সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার জবরদখলকৃত খলিশাখালীর ৪৩৯.২০ একর (১,৩২০ বিঘা) ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে ৭ দিনের মধ্যে অবৈধ দখলদার ও ভূমিদস্যুদের জমি ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
একইসাথে জমি ছেড়ে না দিলে জেলা ভূ-সম্পত্তি জবরদখল ও পুনরূদ্ধার সংক্রান্ত নভেম্বর-২১ মাসের সভার সিদ্ধান্তক্রমে খলিশাখালীতে অবস্থানরত সন্ত্রাসী বাহিনী, অবৈধ দখলদার ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে উল্লেখ করে রোববার (৩০ জানুয়ারি) প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিংয়ের মাধ্যমে খলিশাখালীসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে।
এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে খলিশাখালী এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের ওই জারিকৃত গণবিজ্ঞপ্তি প্রচারকালে খলিশাখালীতে অবস্থানকৃত ভূমিহীনরা উপজেলা প্রশাসনের প্রচার মাইক ও ভ্যান ভাংচুর করে। ভাংচুরকালে তারা গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার ভ্যানের চালক দেবহাটার কামটা গ্রামের বৃদ্ধ সালেক (৬০) কে মারপিটও করে।
হামলার শিকার ভ্যান চালক বৃদ্ধ সালেক জানান, পারুলিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে মোটর ভ্যানে মাইকিংয়ের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে করতে তিনি বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চালতেতলা হয়ে খলিশাখালীর রাস্তা ধরে যাচ্ছিলেন। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ প্রচার করতে না করতেই খলিশাখালীর জমি জবরদখলের মুল হোতা আনারুল ও রবিউলের নেতৃত্বে কিছু ভূমিদস্যু তার প্রচার ভ্যানের গতিরোধ করে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে তিনি গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করছেন বলার সাথে সাথে তারা তাকে জিম্মি করে মারপিট এবং গণবিজ্ঞপ্তি প্রচারের মাইক ও মোটর ভ্যান ভাংচুর করে। একপর্যায়ে ভ্যানচালক সালেক বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করলে আহতবস্থায় তাকেসহ ভাংচুরকৃত প্রচার মাইক, মোটরভ্যান ফেলে রেখে চলে যায় হামলাকারীরা।
সরকারি কাজে বাঁধা সৃষ্টির এঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী ও দেবহাটা থানার ওসি শেখ ওবায়দুল্লাহ।
প্রসঙ্গতঃ সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালিতে দীর্ঘদিনের ভোগদখলে থাকা ব্যক্তিদের হটিয়ে ১৩’শ বিঘা সম্পত্তির মধ্যে থেকে কমপক্ষে এক হাজার বিঘা বিলান জমি ও মৎস্য ঘেরের দখল নেয় স্থানীয় ভূমিহীনরা। খলিশাখালির বিস্তীর্ণ এসব জমি সরকারি সম্পত্তি উল্লেখ করে গত কয়েক যুগ ধরে তা বন্দোবস্তের দাবি করে আসছিল স্থানীয় ভূমিহীনরা। একপর্যায় গত বছর ১১ সেপ্টম্বর শনিবার ভোররাতে খলিশাখালি সহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের অন্তত ৫শ’ ভূমিহীন পরিবার ওই জমির দখল নেয়।
এদিকে দেবহাটার খলিশাখালীতে অবস্থানরত ভূমিদস্যুদের উচ্ছেদ ইস্যু নিয়ে বুধবার (১৯ জানুয়ারি) উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিস্তারিত অলোচনা করা হয়। সভায় জবরদখলকৃত খলিশাখালীর ১৩২০ বিঘা (৪৩৯.২০ একর) জমি ভূমহীন নামধারী ভূমিদস্যুদের কবল থেকে দখলমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় খলিশাখালীর দখলদারিত্বের মুল হোতা ও বহু মামলার আসামী ভূমিদস্যু আনারুল, রবিউলসহ অন্যান্য সন্ত্রাসীদের পর্যায়ক্রমে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেয়ার বিষয়ে সুপারিশ করেন বক্তারা। সে মোতাবেক খলিশাখালীতে অবস্থানরত ভূমিদস্যুদের উচ্ছেদ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
অপরদিকে উচ্ছেদাভিযান ঠেকাতে হাইকোর্টে ছুটোছুটিসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলীর তদবির নিয়ে একাধিক মন্ত্রনালয়, প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ অফিসার ও যুবলীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দৌঁড়ঝাপ শুরু করে ভূমিহীন নামধারী ভূমিদস্যুরা। শেষমেষ সে প্রচেষ্টা ব্যার্থ হওয়ায় প্রশাসনকে ভীতসন্ত্রস্থ করতে রোববার গণবিজ্ঞপ্তির প্রচারকালে হামলা চালায় খলিশাখালীর ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা।