খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ কার্তিক, ১৪৩১ | ২২ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনায় এক দিনে ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ১০
  খা‌লিশপু‌রের হা‌সিবুর হত্যায় ২১ জনের যাবজ্জীবন, খালাস ৫

নববধূকে রেখে ২০ বছর বয়সে মুক্তি বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন আঃ মাজেদ

নিতিশ সানা, কয়রা

দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় খুলনার কয়রায়ও সকল শ্রেণী পেশার মানুষ মুক্তির আকাঙ্খায় হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল, ঝাপিয়ে পড়েছিল পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন মরণ যুদ্ধে। তন্মাধ্যে অন্যতম এক যোদ্ধার একান্ত স্বাক্ষাতকারে জানা যায় যুদ্ধে যোগ দেওয়ার কাহিনী।

উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের পূর্ব মঠবাড়ি গ্রামের ২০ বছরের দুরন্ত বালক আব্দুল মাজেদ আলী গাজী পিতার সাথে বায়না ধরে প্রথম খুলনাতে যান। তার পিতা ওমর আলী গাজী খুলনাতে কাঠের ব্যবসা করতেন।পিতার সাথে খুলনায় কাঠ বিক্রি করে লঞ্চে বাড়ি ফিরছিলেন, চালনা বাজার লঞ্চঘাটে লঞ্চ রাখলে সেখান থেকে একটি সুন্দরী মেয়েকে পাকহানাদার বাহিনীরা তুলে নিয়ে যাচ্ছিলো। তখন মেয়েটির বাবা বাধা দিলে পাকহানাদার বাহিনী মেয়েটির পিতাকে বুকে লাথি মেরে নদীতে ফেলে দেন। দুরন্ত বালক আঃ মাজেদ সেদিন ঠিক করেন যুদ্ধে যাবেন, দেশকে শত্রুমুক্ত করবেন। বাড়ি ফিরে পিতা মাতার কাছ থেকে থেকে অনুমতি নিয়ে কলমা দিয়ে রাখা ছোট্ট নববধু (৬ বছর বয়সি) আসমা খাতুনকে রেখে চলে যান।

উপজেলার ঝিলিয়াঘাটা শহীদ নারায়ন ক্যাম্পে সেখানে এয়াকুব ও রুহুল আমিন এর নেতৃত্বে ২৬ দিন ট্রেনিং শেষে যোগদেন ঐ ক্যাম্পের কমান্ডার শামসুর রহমান এর সাথে। কিছুদিন পর শহীদ নারায়ণ ক্যাম্পের কমান্ডার করা হয় কেরামতকে। তিনি পরে চলে যান খুলনার বাগমারায় মেজার জয়নাল আবেদীন এর কাছে। সেখানে তার নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশ নেন। একদিন বাগমারায় যুদ্ধচলাকালীন জয়নাল আবেদিনের হাতের আঙ্গুলে গুলি লাগলে অনেকে পিছুন থেকে পাালিয়ে যান। তবুও তিনি যুদ্ধ করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার বাম পাশে থাকা একজন যোদ্ধার মাথায় গুলি লেগে মাথার খুলি উল্টে যায়। তখন তিনি বাঁচার আশা ছেড়ে দেন। তবুও যুদ্ধ চালিয়েছে মৃত্যুকে ভয় না করে। দেশের জন্য যুদ্ধ করতে থাকেন তিনি। মুক্তি বাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে খুলনা বড় মাঠে আত্মসমার্পন করে পাকহানাদার বাহিনী । এরপর খুলনাতে ক্যাম্প তৈরি করে রাস্তায় রাস্তায় এক মাস ডিউটি করে খুলনার ফুলতলা দামুদার মাঠে মিলিশিয়া ক্যাম্পে অস্ত্র জমা দিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪ বছর পরে কলমা দিয়ে রাখা স্ত্রীকে বাড়ি নিয়ে আসেন। শুরু করেন সাংসারিক জীবন। আব্দুল মাজেদ গাজীর বয়স এখন ৭০ বছর। বর্তমানে তার ২ ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে আসাদুজ্জামান গাজীর খুলনাতে মুদি দোকান রয়েছে ও ছোট ছেলে আশিকুজ্জামানের উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের হায়াতখালি বাজারে চায়ের দোকান রয়েছে। আর মেয়ে বিউটি আক্তারকে বিয়ে দিয়েছেন।

তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, ছেলে মেয়েদের চেষ্টা করেও শিক্ষিত করতে পারেননি, তবে সরকারি সম্মাননা পেয়ে তার পরিবার নিয়ে ভালো আছেন।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!