সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, আর্থিক অসচ্ছলতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাংশের অদক্ষতা, অবহেলা ও পক্ষপাতিত্ব, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা, নিরাপত্তাহীনতা এবং করোনা সংকটের কারণে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বুধবার টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যথাসময়ে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় ধর্ষণ প্রতিরোধ করাও সম্ভব হচ্ছে না।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্য সংকটের পাশাপাশি নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাও বহু গুণ বেড়েছে। নির্যাতিত নারীদের আইনি সহয়তা দেয়, এমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছরের মার্চ-এপ্রিল মাস নাগাদ নারী নির্যাতন ৭০ শতাংশ বেড়েছে। গত জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন ১৯২ জন। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে পারিবারিক নির্যাতনে প্রাণ হারিয়েছেন ২৩৫ জন নারী।’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইনে দায়ের হওয়া মামলায় দোষীদের সাজা খুব কম হয়, এমন অভিযোগ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সরকারি নয়টি ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের মধ্যে একটির হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১১ হাজার নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার মধ্যে মাত্র এক শতাংশ ভিকটিম ন্যায়বিচার পেয়েছেন।’
বর্তমানে প্রায় দেড় হাজার মামলা উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে বিচার কার্যক্রম বন্ধ আছে, উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, ‘বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ করার মাধ্যমে বিচারহীনতার ঝুঁকি সৃষ্টি করা হচ্ছে। সাধারণ ভুক্তভোগী যেখানে স্থানীয় পর্যায়ে থানা-পুলিশ করতেই অনভ্যস্ত কিংবা হয়রানির শিকার হন, সেখানে উচ্চ আদালত পর্যন্ত মামলা পরিচালনা করা তাদের কল্পনারও অতীত। তাই অনেকেই আইনের এই মারপ্যাঁচ ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। দুঃখজনকভাবে এক ধরনের ধারণার জন্ম হয়েছে যে, সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ করতে পারলে নতুন কোনো ঘটনার ডামাডোলে মানুষ একসময় ভুলে যাবে এবং শাস্তি এড়ানো সম্ভব হবে।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ‘তনু হত্যাকাণ্ড, নুসরাত হত্যাকাণ্ড, ফেনীর সোনাগাজীর ঘটনা, সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনার পেছনে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অদক্ষতা বা পক্ষপাতিত্ব, ক্ষমতা, প্রভাব ও রাজনৈতিক পরিচয়ের যে অশুভ আঁতাত দেশবাসী লক্ষ করেছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। ঢাকার কুর্মিটোলার ঘটনায় বিচার দ্রুতসময়ের মধ্যে হলেও বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ঘটনা আলোচনা থেকে হারিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এর বিচার প্রক্রিয়া নিয়েই এখন সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে একটি বিভৎস ঘটনা আরেকটি বিভৎস ঘটনার আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতির বাতাবরণে প্রকৃত অর্থে দুর্বৃত্তরাই উৎসাহ পাচ্ছে।’
খুলনা গেজেট/এনএম