খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ
  আজ থেকে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ শুরু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট

দুই মাসেই সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে আগ্রহ তলানিতে

গেজেট ডেস্ক

সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর দুই মাস পূর্ণ হয়েছে গতকাল সোমবার। প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা নামে চার স্কিমে প্রথম মাসে প্রায় ১৩ হাজার জন অন্তর্ভুক্ত হলেও দ্বিতীয় মাসে এ সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ৬৬৯ জন। এক মাসের মধ্যেই এ কর্মসূচিতে জনগণের আগ্রহ কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। তাই দেশব্যাপী এ কর্মসূচি জনপ্রিয় করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তার উপায় বের করতে গতকাল দেশের সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে কর্তৃপক্ষ।

পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত চার স্কিমের আওতায় মোট ১৪ হাজার ৬৫৯ জন প্রথম কিস্তির টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন শেষ করেছেন। এতে সরকারের কোষাগারে জমা হয়েছে প্রায় ১১ কোটি ৫২ লাখ ৬১ হাজার টাকা। প্রথম মাস শেষে গত ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২ হাজার ৯৭০ জন প্রথম কিস্তির প্রায় ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন শেষ করেন। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত দ্বিতীয় মাসে প্রায় ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে যারা প্রথম মাসে যুক্ত হয়েছিলেন, তাদের একটি অংশের দ্বিতীয় কিস্তির টাকাও রয়েছে।

এক মাসের ব্যবধানে এ কর্মসূচিতে আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান সরাসরি উত্তর দেননি। তবে তিনি বলেন, দেশ ও দেশের বাইরে সর্বজনীন পেনশন স্কিম আরও জনপ্রিয় করতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ানো হবে।

জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য প্রগতি স্কিমে সর্বাধিক ৬ হাজার ৬৬৩ জন কিস্তি পরিশোধ করে নিবন্ধন করেছেন। এ ক্ষেত্রে টাকা জমা হয়েছে ৬ কোটি ১২ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’ নামের স্কিম। কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ সব ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত ৫ হাজার ৯৩৮ জন ব্যক্তি তাদের কিস্তি পরিশোধ করে নিবন্ধন করেছেন। এ স্কিমে জমা হয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ ৫০০ টাকা। অতিদরিদ্রদের জন্য ‘সমতা’ স্কিমে কিস্তি বাবদ ৩৪ লাখ ৫০ টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধন করেছেন ১ হাজার ৬৩৯ জন। তবে প্রবাসীদের জন্য প্রবাস স্কিমে মাত্র ৪৪৪ জন এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এ স্কিমে ১ কোটি ৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা জমা হয়েছে।

পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা  বলেন, এ উদ্যোগ আরও সফলভাবে বাস্তবায়নে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে গতকাল (সোমবার) মন্ত্রিপরিষদ সচিব, জনপ্রশাসন সচিব ও স্থানীয় সরকার সচিবের উপস্থিতিতে দেশের সব ডিসি ও ইউএনওদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন তারা। বৈঠকে যেসব সমস্যার কথা উঠে এসেছে, সেগুলো দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরও বলেন, এর আগে প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিভিন্ন বাধা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর  বলেন, পেনশন স্কিমের মতো এত বড় কর্মযজ্ঞ চালু করার আগে অন্তত পাঁচ থেকে সাত বছর প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কারা এ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন, তার ওপর কোনো জরিপও হয়নি। এমনকি উদ্বোধনের পরও খুব একটা প্রচার নেই। একই সঙ্গে এ কর্মসূচি নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তর সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে দেওয়া হয় না। সার্বিকভাবে পরিষ্কর ধারণা জনগণকে দেওয়া না হলে এ উদ্যোগ সফলতা পাবে না।

তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচন সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে মানুষের আগ্রহের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এ কার্যক্রম যেহেতু আইন দ্বারা সুরক্ষিত, তাই টাকা খোয়া যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। স্কিম কোনো কারণে বন্ধ হলে সুদসহ অর্থ ফেরত পাবে জনগণ। তার পরও মানুষের মনে সন্দেহ হতেই পারে।

গত ১৭ আগস্ট উদ্বোধনের কয়েক ঘণ্টা পর একসঙ্গে ১১ থেকে ১২ হাজার মানুষ অনলাইনে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের প্ল্যাটফর্মে ঢোকেন। প্রথম দিনই নিবন্ধন হয় ১ হাজারের বেশি। এর পর এক মাসে নিবন্ধনের সংখ্যা এবং অর্থ জমার পরিমাণ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা সন্তুষ্ট থাকলেও দ্বিতীয় মাসে কমে যাওয়ায় তারা কিছুটা চিন্তিত।

পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মানুষকে জানানোর জন্য জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ নানা উপায় বেছে নিয়েছে। এর অন্যতম গণমাধ্যম। জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া থেকে শুরু করে টেলিভিশনে বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে পেনশন স্কিমের ধারণা পরিষ্কার করা হচ্ছে। বিদেশি মিশনগুলোর সঙ্গেও তারা কাজ করছেন। মাঠ পর্যায়ে জেলা প্রশাসকদের যুক্ত করে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!