বাংলাদেশ সব দিক থেকেই ডুবে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগ যুগপৎ আন্দোলনের ৩১ দফা ও ১ দফা ঘোষণার বর্ষপূর্তিতে উপলক্ষ্যে ‘৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ঢাকা শহরে টানা বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগের প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, দেশ আর্থিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে তো এমনি ডুবে গেছে। এখন আপনারা পানির ডুবা দেখতে পারছেন। প্রকৃত পক্ষে সবদিক থেকেই বাংলাদেশ ডুবে গেছে। কারণ এই ফ্যাসিস্ট সরকারের রেজিমের কারণে। ঢাকা শহর তো ডুবে যাবে। মেধাবী লোকজন তো আসতে পারছে না সামনের দিকে। যারা কাজকর্ম করেন, এই প্ল্যানিং থেকে শুরু করে এটা বাস্তবায়ন পর্যন্ত, সেখানে তো কিছু মেধাবী লোককে উঠে আসতে হবে। সেটা তো হচ্ছে না। দলীয় লোকজন দিয়ে যদি চালানো হয় তাহলে ঢাকা শহর ডুববে এবং সারা বাংলাদেশও ডুববে।
তিনি বলেন, কোটা বিষয়ে আমার বক্তব্য স্পষ্ট, এটি বাংলাদেশের মেধাবীদের ধ্বংস করতে চায়।
যেভাবে তারা (আওয়ামী লীগ) সরকার চালাচ্ছে, যেভাবে শাসন ব্যবস্থা চালাচ্ছে, এরকম চল তো থাকলে আগামী দিনে মেধাবী বাংলাদেশের কোনো সুযোগ নাই, বাংলাদেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। আজকের এই রেজিম ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে একটা মেধাবী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়, এটা আমার মনে হচ্ছে না। মেধাবী রাষ্ট্র হয়তো এরকম একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে খুব একটা সুযোগ নাও হতে পারে। কারণ মেধাবীরা সত্য কথা বলে, মেধাবীরা সত্য পথে চলে, মেধাবীরা প্রতিবাদ করে, মেধাবীরা প্রতিরোধ করে। আমি কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্রতি একটু অনুরোধ করবো, তারা যেভাবে কোটার জন্য লড়াই করছে তাদেরকে তাদের ভোটের জন্য এভাবে লড়াই করতে হবে, তাদেরকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্যে এভাবে লড়াই করতে হবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা যে কর্মসূচি দিয়েছি ৩১ দফার, এই ৩১ দফা একটা চমৎকার কর্মসূচি। কিন্তু কি কি কনস্টিটিউশনার পরিবর্তন আনলে মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার পাবে, সেই কথা কি মানুষ ভালো করে বুঝে? সাধারণ মানুষ বরঞ্চ সিএমএম কোর্টে গেলে বুঝা যায়-কত বড় অনাচার চলছে। কারণ তার উচিত জামিন, সেই জামিন দেয় না। কারণ ঘুষ না দিলে কোনো কাজ হয় না। তারা মনে করে এটার কি রকম করে পরিবর্তন করা যায়। আমাদের এজন্য আরও কথা আসছে, যেরকম করে যুক্তফ্রন্ট হয়েছে, যেরকম করে কংগ্রেস কর্মসূচি দিয়েছে, যেরকম করে কিজরিওয়াল দিয়েছে, সেই রকম করে এমন কর্মসূচি হতে হবে, এমনও হতে পারে এই যে কোটার দাবি সেটাও আমাদের দাবি-নামার মধ্যে আসতে পারে। যাতে ছাত্রদেরও আমরা অন্তর্ভুক্ত করতে পারি এবং বড় আন্দোলনের পথে পা বাড়াতে পারি। আমাদের সবাইকে মিলে লড়াইটা করতে হবে। সেই লড়াইটা হচ্ছে, এই সরকারের পতন। যেরকম করে ছাত্ররা বৃহস্পতিবার ব্যারিকেডে ভেঙেছে, সেরকম করে লড়াইয়ের চিন্তা করি।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, ৫৩/৫৪ বছরে পরে একটা জাতি রাষ্ট্র তাদের নিয়োগ পদ্ধতি কি হবে, মেধার ভিত্তিতে যোগ্যতার ভিত্তিকে। এটা নিয়ে জাতির মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। কোটা আন্দোলন ইতিমধ্যেই জনগণের মন স্পর্শ করেছে। ছাত্র-তরুণরা বাস্তবে সমগ্র জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে তারা এখন প্রতিনিধিত্ব করছে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এটা মামলা মোকাদ্দমার বিষয় না। এটা রাজনৈতিক বিষয়, এটা একটা প্রশাসনিক বিষয়। সুতরাং আজকে সরকারকে নীতিগতভাবে কোটা সংস্কারের দাবি গ্রহণ করে খুব দ্রুত একটা কমিশন গঠন করে কিভাবে মেধার ভিত্তিতে আমাদের চাকুরি নিয়োগ হবে, সেব্যাপারে একটা কার্যকর বিশ্বাসযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
সভাপতির বক্তব্যে গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এই দেশে কেবল মাত্র একটা শাসন নয়, এই রাষ্ট্রটাই জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে যে, তাকে দমন করে শাসন করে এই রাষ্ট্র লুট করবে, এই রাষ্ট্র তাদের দাপট দেখাবে, এটাই তাদের (সরকার) কাজ। এটাকেই তারা চিরস্থায়ী করতে চায়। তার বিরুদ্ধে আজকে বাংলাদেশের বিরোধীদলগুলো একটা ঐক্য গড়ে তুলেছেন যে, এভাবে রাষ্ট্রটা চলতে পারে না, এরকম শাসন চলতে পারে না। এই ফ্যাসিস্ট সরকার কোনো কথাই শুনছে না। আমাদেরকে আন্দোলনের জায়গায় যেতে হবে। মানুষ আশা করে বিরোধী দলগুলো আবার বড় আকারের সংগ্রাম গড়ে তুলে এই সরকারকে বিদায় করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। সেই লড়াই গড়ে তুলবেন, এই আশাবাদ আমি রাখছি।
সভায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সিনিয়র সহ সভাপতি তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, গণঅধিকার পরিষদের অপর অংশের আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, আমার বাংলাদেশ পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
খুলনা গেজেট/এএজে