খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১০ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  রিসেট বাটন বলতে ৭১ এর গর্বিত ইতিহাস নয় দূর্নীতিগ্রস্থ রাজনীতি মুছে নতুন সূচনার কথা বলেছেন ড. ইউনূস : প্রেস উইং
  পিরোজপুরে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে শিশুসহ ৮ জন নিহত

দেয়াড়ায় গণকবর সন্ধানের এক যুগেও নির্মিত হয়নি স্মৃতিস্তম্ভ

একরামুল হোসেন লিপু, দিঘলিয়া

দিঘলিয়ার দেয়াড়া গণকবরে ১৯৭১ সালের পাকবাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের হাতে নৃশংসভাবে নিহত শহীদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন দিঘলিয়া উপজেলা প্রশাসন। আজ শনিবার (২৬ মার্চ) সকালে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুল আলম পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় দিঘলিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ আহসানউল্লাহ চৌধূরী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আলী রেজা বাচা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ শিরীন ময়নাসহ এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণার পর পাকবাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসররা সারাদেশে নৃশংসতা এবং গণহত্যা শুরু করে। ১৬ ডিসেম্বর চুড়ান্ত বিজয়ের ৪ মাস পূর্বে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার ভৈরব নদীর কূল ঘেঁষে গড়ে ওঠা দেয়াড়া গ্রামের ৬০ জন নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে গলা কেটে এবং গুলি করে হত্যা করে পাকবাহিনী। দেশ স্বাধীনের ৩৯ বছর পর ২০১০ সালের ৬ জানুয়ারি ঐ গ্রামে গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। দেয়াড়া গণকবরের সন্ধান পাওয়ার একযুগ অতিবাহিত হলেও সেখানে সরকারিভাবে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিস্তম্ভ।

এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের ডাক্তার শেখ মতিয়ার রহমানের ছেলে মুক্তযোদ্ধা শেখ আবদার রহমান তাঁর সহযোগীদের নিয়ে দেয়াড়া গ্রামে সংগঠিত হচ্ছিলেন। কিন্তু এ সংবাদ চলে যায় পাক হানাদার বাহিনীর ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকারদের কানে। রাজাকার ও হানাদাররা এমন খবর পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবদার হোসেন এবং প্রয়াত ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি শেখ আবজাল হোসেনের বাবা ডাক্তার শেখ মতিয়ার রহমান, তাঁর চাচাতো ভাই শেখ রহমত আলী পিরু ও মোঃ আলী শেখ, ভাগনে শেখ ইসমাইল হোসেন, জামাই আব্দুল জলিল ও তাঁর ভাই আব্দুল বারেক, হোসেন সরদার, মোঃ আজিম হোসেন, সাত্তার শেখসহ ওই গ্রামের ৬১ জনকে ধরে নিয়ে যায়।

ধৃতদের কাছে এ সময় পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধা ও তৎকালীন ছাত্রনেতা শেখ আবজাল হোসেনের সন্ধান চায়। ধৃত ব্যক্তিরা তাঁর সন্ধান দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ঘটনার দিন সকালে আনুমানিক ৯ টার দিকে প্রকাশ্যে দিবালোকে ওই গ্রামের পৃথক ৩টি স্থানে আটককৃতদের গুলি ও জবাই করে হত্যা করা হয়। এসময় ২২ জনের লাশ পৃথক ৩টি স্থানে গণকবর দেওয়া হয়। বাকী লাশগুলো পাশ্ববর্তী ভৈরব নদীতে ভাঁসিয়ে দেয় হানাদার বাহিনীরা। সৌভাগ্যক্রমে সৈয়দ আবুল বাশার নামে এক ব্যক্তি একাধিক আঘাতপ্রাপ্ত হয়েও প্রাণে বেঁচে যান।

২০১০ সালে এ সব গণকবর আবিষ্কৃত হলে ওই বছরের ৬ জানুয়ারি প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা কাজী শাহনেওয়াজের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান বাচ্চু, গাজী আজগর আলী, শেখ আবজাল হোসেন, সাংবাদিক শেখ মনিরুল ইসলাম, মোঃ মকবুল হোসেনসহ স্থানীয়দের সহযোগীতায় উল্লেখিত ৩টি গণকবর থেকে দেহাবশেষ সংগ্রহ করা হয়। এরপর সেগুলো একত্রিত করে দেয়াড়া মুক্তিযোদ্ধা কাজী শাহনেওয়াজের দান করা জমিতে সমাহিত করা হয়। ওই গণকবরে ২২ জন শহীদ সমাহিত আছেন।

দেয়াড়া গণহত্যাকান্ডের স্থান থেকে একমাত্র জীবিত মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল বাশার বর্তমানে বয়সের ভারে নতজানু হয়ে অনাহারে অর্ধাহারে জীবন কাটাচ্ছেন। ৮৮ বছর বয়সী ৮ সন্তানের জনক সৈয়দ আবুল বাশার তাঁর পিঠে রাজাকারদের ১৯ টি ধারালো অস্ত্রের কোঁপ এবং বোগলের নীচে একটি গুলির ক্ষত চিহ্ন আজও বহন করে চলেছেন। অথচ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তাঁর নাম নেই।

এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে সৈয়দ আবুল বাশার অশ্রুজল চোখে ৫০ বছর আগের সেই ভয়ংকর এবং নৃশংস হত্যাকান্ডের বর্ণনা করেন।

দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুল আলম খুলনা গেজেটকে বলেন, সরকার সারা দেশে গণকবর এবং মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে দেয়াড়া গণকবরে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬শতাংশ সরকারি খাস জায়গা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!