খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

দীপু মনির আমলনামা: দুই কোটিতে ভিসি, ৫০ লাখে প্রিন্সিপাল পদায়ন

গেজেট ডেস্ক

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। গত ১১ বছরে পররাষ্ট্র, শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। সবচেয়ে আলোচিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে। তার সময়ে শিক্ষা খাতে দুর্নীতির জাল ছড়িয়ে যায় সব স্তরে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীপু মনি দেশের পাঁচটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কুক্ষিগত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

দীপু মনির বিষয়ে খোঁজ রাখেন এমন অনেকে বলছেন, মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ পর্যন্ত তার হাত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) নিয়োগের জন্য দুই কোটি এবং কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য তিনি ৫০ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন। তার সময়ে শিক্ষা খাতে এটি ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’। এসব দুর্নীতি-অনিয়ম সম্পর্কে জানলেও ভয়ে মুখ খোলেননি তার মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।

দীপু মনি ক্ষমতায় থাকাকালে দুইজন সচিবের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা এসব বিষয় জানলেও আওয়ামী সরকারে দীপু মনির দাপটের কারণে কোনো প্রতিবাদ করতে পারেননি। দীপু মনির ভাই ডা. জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ টিপুর মাধ্যমে হতো সব নিয়োগ ও পদায়ন। বিভিন্ন কাজে বিতর্কের জন্ম দেওয়ায় একপর্যায়ে তার দপ্তর থেকে অন্যত্র চলে যান তৎকালীন এক সচিব। এছাড়া, নিজ থেকে চলে যান দীপু মনির একান্ত সচিবও (পিএস)।

দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে তার ভাই টিপুর মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্যের এক বিশাল রাজত্ব কায়েম করেন। সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি ও কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি। মধ্যম সারির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ভিসি নিয়োগে তিনি নিতেন দুই কোটি টাকা, আর সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে নিতেন ৫০ লাখ টাকা

সংশ্লিষ্টরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের চার মেয়াদের মধ্যে তিন মেয়াদে ভিন্ন তিনটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন দীপু মনি। এর মধ্যে পররাষ্ট্র ও শিক্ষায় পূর্ণকালীন মেয়াদ শেষ করেন। সর্বশেষ সরকারে তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে পালন করেন। তিন মন্ত্রণালয়ে থাকা অবস্থায় তিনি ও তার ভাই টিপু নানা বিতর্কের জন্ম দেন। রাজধানী কলাবাগান ও বনানীতে ছায়া অফিসের মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন তারা। ক্ষমতার অপব্যবহার করে দীপু মনি নিজে ও তার স্বজনরা জড়িয়ে পড়েন দুর্নীতিতে।

দুই কোটিতে ভিসি, ৫০ লাখে প্রিন্সিপাল পদায়ন

দীপু মনি শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে তার ভাই টিটুর মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্যের এক বিশাল রাজত্ব কায়েম করেন। সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি ও কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি। মধ্যম সারির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ভিসি নিয়োগে তিনি নিতেন দুই কোটি টাকা, আর সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগে নিতেন ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া, শিক্ষা প্রশাসনে প্রতিটি বদলিতে তার ভাইয়ের হাতে ছিল পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ। সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকায় বেচাবিক্রি হতো শিক্ষা প্রশাসনের নানা পদ।

১৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা ও রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত একটি কলেজের সাবেক প্রিন্সিপাল নাম প্রকাশ না কৃরার শর্তে  বলেন, আমাকে এই কলেজের অধ্যক্ষ পদে আসতে ৫৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। প্রথমে একজন মন্ত্রীর ডিও লেটার নিয়ে গেলে শিক্ষামন্ত্রী দেখবেন বলে আশ্বাস দেন। এরপর শুনতে পারি অন্য আরেকজন তার ভাই টিপুর সাথে যোগাযোগ করছে। বিষয়টি মন্ত্রীকে জানাতে একাধিবার সাক্ষাৎ চেয়েও পাইনি। পরে তার ভাইয়ের কাছে গেলে তিনি আমাকে বলেন, ডিও লেটার দিয়ে কি প্রিন্সিপাল হতে পারবেন? এরপর অন্য আরেকটি মাধ্যমে ৫৫ লাখ টাকায় দফারফা হয়।

