ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, করোনা ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্ব অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত। বাংলাদেশকেও এর ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে।
এসব ধাক্কা কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ও রিজার্ভ বাড়ানোর চেষ্টার চলছে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলি টানেল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এর মত বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা প্রকাশ করে। কিন্তু সরকারের এই উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রামাঞ্চলের গরিব ও শ্রমজীবী মানুষ পাচ্ছে না। যাদের কারণে আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই প্রবাসী শ্রমিক,
গার্মেন্টস শ্রমিক ও গ্রামের কৃষক-ক্ষেতমজুররা এই উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শনিবার(৪ মার্চ) দুপুরে সাতক্ষীরা শহরের শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে অনুষ্ঠিত জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সাতক্ষীরা জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির আয়োজনে অনুষ্ঠিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন, সাতক্ষীরা জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি উপাধ্যক্ষ মহিবুল্লাহ মোড়ল।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরোর সদস্য ও সাতক্ষীরা- ১ আসনের সংসদ সদস্য এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এমপি, যশোর জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এড. আবু বক্কার সিদ্দিকী, যশোর জেলার সাধারণ সম্পাদক শবদুল হোসেন খান, কেন্দ্রীয় যুবমৈত্রীর সহ-সভাপতি অনুপ কুমার পিন্টু প্রমূখ। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, সাতক্ষীরা জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এড. ফাহিমুল হক কিসলু।
জনসভায় মেনন আরো বলেন, দফায় দফায় তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ এর দাম বাড়ানো হচ্ছে যার প্রভাব পড়ছে কৃষিক্ষেত্রে ও দ্রব্যমূল্যের উপর। কৃষি উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও তারা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। তাছাড়া কৃষিতে রয়েছে বাজার সিন্ডিকেট যারা রাতারাতি ইচ্ছেমত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করছে। দ্রব্যমূল্য ও বাজার ব্যবস্থায় নেই সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ।
বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি দীর্ঘদিন থেকে রাজপথে এবং সংসদে পূর্ণাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা ষাটোর্ধ্ব সকল নাগরিককে পেনশন স্কীম, খেতমজুরদের রেজিস্ট্রেশন ও সারা বছর কাজের দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে। সরকার ওএমএস, ১০ কেজি ও ৩০ কেজি চালের কার্ড চালু করলেও সেখানে চলছে দলীয়করণ ও দুর্নীতি। সেজন্য আমাদের দাবী সার্বজনীন রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
সভায় আরো বলা হয়, ১৪ দলীয় জোট সরকার ২০০৮ সালে সরকার গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় বাস্তবায়ন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করে। বিচারের রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির মৌলবাদী অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। যার মাধ্যমে তারা অর্থপাচার ও সাম্প্রদায়িক তৎপরতা চালাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করলেও তাদের রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ করেনি। প্রকারন্তরে হেফাজতে ইসলাম নামের সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে মাথানত করে আমাদের পাঠ্যপুস্তক থেকে অসাম্প্রদায়িক লেখাগুলোকে বাদ দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে সাম্প্রদায়িক করা হচ্ছে।
অপরদিকে ২০১৩-১৪ সালে জামায়াত ইসলাম দ্বারা সংঘঠিত হত্যাকান্ড ও নাশকতা মামলার বিচার এখনও পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ সাতক্ষীরাকে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষার জন্য এলাকার নদীগুলো রক্ষা ও জলাবদ্ধতা নিরসনে টিআরএম ব্যবস্থা চালুর জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। নদীগুলো কেটে ছোট খালে পরিণত করা হচ্ছে। যার ফলে জলাবদ্ধতা দূরীকরণ না হয়ে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ ও লুটপাটকারী দেশের সম্পত্তি দখল ও লুটপাট করে বিদেশে পাচার করছে। ফলে ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে। দিন দিন ধনী দরিদ্রের ব্যবধান বাড়ছে।
খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদ