জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের বলেছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিন ধরনের নির্বাচন হয়েছে। কোথাও কোথাও ইলেকশন যেভাবেই হোক ফলাফল একটা পূর্ব নির্ধারিত ছিল এবং শিট বানিয়ে দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (০৫ মার্চ) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সরকারি দলের সদস্যরা ব্যাপকভাবে এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে থাকলে জিএম কাদের হেসে বলেন, এটা নাও হতে পারে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে জিএম কাদের বিগত নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য শুরু করতেই অধিবেশন কক্ষে হট্টগোল শুরু হয়।
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে নির্বাচন সংক্রান্ত বক্তব্যে এই হট্টগোল বাড়তে থাকে। সরকারি দলের সদস্যরা মাইক ছাড়াই নানা মন্তব্য করতে থাকেন। বিরোধী দল জাতীয় পাটির সদস্যরাও পাল্টা মন্তব্য করতে থাকেন। এই পরিস্থিতি সংসদ অধিবেশনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ সদস্যদের শান্ত হওয়ার জন্য একাধিকবার আহ্বান জানান। পরে জিএম কাদের বক্তব্য শেষ করেন।
এ সময় জিএম কাদের বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে তিন ধরনের ইলেকশন হয়েছে।
কোনো কোনো এলাকায় সবগুলো সুষ্ঠু ইলেকশন হয়েছে। সেখানে কোনো ডিস্টার্বেন্স হয়নি। সাধারণত প্রতিযোগিতাহীন ইলেকশন হয়েছে।
সেখানে কোনো শক্ত প্রার্থী ছিল না। সেখানে সরকারের সদিচ্ছা ছিল। শতভাগ সুষ্ঠু হয়েছে। তবে উপস্থিতি কম ছিল। আরেকটা হয়েছে ফ্রি স্টাইল। সেখানে মাসল পাওয়ার (পেশি শক্তি) এবং মানি অবাধে ব্যবহার করা হয়েছে। সেটার মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র দখল করা হয়েছে। বেশিরভাগ সময় এখানে সরকারি দল এবং বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী বা আমাদের প্রার্থীদের বাধা দিয়েছে। আরেকটা ছিল ইলেকশন যেভাবেই হোক ফলাফল একটা পূর্ব নির্ধারিত ছিল এবং শিট বানিয়ে দেয়া হয়েছে।
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, সব দল নির্বাচনে আসলে এবং বাধা ছাড়াই ভোট হলে ১৫ শতাংশ ভোট গ্রহণযোগ্য। আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ সব বড় দল নির্বাচনে অংশ নিলে এই মুহূর্তে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ভোট পড়বে। আওয়ামী লীগ বা বিএনপির মতো একটি দল না এলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা কঠিন। এতে মানুষ ভোটি দিতে আসে না।
তিনি আরো বলেন, যে প্রেক্ষাপটে ছিল তাতে ৪২ শতাংশ ভোট দিতে গেলে সব ভোটকেন্দ্রের সামনে ৮ ঘন্টা লাইন থাকার কথা। কিন্তু তা ছিল না।..এসময় সংসদ সদস্যরা হইচই শুরু করেন। জিএম কাদের বলেন, অনেকে বলেছেন ঘণ্টায় তিন চারটার বেশি ভোট হয়নি। আমি আমার কথা বলছি না। ধারণার কথা বলছি।
তিনি আরো বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান মোতাবেক ও প্রচলিত আইন অনুযায়ী বৈধ হিসাবে গণ্য করা যায়। আইন অনুযায়ী তা বৈধ হয়েছে। কেউ বেআইনি ঘোষণা করেনি। কিন্তু সিংহভাগ মানুষ মনে করে ভাল নির্বাচন হয়নি, সঠিকভাবে জনমতের প্রতিফলন হয়েছে বলে মনে করে না। আমি মনে করি আইন কানুন ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। যারা দেখার কথা তারা এড়িয়ে গেছেন অনেক সময় লঙ্ঘনে সহায়তা করেছে।
খুলনা গেজেট/কেডি