খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড

নগরঘাট ফেরিঘাট : টোল ১২৫ টাকা, আদায় করা হচ্ছে ১১০০

একরামুল হোসেন লিপু

খুলনা সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) ‘র আওতাধীন নগরঘাট ফেরিঘাট হতে পারাপারকারী যানবাহনে অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সওজ’র টোল আদায়ের তালিকায় যানবাহন পারাপারে টোলের হার সর্বোচ্চ  ১২৫ টাকা হলেও আদায় করা হচ্ছে ১১’শ টাকা।
ফেরি পারাপারকারী যানবাহনের ড্রাইভারকে দেওয়া হয় না টোল আদায়ের রশিদ। এ নিয়ে প্রায়ইশঃ যানবাহনের মালিক,  ড্রাইভার এবং টোল আদায়কারীদের সাথে বাগবিতন্ডা লেগে থাকে।
অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ঘাটের ইজারাদারকে জরিমানা করার পরও থেমে নেই অতিরিক্ত টোল আদায়। এছাড়াও অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট খান মাসুম বিল্লাহ মোবাইল কোর্ট পরিচালনার  মাধ্যমেও ঘাটের ইজারদারকে কয়েকবার জরিমানা করেছেন।
সওজ সূত্রে জানা যায়,  নগরঘাট ফেরিঘাটের ইজারার দায়িত্ব পেয়েছে মেসার্স ফারদিন স্টোন বাজার নামের একটি প্রতিষ্ঠান।  প্রতিষ্ঠানের মালিক দিঘলিয়া সদর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ফিরোজ মোল্যা। গত বছরের  ৮ সেপ্টেম্বর ইজারাদার  প্রতিষ্ঠানকে ২০২২-২০২৩ আর্থিক বছর হতে ২০২৪-২০২৫  আর্থিক বছর পর্যন্ত ৩ বছরের জন্য ফেরিঘাটের টোল আদায়ের দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি দর দিয়েছিল ভ্যাট ও আয়করসহ এক কোটি ৫৬ লক্ষ ১০ হাজার ৮৮৯ টাকা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ইজারা পাওয়ার পর টোল আদায়ে বেপরোয়া হয়ে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীরা। সওজের  দেওয়া যানবাহন পারাপারের  টোল আদায়ের তালিকার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা ইচ্ছামতো টোল আদায় শুরু করেন।
সওজ ‘র টোল আদায়ের যে তালিকা রয়েছে, তাতে দেখা যায় ট্রেইলার (বোঝাই/ খালি) ভারী যানবাহনের ক্ষেত্রে ১২৫ টাকা, হেবি ট্রাক (বোঝাই /খালি) ১০০ টাকা, মিডিয়াম ট্রাক (বোঝাই/খালি) ৫০ টাকা। বড় বাস (বোঝাই /খালি) ৪৫ টাকা, মিনি ট্রাক (বোঝাই/খালি) ৪০ টাকা, পাওয়ার ট্রিলার, ট্রাক্টর ৩০ টাকা, মিনি বাস/কোস্টার (বোঝাই/খালি) ২৫ টাকা, মাইক্রোবাস (বোঝাই/খালি) ২০ টাকা, ফোর হুইল চালিত যানবাহন (বোঝাই / খালি), ২০ টাকা, সিডান কার (বোঝাই /খালি) ১৫ টাকা, ৩/৪ চাকার মোটরাইজড যান ( বোঝাই/খালি)৫ টাকা, মোটরসাইকেল ৫ টাকা, রিক্সা, ভ্যান, বাইসাইকেল, ঠেলাগাড়ি বোঝাই /খালি) ৫ টাকা।
সরেজমিনে ফেরি পারাপারকারী যানবাহনের ড্রাইভার এবং ফেরির দু’পাড়ে পারাপারের নিমিত্বে অপেক্ষমান যানবাহনের ড্রাইভারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় , হেবি গাড়ি( ট্রাক) খালি কিংবা বোঝায় ড্রাইভারদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৯০০ টাকা, মিডিয়াম ট্রাক প্রতি ৫০০ টাকা, বড় বাস প্রতি ১২০০ টাকা, মাছ বোঝাই ট্রাক ১১’ শ টাকা,  মিনি ট্রাক প্রতি ৮০০ টাকা, পাওয়ার ট্রিলার /ট্রাক্টর  ৪০০ টাকা, পিকআপ, প্রাইভেট, জিপ ৪০০ টাকা, মাছ বহনকারী নসিমন ৩০০ টাকা, ইজিবাইক খালি ৩০ টাকা মাল বোঝায় ৫০ টাকা এভাবে প্রত্যেক যানবাহনের কাছ থেকে তালিকার বাইরে  অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে।
টোল আদায়ের নির্ধারিত রঙের টিকিট দেওয়ার বিধান থাকলেও অধিকাংশ যানবাহনের টোল আদায়ের ক্ষেত্রে  টিকিট/রশিদ দেওয়া হয় না বলে যানবাহন ড্রাইভারদের অভিযোগ। অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগে মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা এবং সওজ কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনে এলে তখন কিছু সময়ের জন্য টোল আদায়ে রশিদ /টিকিট দেওয়া হলেও সেটাও তালিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়।
ফেরিঘাটের রেলিগেট প্রান্তে টোল আদায়ের ঘরে ইজারাদারের নিয়োগকৃত ষাটোর্ধ গণি মিয়া ৫ টাকার সাদা রংয়ের এবং ৩০ টাকার লাল রংয়ের দুই প্রকার টিকিটের মুড়ি বই নিয়ে বসে থাকেন প্রশাসনকে দেখানোর জন্য। টোল আদায়ের কাউন্টার থেকে কাউকে টিকিট দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।  ঘরের পাশেই টাঙ্গানো রয়েছে খুলনা সওজ কর্তৃক টোল আদায়ের তালিকা।
