পদ্মাসেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কয়েক কোটি মানুষের একটি স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তাবায়ন হবে আগামী ২৫ জুন। ওইদিন সকাল ১০ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা বহুমুখী সেতুর উদ্বোধন করবেন। এরপরই যানবাহন চলাচলের জন্য পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মুক্ত করা হবে।
পদ্মাসেতু নিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আশা, আকাঙ্খা ও প্রত্যাশা পূরণের বিষয় তুলে ধরে খুলনা গেজেটকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও মেটাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. সোবহান মিয়া।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের একটি রোল মডেল। ২০০৮ সালের পর দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলার কয়েক কোটি মানুষ পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ২৫ জুন সেতুটির উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের একটি প্রত্যাশা পূরণ হবে। আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবহণ খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। সারাদেশের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষের মানসিকতার ইতিবাচক পরিববর্তন ঘটবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। ফেরিতে যাতায়াতে পরিবহণের অতিরিক্ত খরচ বেঁচে যাবে, যার প্রভাবে জিডিপিতেও পরিবর্তন আসবে।
এ অঞ্চলের চিংড়ি চাষি এবং মৎস্য ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্তরা সরাসরি সুফল পাবেন। সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলে রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারীরা যেমন পদ্মার এপারের উৎপাদিত কৃষি পণ্য সুলভ মূল্যে ক্রয় করতে পারবেন, তেমনি সতেজ শাক সবজিও খেতে পারবেন। পাশাপাশি এ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবেন।
তিনি বলেন, পদ্মার এপারের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভর্তি পরীক্ষার সময় পদ্মার ওপারের পরীক্ষার্থীদের মানসিক বিপর্যয় এবং বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো। অনেক ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষার সময় এবং ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছাতে ব্যর্থ হতো। ফেরীতে আটকে পড়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। পদ্মা সেতুর ফলে দেশের যে কোন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
শিক্ষা ও গবেষণার কাজে পদ্মার ওপারের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ শিক্ষকরা যাতায়াতে অতিরিক্ত সময়ের কথা ভেবে গবেষণার কাজে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসতে দ্বিধাবোধ করতেন। পদ্মা সেতু চালুর ফলে তাদের সে মানসিকতায় পরিবর্তন আনায়ন করবে। এক কথায় পদ্মা সেতু সারাদেশের সড়ক যোগাযোগের ন্যায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যেও এক প্রকার সেতুবন্ধন তৈরীতে সহায়তা করবে।
পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক এবং মহাসড়কগুলোর উপর প্রচুর চাপ বাড়বে। দুর্ঘটনা রোধকল্পে তিনি সড়ক বিভাজনসহ সড়ক এবং মহাসড়কগুলিকে ৪ লেনে উন্নীতকরণের জোর দাবি জানান।