খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ৪ দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি দল
  পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৪৫

দেড় বছর পর সচল হচ্ছে খুলনার ক্রিসেন্টসহ ৫ পাটকলের চাকা

গেজেট ডেস্ক

খুলনার ক্রিসেন্ট জুটমিলসহ দেশের পাঁচটি পাটকল আগামী বছরের শুরুতেই সচল হতে যাচ্ছে। দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর আবারও ঘুরবে যন্ত্রপাতি। উৎপাদন শুরু হবে কারখানায়। বেসরকারি খাতে নতুন করে যোগ দেবেন শ্রমিক। তৈরি হবে কর্মসংস্থান। বাড়বে কর্মচাঞ্চল্যতা।

পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ করে দেশের ২৬টি পাটকলের মধ্যে পাঁচটি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিচ্ছে সরকার। শুধু দেশি নয়, বিদেশি কোম্পানিও পাটকল পরিচালনার সুযোগ পাচ্ছে। ২০ বছরের জন্য এসব পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে শর্ত দেওয়া হয়েছে, যারা কারখানা পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে, পাট–সম্পর্কিত পণ্য ছাড়া কারখানায় অন্য পণ্য উৎপাদন করতে পারবে না তারা। ২৪ মাসের অগ্রিম ভাড়া সরকারের হাতে জমা দিতে হবে। তারপর বুঝিয়ে দেওয়া হবে কারখানা।

মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলসের ইজারা পেয়েছে মিমো জুট লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। নরসিংদীতে অবস্থিত বাংলাদেশ জুট মিলসের ইজারা পেয়েছে বে ফুটওয়্যার লিমিটেড। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত হাফিজ জুট মিলসের ইজারা পেয়েছে সাদ মুসা গ্রুপ। সিরাজগঞ্জে অবস্থিত জাতীয় জুট মিলস পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে যুক্তরাজ্যের জুট রিপাবলিক। চট্টগ্রামে অবস্থিত কেএফডি জুট মিলস পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে ইউনিটেক্স কম্পোজিট।

এই পাঁচটি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া গেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংও মিলেছে। এখন বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) সঙ্গে পাঁচটি কোম্পানির আলাদা চুক্তি হবে। তবে চুক্তি সইয়ের আগে কোম্পানিগুলোকে অগ্রিম ২৪ মাসের ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। সে জন্য তাদের দেড় মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এই হিসাবে ডিসেম্বর মাস সময় পাচ্ছে কোম্পানিগুলো। ভাড়া জমা দেওয়ার পর তবেই চুক্তি হবে।

পাট ও বস্ত্রসচিব আবদুর রউফ বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করা দরকার, আমরা তা–ই করেছি। এখন বল ব্যবসায়ীদের কোর্টে। তারা যত দ্রুত অগ্রিম ভাড়া দেবে, তত দ্রুত আমরা চুক্তি সই করব।’ প্রথম দফায় পাঁচটি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার পর বন্ধ থাকা বাকি পাটকল নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানান তিনি।

বে গ্রুপের পরিচালক আবু সালেহ বলেন, ‘পাট হলো বাংলাদেশের ঐতিহ্য। এ শিল্প আমরা পুনর্জাগ্রত করতে চাই। সে জন্য এখানে নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন করতে হবে। অভিজ্ঞ মানুষদের নিয়োগ দিতে হবে।’

দেশে বেসরকারি পাটকল লাভের মুখ দেখলেও বিজেএমসির পাটকলগুলো বছরের পর বছর লোকসান দিয়ে আসছে। ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত ৫ অর্থবছরে বিজেএমসির আওতাধীন পাটকলগুলো ২ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা লোকসান দেয়। আর পাটকলগুলোর পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়ায় ১০ হাজার কোটি টাকা। লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা-অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর পর গত বছরের ১ জুলাই পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয় সরকার।

তথ্য বলছে, বিজেএমসির ২৬টি পাটকলের মোট জমির পরিমাণ ১ হাজার ৩১৩ একর।

২৬টি পাটকলের মধ্যে ৩টি আছে নন–জুট পাটকল। ফলে এই তিনটি পাটকলকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা বাদ দিয়েছে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়। তিনটি কারখানা আছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে। অবস্থানগত কারণে এখনই এই তিনটি কারখানা নিয়ে ভাবনা নেই মন্ত্রণালয়ের। দুটি পাটকল নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই দুটি পাটকল নিয়ে কিছু করার সুযোগ নেই। পাঁচটি পাটকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকি থাকে ১৩টি পাটকল। এসব পাটকল পরবর্তীকালে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হবে।

সাদ মুসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোহসীন বলেন, ‘আমরা এ মাসের মধ্যেই অগ্রিম ভাড়া পরিশোধ করব। তারপর কারখানা পুনর্গঠনের কাজ শুরু করতে হবে।’ এখানে কী ধরনের পণ্য উৎপাদন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনই বলার সময় হয়নি। পরিকল্পনা করছি, কী করা যায়।’

খুলনা গেজেট /এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!