এদিকে নগরঘাট ফেরিঘাটের ইজারাদার মোঃ ফিরোজ মোল্যা এবং খুলনা জেলা পরিষদের মালিকানাধীন নগরঘাট/রেলিগেট খেয়াঘাট সাব-লীজ নেওয়া ইজারাদার বাবু খানের মধ্যে ঘাট সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিরোধ শুরু হয়েছে। বিষয়টির মীমাংসা না হলে এ নিয়ে যে কোনো সময় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়।
নগরঘাট খেয়াঘাটটি ১ বৈশাখ ১৪৩০ হতে এক বছরের জন্য ১৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ৫৬০ টাকায় সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ায় মোঃ শহিদুল ইসলামকে পারানী আদায়ের ইজারা প্রদান করে খুলনা জেলা পরিষদের পক্ষে প্রধান নির্বাহী  কর্মকর্তা (উপসচিব) এম এম মাহমুদুর রহমান।  যার স্বারক নম্বরঃ জেপখু/আট- ৩২৬/২০২২-২৩/৮২ তারিখঃ১৯.০৩.২৩
নগরঘাট ফেরিঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়  খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনিসুজ্জামান মাসুদের কাছে। তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, নগরঘাট ফেরিঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ অবগত হওয়ার পর টোল আদায়ের ইজারাদারকে মৌখিকভাবে কয়েকবার সতর্ক করেছি। বেশ কয়েকবার গিয়েছি। আমরা যখন যাই দেখি সব ঠিকঠাক আছে। চলে আসার পর আবারও সেই একই অভিযোগ, অতিরিক্ত টোল আদায়।
তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য আমরা ইতিপূর্বে  তিন সদস্যের একটি  তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম। রবিবার (১৩ আগস্ট) সরজমিনে ফেরিঘাটে গিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে ঘাটের ইজারাদারকে ডেকে শেষবারের মতো সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও যদি অতিরিক্ত টোল আদায় করা হলে তাহলে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখবো। সে ক্ষেত্রে তার ইজারা বাতিলও হতে পারে। এছাড়া স্থানীয় মাননীয় সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী স্যারও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন। তিনিও অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর।
দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মাসুম বিল্লাহ খুলনা গেজেটকে বলেন, ফেরিঘাটে যখনই আমরা অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ পেয়েছি ততবারই এর বিরুদ্ধে  আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ভ্রাম্যমান কোর্ট পরিচালনা করে ঘাটের ইজারাদার কে জরিমানা করেছি। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। জেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেছি। আমাদের এখতিয়ার নেই ইজারা বাতিল করার। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে যতোটুকু করার আমরা সেটুকু করে যাচ্ছি।
অভিযোগের বিষয়ে ঘাটের ইজারাদার মোল্লা ফিরোজ হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, ফেরিঘাটের ইজারা পাওয়ার পর থেকে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। স্থানীয় এক সাংবাদিক এই ষড়যন্ত্রের মূল হোতা। গতবারে ঘাটের ইজারার একটি অংশ ছিলো উক্ত সাংবাদিকের। এবারে ঐ পক্ষ ঘাটের ইজারা  না পাওয়ায় আমার বিরুদ্ধে  নানা ধরনের প্রোপগান্ডা ছড়াচ্ছে। কারণে-অকারণে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিচ্ছে। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করছে।  উক্ত সাংবাদিক খুলনা জেলা পরিষদের মালিকানাধীন নগরঘাট/ রেলিগেট খেয়াঘাট আগামী এক বছরের জন্য ইজারা পেয়েছেন। অথচ তিনি  জেলা পরিষদের ইজারার ৩ নং শর্ত ভঙ্গ করে  তৃতীয় পক্ষের নিকট ঘাটটি সাব-লীজ প্রদান করেছেন।
তিনি বলেন, আমি সরকারের ভ্যাটসহ ১ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা দিয়ে তিন বছরের জন্য ফেরিঘাটের  ইজারা নিয়েছি। কিন্তু ফেরির  টোল আদায় তো আর আমি  নিজে করিনা। আমার চারজন লোক নিয়োগ দেওয়া আছে। তারা টোল আদায় আদায় করে। আমার নির্দেশনা রয়েছে অতিরিক্ত টোল আদায় না করার। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের ৬ জানুয়ারী নগরঘাট ভৈরব নদীর তীরে পৈত্রিক ভিটা দেখতে আসেন। তিনি আসার ১৫ দিন পূর্ব থেকে  তার আগমনসংক্রান্ত সকল গাড়ি পারাপারের ফেরির জ্বালানির তেল খরচ আমি নিজে বহন করেছি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ইতিপূর্বে যারা ইজারাদার ছিলেন তারা কি অতিরিক্ত তোল আদায় করতেন না ? তারা কি কখনো টোল আদায়ের টিকিট দিয়েছেন?




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!