ভুটানের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে জয়ী হয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন দেশটির রাজনৈতিক দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) শীর্ষ নেতা শেরিং তোবগে। নির্বাচনে ভুটানের পার্লামেন্টের দুই তৃতীয়াংশ আসনে জয় পেয়েছে পিডিপি।
৫৮ বছর বয়সী শেরিং তোবগে একাধারে রাজনীতিবিদ, পরিবেশ আন্দোলন নেতা এবং আইনজীবী। এর আগে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি।
হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের দেশ ভুটানের পার্লামেন্ট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির মোট আসন ৪৭টি। ৯ জানুয়ারি বুধবার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির নির্বাচন হয়েছে।
ভুটানের ইলেকশন কমিশনের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল ভুটান ব্রডকাস্টিং সার্ভিস জানিয়েছে, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ৪৭টি আসনের ৩০টিতে জয় পেয়েছে পিডিপি। বাকি ১৭টি আসনে জয় পেয়েছে ভুটান তেন্দ্রেল পার্টি।
শেরিং তোবগের পূর্বসূরী প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং এবং তার রাজনৈতিক দল দ্রুক নিয়ামরুপ শোগপা (ডিএনটি) কোনো আসন পায়নি।
ঐতিহ্যবাহী রাজতন্ত্র থেকে ২০০৮ সালে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় প্রবেশের পর বুধবার চতুর্থ পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়েছে দেশটিতে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভুটানের একটি ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট রয়েছে। একমাত্র এই দেশটিই সরকারিভাবে ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’ নামের একটি সূচক পরিচালনা করে। এই সূচকে দেশের জনগণের সুখী জীবনযাত্রার মান পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করা হয়।
তবে এবারের নির্বাচনী প্রচারাভিযান চালানোর সময় পিডিপি জোর দিয়েছে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন ইস্যুর ওপর। গত কয়েক মাস ধরে দেশটি রিজার্ভ সংকটে ভুগছে। দেশটির ইতিহাসে এর আগে এমন সংকট আরন আসেনি।
ভুটানের সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটির প্রতি আটজন মানুষের মধ্যে একজন খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এছাড়া কর্মহীনতা এবং বেকারত্বও দিন দিন বাড়ছে দেশটিতে।
৩৮ হাজার ৩৯৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের দেশ ভুটানের জনসংখ্যা ৭ লাখ ২৭ হাজার ১৪৫ জন, মোট ভোটার প্রায় ৫ লাখ। তাদের অধিকাংশই বুধবারের নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন।
৪৯ বছর বয়সী কারমা তাদের মধ্যেই একজন। রাজধানী থিম্পুর নিকটবর্তী শহর পুনাখার বাসিন্দা কারমা জানান, ‘ভুটানের জনগণের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং বেকরত্ব সংকটের অবসান। প্রচুর কর্মক্ষম মানুষ এখানে বেকার অবস্থায় রয়েছেন। চাকরি বা কর্মসংস্থান যাদের রয়েছে, তাদের উপার্জনও পরিবারের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর মতো যথেষ্ট নয়।’
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে ভুটানের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিদেশযাত্রার হার বাড়ছে। এক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দ অস্ট্রেলিয়া। অপেক্ষাকৃত বিত্তবান পরিবারের সন্তানদের এই বিদেশযাত্রার মূল লক্ষ্য সেখানে স্থায়ী হওয়া।
গত এক বছরে অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য দেশের জন্য ভুটান ত্যাগ করেছেন প্রায় ১৫ হাজার ভুটানি। পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় বছরে দেশটির মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশ বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
সূত্র : আল জাজিরা
খুলনা গেজেট/ এএজে