়ে আসা এ সম্মেলনের ২০১৭ ও ২০১৯ সালের আসরে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর জার্মানি সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ। সেই সঙ্গে একক দেশ হিসেবে জার্মানি বিশ্বে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং ইউরোপে সর্ববৃহৎ রপ্তানি বাজার। এ ছাড়া তারা বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবিলায় জার্মানি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এবং মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় এ আয়োজনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইউরোপীয় নেতাদের পাশাপাশি জার্মান নেতাদের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সম্মেলনের ক্লাইমেট সিকিউরিটি-সংক্রান্ত প্যানেল এবং পররাষ্ট্র সচিব পিস অপারেশনসবিষয়ক আরেকটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেবেন।