খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে
‘দেনার দায়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে’

নানা সংকটে বিপর্যয়ের মুখে খুলনার পোল্ট্রি শিল্প

আজিজুর রহমান

খুলনা বিভাগের ১০টি জেলায় এক সপ্তাহে ৩ কোটি ৫০ লাখ মুরগির বাচ্চা তৈরি হয়। একেকটি বাচ্চা উৎপাদনে গড়ে খরচ ১৫ থেকে ২০ টাকা। এক সপ্তাহ ধরে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একেকটি বাচ্চা চার থেকে পাঁচ টাকায় বিক্রি করছে। তাও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে না। ফলে সপ্তাহে কমপক্ষে এক কোটি মুরগির বাচ্চা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে পোল্ট্রি ফিশ ফিড শিল্প মালিক সমিতি।

চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি ও পাইকারী মুরগির বাজার ব্যবস্থা না থাকায় পোল্ট্রি শিল্প এখন বিপর্যয়ের দিকে নামছে। খামারের মালিকদের দাবি, একটি ডিম উৎপাদনে খরচ ছয় টাকার ওপরে। এখন ব্রয়লার মুরগির কেজি প্রতি উৎপাদন খরচ ৯০ টাকার কিছু বেশি। মালিকেরা বলছেন, দাম যখন বেড়ে যায়, তখন চাইলেই উৎপাদন বাড়িয়ে বাড়তি টাকা আয় করা যায় না। আবার যখন কমে যায়, তখন চাইলেও তাৎক্ষণিক উৎপাদন কমিয়ে ফেলা যায় না। ফলে লোকসান অবধারিত।

খুলনা পোল্ট্রি ফিশ ফিড শিল্প মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা জেলায় প্রতিদিন ৪ লাখ ডিমের প্রয়োজন হয়, আর মাংস লাগে প্রায় ৩০ মেট্রিক টন। যা চাহিদার তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি উৎপাদন হয়।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, যুগোপযোগী নীতিমালা এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদারকির অভাবসহ বিভিন্ন কারণে খুলনাঞ্চলে সম্ভাবনাময় পোল্ট্রি শিল্প এখন ধ্বংসের মুখোমুখি। একদিকে খাবারসহ অন্যান্য দ্রব্যের উচ্চমূল্য এবং মুরগি ও ডিমের মূল্য পড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও ওঠাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ক্রমাগত লোকসানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেছেন।

পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিটি ডিম উৎপাদনে সব মিলিয়ে ব্যয় হয় ৬ টাকা থেকে সাড়ে ৬ টাকার ওপরে, সেখানে পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা থেকে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। প্রতিটি ডিমে খামারী ১ টাকা ২৫ পয়সা থেকে দেড় টাকা লোকসান গুণছেন। অনুরূপভাবে এক কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খরচ হয় ১১০ টাকা থেকে ১১৫ টাকা, পক্ষান্তরে পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১শ’ টাকা। প্রতি কেজিতে লোকসান হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এতে উৎপাদন খরচও উঠছে না। এভাবে লোকসান গুণতে গুণতে ক্ষুদ্র ও মাঝারী খামারী ও ব্যবসায়ীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া ক্রমাগত লোকসানের কারনে অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়ে দেনার দায়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদিকে একটি ডিমের মূল্য খামারী সর্বোচ্চ পাঁচ টাকা পেলেও ভোক্তাকে সেটি ক্রয় করতে হচ্ছে আট থেকে নয় টাকায়। এ সব কারণে খুলনা মহানগরীতে ন্যায্য মূল্যে ডিম ও মুরগি বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন জরুরী হয়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খুলনা বিভাগে মোট ১০ হাজার ৫৫৭টি পোল্ট্রি খামারের মধ্যে খুলনা জেলায় ৪ হাজার ৯৫২টি ছোট-বড় খামার আছে। এছাড়া বাগেরহাটে ৭০০টি, সাতক্ষীরায় ৫৫৫টি, নড়াইলে ২৯৫টি, যশোরে ১০১২টি, ঝিনাইদহে ৭০০টি, মাগুরায় ৪৫০টি, কুষ্টিয়ায় ১ হাজার ৯৮৬টি, মেহেরপুরে ৫৫৫ টি ও চুয়াডাঙ্গায় ৩৫২টি ছোট-বড় পোল্ট্রির খামার চালু আছে।

প্রতিদিন খুলনা বিভাগে ৫২ লাখ ১০ হাজার ডিম উৎপাদন, ব্রয়লারসহ অন্যান্য মুরগির মাংস ১২৫ মেট্রিক টন উৎপাদন ও খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে ১ হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন। বিনিয়োগকৃত টাকার পরিমাণ ৫ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা।

খুলনার পারবটিয়াঘাটা গ্রামের খামারি সুধাম মণ্ডল বলেন, বাজারে চাহিদা না থাকায় খামারে দুদিনে প্রায় ৯০০টি লেয়ার জাতের মুরগি মারা যায়। ফলে চলতি সপ্তাহে তার ১ লাখ ২৭ টাকা লোকসান হয়েছে।

সব মিলিয়ে বড় সংকটে পড়েছেন খামার মালিকেরা। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি খামারি। ডুমুরিয়া উপজেলার সুভাষ চন্দ্র বসু নামের একজন পোল্ট্রি খামার মালিক জানান, এক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ৮৮ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, মুরগি কেউ নিতেই চায় না। যার কাছ থেকে যা পাই, সেই দামে বিক্রি করি।

পোল্ট্রি ফিশ ফিড শিল্প মালিক সমিতির মহাসচিব ও খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী এসএম সোহরাব হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘নানা সংকট, ষড়যন্ত্র, যুগোপযোগী নীতিমালার অভাব, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের কাক্ষিত সুযোগ-সুবিধা, চিন্তাধারার অভাব ও চাহিদার আলোকে উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় ক্রমেই এ খাতগুলো ধ্বংসের দ্বারপ্রাপ্তে এসে দাঁড়িয়েছে। খামারী ও ব্যবসায়ীদের ক্রমাগত লোকসানে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের দুঃখ, বেদনা ও হাহাকারে কেউ এগিয়ে আসে না, খামারীদের মধ্যে এখন বোবাকান্না চলছে।’

পোল্ট্রি খামারীরা ডিম ও মাংস উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করলেও চাহিদার অতিরিক্ত ডিম ও মাংস রপ্তানির কোন ব্যবস্থা না থাকায় লেয়ার, ব্রয়লার খামারী ও ব্যবসায়ীরা চরম বিপদের মধ্যে রয়েছেন বলে সোহরাব হোসেন দাবি করেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের কাছে ১৫ দফা দাবি-সম্বলিত প্রস্তাব পেশ করেছেন পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন এ ব্যাপারে সমাধান হলে এ শিল্পের ৪০ শতাংশ সমস্যা থাকবে না।

 

খুলনা গেজেট / এআর




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!