জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশজুড়ে পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ‘ধর্মঘটে’ আটকে পড়ার প্রতিবাদে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের স্নাতক শ্রেণির ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা।
আজ শুক্রবার পরীক্ষার্থীদের আকস্মিক এ কর্মসূচিতে যোগ দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত সাত ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণেচ্ছুরা। পরে একে একে তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা জানান সড়ক ব্যবহারকারী জনসাধারণও।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহণ শ্রমিক-মালিকদের ডাকা ধর্মঘটে কলেজ ভর্তিচ্ছু এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণেচ্ছুরা আজ সকাল থেকেই বিপাকে পড়েন।
যানবাহন সংকটে আটকে পড়া কলেজ ভর্তিচ্ছু এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণেচ্ছুরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে একপর্যায়ে নিজেরাই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে অবরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় তাঁরা প্রবেশপত্র হাতে নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
এতে মহাসড়কে ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং সড়কের দুপাশে আটকা পড়ে অসংখ্য যানবাহন।
মিরপুর বাঙলা কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আবরার হোসেন জানান, আজ ভোরে তিনি ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এসে কোনো গাড়ি পাননি। কোনো উপায় না পেয়ে তিনি রিকশায় করে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখতে পান তাঁর মতো অনেকেই মহাসড়কে যানবাহনের অপেক্ষায়।
একপর্যায়ে দীর্ঘ সময় অবস্থানের পর ক্ষোভে ফেটে পড়ে আবরার হোসেনের মতো ভর্তিচ্ছুরা মহাসড়ক অবরোধ শুরু করেন। পরে তাঁদের সঙ্গে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাড়াও সাধারণ যানবাহনে চলাচলকারীরা যোগ দেন।
এদিকে, আকস্মিক এ কর্মসূচিতে ব্যক্তিগত যানবাহনে করে ঢাকা যাওয়ার পথে শিমুলতলা আটকে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী তাসনিয়া রহমান।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তাসনিয়া রহমান জানান, তাঁর ব্যক্তিগত যানবাহন থাকলেও তিনি শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচিকে সমর্থন করেন। তাঁর ভাষায়, ব্যক্তিগত যানবাহনে করে কেউ পরীক্ষার হলে যেতে পারবে, আর পরিবহণ ধর্মঘটে কেউ আটকে থাকবে—এটা হতে পারে না।
যানবাহন সংকটের পাশাপাশি অবরোধের কবলে আটকে পড়ে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে উদ্দেশে ছোট ভাইকে নিয়ে মারাত্মক ভোগান্তির কবলে পড়েন রফসান আহমেদ নামের একজন ব্যবসায়ী।
রফসান আহমেদ বলেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সরকার যেমন হুট করে তেলের দাম বাড়িয়েছে, তেমনি পরিবহণ শ্রমিক-মালিকেরাও যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে ধর্মঘট ডেকে বসেছেন।
বাবুল মিয়া নামের একজন পরিবহণ মালিক জানান, করোনার ধাক্কায় গত প্রায় দুই বছরে তাঁরা নাজুক অবস্থায় পড়েছেন। তেলের দাম বাড়ায় একটি বাস থেকে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ২০০ টাকা আয় হওয়ার কথা থাকলেও, এখন আয় কমে নেমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪০০ টাকায়।
বাবুল মিয়া বলেন, ব্যাংকের কিস্তি, সরকারি ট্যাক্স-টোকেন, রাস্তার চাঁদা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাড়িভাড়া—সবকিছু মিলিয়ে জীবন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। যে কারণে যৌক্তিকভাবেই তাঁরা পরিবহণ ধর্মঘট ডেকেছেন। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সরকার ভাড়া বিন্যাস করলে এমন সংকট তৈরি হতো না। এর জন্য সরকারকেই দায়ী করেন তিনি।
এদিকে, আগামী ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। এক হাজার ৯০০ আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন তিন লাখ আট হাজার ৬০৬ জন। দূরদূরান্ত থেকে আসা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনেকেই পথে নেমে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মাইনুল ইসলাম জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সাভারে পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ‘ধর্মঘটে’ আটকে পড়ার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ সমূহের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ছাড়াও সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণেচ্ছুরা আটকে পড়েছেন। ধর্মঘটের প্রতিবাদে তাঁরা নিজেরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় সাধারণত ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহারকারীরা রাস্তায় আটকে পড়েছেন।
ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। এমনিতেই সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের রয়েছে, তার ওপর তাদের এ কর্মসূচি দুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।’
খুলনা গেজেট/ এস আই