যশোরে দু’দিনব্যাপী টানা বর্ষণ হয়েছে। এতে শহরের নিম্নঞ্চল তলিয়ে গেছে। পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা বিপর্যস্থ হওয়ায় জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩৬ ঘন্টায় যশোরে ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। আগামী ২৪ ঘন্টা আরো ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়াবিদরা।
আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি স্থল নিম্নচাপ হিসাবে শনিবার যশোরে অবস্থান করেছে। এটি অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গের দিকে এগোচ্ছে। আর এ নিম্নচাপের প্রভাবে যশোরাঞ্চলে শুক্রবার সকাল থেকেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়। যা শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এসময়ে গত ৩৬ ঘন্টায় যশোরে ৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শহর এলাকায় কখনো ভারী এবং কখনো অতি হালকা বৃষ্টি হয়েছে। আগামিকাল রোববার এ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরো বাড়বে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
এদিকে যশোর শহর ঘুরে দেখা গেছে, শনিবারের ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে শহরের নিম্নঞ্চল। বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। শহরের বেজপাড়া, টিবি ক্লিনিকপাড়া, স্টেডিয়ামপাড়া, শংকরপুর, মিশনপাড়া, উপশহর, চাঁচড়া, কারবালা, এমএম কলেজ এলাকা, নাজিরশংকরপুর, বকচর, আবরপুর পানিতে তলিয়ে গেছে। শংকরপুর, বেজপাড়া, খড়কি, কারবালা, স্টেডিয়ামপাড়ার অনেক বাড়িতে পানি উঠে গেছে। এসব এলাকার ড্রেন ছাপিয়ে উপচে পড়া পানি সড়ক পার হয়ে ঘরের মধ্যেও ঢুকে পড়েছে। ভেসে গেছে বিভিন্ন এলাকার পুকুর ও মাছের ঘের।
এছাড়া শহরের ছোট ছোট সড়কেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব সড়কের দুই পাশের ড্রেনের ময়লা-আবর্জনার নোংরা পানি উপচে পড়েছে সড়কে। সড়ক ছাপিয়ে সেই পানির ঢুকে পড়ে বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। দুপুরের এ বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়ে শ্রমজীবী মানুষেরা। টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েন তারা।
শহরের পাইপপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা সঠিক না থাকায় একটু বৃষ্টিতেই সড়কে হাটু পানি জমেছে। সড়কের পাশে ড্রেন থাকলেও আবর্জনায় পূর্ণ হওয়ায় পানি উপচে সড়কে প্রবেশ করে। সড়কের সেই পানি আবার দোকানে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, সড়ক নিচু আর ড্রেন হয়ে গেছে উঁচু। এ কারণে সড়কে পানি জমে।
শহরে শংকরপুর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সালেহা বেগম বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই বাড়িঘরে পাানি উঠে যায়। পরিবার নিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। আগে শহরের পানি হরিণার বিল দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। কিন্তু ২০১০ সালে হরিণার বিলে মেডিকেল কলেজ হওয়ার পর আশপাশে আরো অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে বিল দিয়ে পানি আগের মতো নিষ্কাশিত হতে পারছে না। ফলে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। শহরের খড়কির শাহ আবদুল করিম সড়কের সরকারি এমএম কলেজের দক্ষিণ গেট থেকে খড়কি মোড় হয়ে পীরবাড়ি, কবরস্থান পর্যন্ত এলাকায় পানি জমেছে। খড়কি দক্ষিণপাড়া-পশ্চিমপাড়া হাজামপাড়া, খড়কি রেললাইন পাড়ার বাসিন্দাদের বাড়ির উঠানে হাঁটু পানি। এই সড়কে চলাচলকারী রিকশা, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসের যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। আবার এই পানির মধ্যে দিয়ে রিকসা, ইজিবাইক যেতে রাজী না হওয়ায় অনেককে পায়ের জুতা হাতে নিয়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়।
খড়কি এলাকার শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টিতে ছাত্রাবাস, বাসাবাড়ি দোকানে পানি উঠে গেছে। খাল বেদখল, পর্যাপ্ত নর্দমার অভাব, বক্সড্রেনের নামে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার নাটক করা হয়েছে। এ কারণে দীর্ঘদিনেও পৌরসভা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল করতে পারেনি। তাই বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবতে হয় এলাকার মানুষকে।
শহরের খড়কি এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী কাজী আবু সাঈদ বলেন, যশোর পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে। ড্রেনগুলো অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। আর ড্রেনগুলোও নাগরিকরা ডাস্টবিনে পরিণত করেছে। এগুলো নিয়মিত পরিস্কারও করা হয় না। ফলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান বলেন, শহরবাসীর অসচেতনতার কারণে ড্রেনের পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তা, নালা সংস্কার ও নির্মাণের জন্য এমজিএসপি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে পৌরসভা বেশ কয়েকদিন ধরে পানি নিস্কাশনের সুবিধার্ধে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এ কাজ শেষ হলেই সমস্যা থাকবে না বলে তিনি দাবি করেন।
খুলনা গেজেট/এএজে