আজ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় দফায় ৩০টি আসনের ভোটগ্রহণ চলছে। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে সবার নজর নন্দীগ্রামে। কারণ এখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রার্থী হয়েছেন। মমতার প্রতিদ্বন্দ্বী তারই একসময়ের অনুগত শুভেন্দু অধিকারী। অন্যদিকে, বাম-কংগ্রেস-ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) হয়ে এই কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন সিপিএমের মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। সবমিলিয়ে আসনটি হাই-প্রোফাইল আসনে পরিণত হয়েছে। তাই বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই এই আসনটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নন্দীগ্রামে কে বিজয়ী হবেন বা এই আসনটি কার? এই প্রশ্নের সম্ভাব্য উত্তর দেওয়া কঠিন। কারণ, এখানে তৃণমূলের দাপট থাকলেও নন্দীগ্রাম অধিকারী পরিবারের বড় ঘাঁটি হিসেবেও বিবেচিত হয়ে থাকে। এখানে শুভেন্দুর পক্ষে প্রচারণা চালাতে নরেন্দ্র মোদি থেকে অমিত শাহ, মিঠুন চক্রবর্তী থেকে স্মৃতি ইরানি পর্যন্ত এসেছিলেন। তবে, জনসংযোগের কোনো ঘাটতি রাখেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কলকাতার টেলিভিশনের সিরিয়ালের পরিচিত মুখ ও টালিগঞ্জের তারকারা এখানে ‘দিদির দূত’ হয়ে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতিতে পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল এই নন্দীগ্রামের। দীর্ঘদিনের বাম ক্ষমতার পরিবর্তনে নন্দীগ্রাম ছিল অনুঘটক। আর গত ১০ বছরেরও বেশি সময় নন্দীগ্রামে তৃণমূলের হাল ধরে রেখেছিল শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু, সেই শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে এবং বিজেপির হয়েই নির্বাচন করছেন। অন্যদিকে শুভেন্দুকে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েই নিজেই এখানকার প্রার্থী হয়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়৷ সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পাল্টা চ্যালেঞ্জও দিয়েছেন শুভেন্দু। এখন দেখার বিষয় পাল্টাপাল্টি চ্যালেঞ্জে কে বিজয়ী হন। এজন্য অবশ্য আগামী ২ মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সেদিনই জানা যাবে নন্দীগ্রাম কার, শুভেন্দুর নাকি মমতার?
এর আগে, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দু জিতেছিলেন। অবশ্য তখন তিনি তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন, আর এখন বিজেপির। ২০১৬ সালে তিনি মোট ভোট পেয়েছিলেন এক লাখ ৩৪ হাজার ৬২৩টি৷ দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন সিপিআইয়ের আবদুল কবির শেখ। তার প্রাপ্ত ভোট ছিল ৫৩ হাজার ৩৯৩টি। শুভেন্দু অধিকারী সেই নির্বাচনে সিপিআইয়ের আবদুল কবির শেখকে ৮১ হাজার ২৩০ ভোটে পরাজিত করেছিলেন।
প্রথম দফার মতো এবারও নির্বাচনের সময় রাজ্যের নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে নির্বাচন কমিশন এবং তারা রাজ্যে বেশ কয়েক কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেছে।
নির্বাচন কমিশনকে উদ্ধৃত করে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছিল, দ্বিতীয় দফায় যেসব বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে, সেগুলোকে ‘স্পর্শকাতর’ ঘোষণা করা হয়েছে। এই দফায় বাঁকুড়া (দ্বিতীয় পর্ব), পূর্ব মেদিনীপুর (দ্বিতীয় পর্ব), পশ্চিম মেদিনীপুর (দ্বিতীয় পর্ব) এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায় (দ্বিতীয় পর্ব) মোট ৬৫১ কোম্পানি সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স (সিএপিএফ) মোতায়েন করা হবে।
পূর্ব মেদিনীপুরে ১৯৯ কোম্পানি, পশ্চিম মেদিনীপুরের ২১০ কোম্পানি, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৭০ কোম্পানি ও বাঁকুড়ায় ৭২ কোম্পানি সিএএফএফ মোতায়েন করা হবে।
দ্বিতীয় দফায় ১৭১ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন ৭৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫৪৯ জন ভোটার। তারা ৩০টি আসনের ১০ হাজার ৬২০টি কেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিজেপি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা নির্বাচনী প্রচারণায় রাজ্যে ‘প্রকৃত পরিবর্তন’ আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দলটি প্রথমবারের মতো এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে দারুণভাবে আশাবাদী। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাদের চমক জাগানিয়া ফল বিজেপির আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।
এক নির্বাচনী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী মোদি দাবি করেছেন, খেলা এবার শেষ হবে। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী স্লোগান ‘খেলা হবে’ নিয়ে বিদ্রূপ করে এ কথা বলেছিলেন।
অন্যদিকে, তৃণমূল তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছে ‘অভ্যন্তরীণ বনাম বহিরাগত’ বিতর্ককে কেন্দ্র করে। দলটি অভিযোগ করেছে, বিজেপি ক্ষমতায় এলে রাজ্যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করবে।
নন্দীগ্রামে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে আহত হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, অন্যান্য রাজ্য থেকে গুন্ডারা নন্দীগ্রামে এসেছে। এ ছাড়াও তিনি নির্বাচন কমিশনকে বিজেপির হয়ে কাজ করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন।
শুভেন্দু অধিকারীসহ তৃণমূলের অনেক বিধায়ক ও দলীয় কর্মীরা বিজেপিতে যোগ দেওয়া সত্ত্বেও রাজ্যে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী মমতা।
খুলনা গেজেট/এনএম