খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ
বাজার দর থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্য কম

চাল সংগ্রহ সন্তোষজনক হলেও ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

আশরাফুল ইসলাম নূর

উপকূলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও করোনা মহামারী, মিলারদের অবৈধ মজুদ ও কৃষকদের আপৎকালীন সংরক্ষণের কারণে খুলনাতে এবার ধান সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হল না, তবে চাল সংগ্রহ সন্তোষজনক। বাজার দর থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্য কম হওয়ায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার। সরকারি গুদামে সংরক্ষিত এসব খাদ্য শস্য দিয়ে জনগণের আপৎকালীন খাদ্য সহায়তা, উৎসবকালীন সহায়তা, কাবিখা, কাবিটা, নানাপ্রকল্প বাস্তবায়ন এবং রেশনিং সরবরারহ করা হয়। ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব পড়তে পারে বলে শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রমতে, এবার ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৫ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। আর চালের ৯৮ শতাংশ সংগ্রহ করা হয়েছে। সীমিত পরিসরে সংগ্রহ অভিযান চলবে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

যদিও শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) ‘ডিজিটাল রাইস প্রকিউরমেন্ট অ্যাপস’র মাধ্যমে খুলনা জেলায় শতভাগ চাল প্রকিউরমেন্ট কার্যক্রমের সফল সমাপনী অনুষ্ঠান বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে জুম অ্যাপ’র মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে সংযুক্ত থাকবেন খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে সংযুক্ত থাকবেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ ও বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।

খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান বলেন, ‘ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ১৫১ টন; যার ৩৫ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। সরকার নির্ধারিত প্রতি মণ ধানের মূল্য ১০৪০টাকা আর বর্তমান বাজার মূল্য এগারোশ’ টাকা। সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজারে দাম বেশি হওয়ায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ শতাংশ চাল সংগৃহীত হয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সীমিত পরিসরে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান চলবে।’ এবার সিদ্ধ চাউল ১৭ হাজার ৯৪৮ টন ও আতপ চাউল দুই হাজার ৭৭৩ টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল খুলনায়।

তিনি আরও জানান, বিভাগের অন্যান্য জেলার তুলনায় খুলনায় সংগ্রহের আশাব্যঞ্জক। ধান ও চালের বাজার মাঝে-মধ্যেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল। যে কারণে অনেক কৃষক তাদের ফসল বেচতে দোটানায় ছিলেন। করোনার প্রাদুর্ভাব কবে কাটবে তা নিয়ে সৃষ্ট আপৎকালীন আশঙ্কায়ও অনেক কৃষক ধান হাতছাড়া করেননি।

খাদ্য বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, ধানের নায্যমূল্য নিশ্চিত করতে এবছর সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়; আর মিলারদের কাছ থেকে চাল। দেশের নিরাপত্তা বিবেচনায় রেখে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও অঞ্চলভিত্তিক এ কার্যক্রম ২৬ এপ্রিল শুরু হয়। চলে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত, পরে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। সরকারি গুদামে এ খাদ্য শস্য মজুদ রাখা হয়- যা দিয়ে জনগণের আপৎকালীন খাদ্য সহায়তা, উৎসবকালীন সহায়তা, কাবিখা, কাবিটা, নানাপ্রকল্প বাস্তবায়ন এবং রেশনিং সরবরারহ করা হয়। মহামারী করোনার প্রাদুর্ভাবে কর্মহীন জনগোষ্ঠির খাদ্য সহায়তা ও বেঁড়িবাধ ভাঙনের উপকুলবাসীর সহযোগিতার জন্যে এবছরের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ছিল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য বিভাগ এবার সারাদেশে কৃষকের কাছ থেকে ৮ লাখ টন ধান এবং মিলারদের কাছ থেকে ১১ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।

খুলনা আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্র জানান, বিভাগের ১০ জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৬ হাজার ৮৪৫ টন, সিদ্ধ চাল এক লাখ ৩১ হাজার ৯২৮ টন এবং আতপ চাল ৮ হাজার ৭৯১ টন। প্রসঙ্গত্ব, সরাসরি কৃষকদের থেকে ধান সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গত ১০ মে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় মোবাইল অ্যাপস ‘কৃষকের হাসি’র উদ্বোধন করা হয়েছিল। এবার প্রতি কেজি ধান ২৬টাকা, সিদ্ধ চাল ৩৬ টাকা, আতপ চাল ৩৫ টাকা দরে ক্রয় করে খাদ্য বিভাগ।

খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ খুলনার সাধারণ সম্পাদক কাজী জাবেদ খালিদ জানান, কৃষি জমিতে অপরিকল্পিত শহরায়ন ও শিল্পায়নের কারণের খাদ্য শস্য উৎপাদনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে। এরপর প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা তো রয়েছেই। এরমধ্যে এবার করোনাকালীন সংকট। এসব কারণে খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে।

খুলনা গেজেট/এআইএন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!