সরকার ঘোষিত তেল ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও পরিবহণ ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে শনিবারও মোংলা বন্দরের পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটিতে আমদানি পন্য বন্দরের জেটি অভ্যন্তর থেকে বের না হলেও রপ্তানি যোগ্য পণ্য আসতে পারছে না বন্দরে। এছাড়া দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস না ছাড়ায় শিল্পাঞ্চলেও পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। সড়ক থেকে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় একেবারে ফাঁকা অবস্থায় রয়েছে মোংলা-খুলনা মহাসড়ক। ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় মোংলা বন্দর জেটি থেকে যেমন কোন পণ্য বের হচ্ছে না তেমনি ঢুকছেও না। তবে বন্দরের বহিঃনঙ্গর, হারবাড়িয়া ও জেটির অভ্যন্তরে পন্য খালাস-বোঝাই সকল ধরণের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
বন্দর সূত্রে জানায়, এমনিতেই সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার জেটি অভ্যন্তর থেকে পণ্য পরিবহণ বন্ধ থাকে। আমদানি পণ্য জেটি থেকে বের না হলেও রপ্তানি পরিবহণ ও গাড়ী চলাচল বন্ধ থাকায় জেটি থেকে পণ্য পরিবহণ বন্ধ রয়েছে। তবে ধর্মঘট লাগাতার চললে বা নৌ-পথের পরিবহন যদি বন্ধ রাখা হয় তবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে বন্দরের আমদানী-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা। সড়ক পথে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকলেও গত দুইদিন মোংলা বন্দরের বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বোঝাই স্বাভাবিক রয়েছে তবে নৌ-পথ নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহনে সেক্টরে একটি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে, দ্রুত এর সমাধান করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানায় বন্দরের ব্যবসায়ীরা।
এছাড়া ইপিজেডসহ শিল্প এলাকার বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতেও উৎপাদন স্বাভাবিক থাকলেও মূলত পণ্য পরিবহণ বন্ধ রয়েছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জরুরি পণ্য হিসেবে দুই একটি ভোজ্য তেল ও গ্যাসবাহী ট্রাক চলাচল করতে দেখা গেছে। বাকি অন্যান্য ফ্যাক্টরীগুলোর সামনে ট্রাক রেখে বেকার সময় পার করছেন চালক-হেলপাররা।
এছাড়া, ইপিজেডের বিভিন্ন ফ্যাক্টরির পণ্য মূলত মোংলা বন্দর ও বেনাপোল বন্দরসহ অন্যান্য বন্দর ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে ওই সকল বন্দর দিয়ে ইপিজেডের বিভিন্ন ফ্যাক্টরির আসা-যাওয়া কাঁচামাল ও পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে।
ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের খুলনা বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক আব্দুর রহিম দুদু বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধি হয়েছে কিন্ত পরিবহন মালিকরা যেমন ভাড়া বৃদ্ধি করতে পারেনি তেমনি শ্রমিকদেরও বেতন বাড়েনি। তাই তেলের দাম কমানো নতুবা ভাড়া বাড়ানোর দাবীতে শনিবারও সকল বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিক-শ্রমিকেরা। যত দিন পর্যন্ত তাদের সিদ্ধান্তে না পৌঁছায় ততদিন গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবহন সমিতির নেতৃবৃন্দ।
অন্যদিকে মোংলা বন্দরের শিপিং এজেন্ট ও ইষ্টিভিডরস এশোসিয়েশনের সদস্য এইচ এম দুলাল জানান, আমরা মোংলা বন্দরের ব্যবসায়ী কিন্ত মোংলা বন্দরের বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্যগুলো সারা দেশ ব্যাপি পরিবহনের মাধ্যমে চলে যায় এবং রপ্তানি যোগ্য পণ্য দেশে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে হয়। এখন পরিবহন সেক্টর যদি বন্ধ থাকে তবে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে বন্দরসহ ব্যবসায়ীরা। এছাড়া, সড়ক পথের পর যদি নৌ-পথেও পারিবহন বন্ধ হয়ে যায় তবে মোংলা বন্দরসহ দেশের অন্যান্য বন্দরের আমদানী-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দৈনিক কয়েক কোটি টাকা লোকসান গুণতে হবে এ ব্যবসায়ীদের বলে জানায় এ শিপিং এজেন্ট ব্যবসায়ী।
সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালেও পরিবহণ ভাড়া বাড়িয়ে নির্ধারণ না করে দেয়ায় শুক্রবার ভোর থেকে বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিক-শ্রমিকেরা। যার ফলে বন্দরসহ সারা দেশ এখন অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
খুলনা গেজেট/এনএম