চট্টগ্রামের বিভাগের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে পদায়ন করতে দুই কোটি টাকা নেন তার ভাই টিপু। নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সুপারিশ আসার পর টিপু অন্য একজনের মাধ্যমে জানান, ভিসি হওয়ার জন্য ২ কোটি টাকা দিতে রাজি আছেন কয়েকজন। তদবির করে লাভ নেই।
চট্টগ্রামের বিভাগের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে পদায়ন করতে দুই কোটি টাকা নেন তার ভাই টিপু। নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সুপারিশ আসার পর টিপু অন্য একজনের মাধ্যমে জানান, ভিসি হওয়ার জন্য ২ কোটি টাকা দিতে রাজি আছেন কয়েকজন। তদবির করে লাভ নেই। আপনার অধীনে একটি নিয়োগ দিয়েই তো এই টাকা ওঠানো সম্ভব- এমন পরামর্শ দিলে শেষ পযন্ত ওই ভিসি টাকা দিতে রাজি হন।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শুধু ঢাবি, রাবি, চবি, জাহাঙ্গীরনগর বাদে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগে কমবেশি আর্থিক লেনদেন হয়েছে। শেষ সময়ে ‘২ কোটি দাও ভিসি হও’- এমন একটি কথা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে ওঠেন ভিসিরা।

ইউজিসির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের কোনো নজির ছিল না। কিন্তু দীপু মনি সেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

সচিব ও পিএস স্বেচ্ছায় চলে যান

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, দীপু মনির সঙ্গে কাজ করা তৎকালীন একজন সচিব তার অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানান। কিন্তু এর কোনো প্রতিকার হয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অন্যত্র চলে যান। যদিও তিনি এখন প্রশাসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে আসীন রয়েছেন। এছাড়া, দীপু মনির সঙ্গ ছাড়েন তার তৎকালীন পিএসও।

শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে ২০২২ সালে শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ-সাউথ ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তনের নামে আসলে এগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় একটি চক্র। এর নেপথ্যে ছিলেন দীপু মনি
জানতে চাইলে ওই সচিব বলেন, অন্য মন্ত্রণালয়ে চলে এসেছি, সেটি সরকারই আমাকে পাঠিয়েছে।

তার (দীপু মনি) সাবেক পিএস ও বর্তমানে সরকারি কর্মকমিশনের যুগ্ম সচিব ড. আব্দুল আলীম বলেন, আমি যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার পর চলে আসি। দীপু মনির ভাইয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাড়ে তিন বছর পিএস থাকাকালে তার সাথে আমার তিনবার দেখা হয়েছে। তাই ওনার বিষয়ে আপনি যা শুনেছেন, আমিও তাই। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।

৫ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দখল করেন দীপু মনি

শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে ২০২২ সালে শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ-সাউথ ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তনের নামে আসলে এগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় একটি চক্র। এর নেপথ্যে ছিলেন দীপু মনি। আওয়ামী লীগের মেয়র, ব্যবসায়ী, আমলা, শিক্ষাবিদদের দিয়ে নতুন করে গঠন করা হয় নর্থ-সাউথ ও মানারাতের ট্রাস্টি বোর্ড। এরপর বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ও এভাবে বেদখল হয়। বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি বেদখলের উদ্যোগ নিয়েও শেষ করতে পারেননি দীপু মনি। ২০২৪ সালে নির্বাচনের পর তাকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর এই দুই বিশ্ববিদ্যালয় বেদখলের প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। যদিও তা শেষ করতে পারেননি তিনি।

নিজ জেলায় চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শুধু জমি অধিগ্রহণে ৩৫৯ কোটি টাকা দুর্নীতির পাঁয়তারা করেন দীপু মনি। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের আগেই সেখানকার সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি দাম দেখিয়ে দলিল করে নেন তার নিকট আত্মীয়রা।
একইভাবে রাজধানী ঢাকার গুলশানের মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ দখল করতে চান সমালোচিত এই শিক্ষামন্ত্রী। তিনি অযাচিত হস্তক্ষেপ করে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে কয়েকবার উদ্যোগ নেন। এরপর প্রতিষ্ঠানটির সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। শেষে উচ্চ আদালতে শরণাপন্ন হয়ে রক্ষা পায় প্রতিষ্ঠানটি।

স্কুল-কলেজ ভবন নির্মাণে ৫ শতাংশ কমিশন

শিক্ষার উন্নয়ন বাজেটের সিংহভাগ বরাদ্দ পায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। এই অধিদপ্তরটি সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, নতুন ভবন নির্মাণ, বিদ্যমান ভবনগুলোর সম্প্রসারণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও সংস্কার এবং আসবাবপত্র সরবরাহের কাজ করে থাকে। এছাড়া, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, আইসিটি ল্যাব স্থাপন, ইন্টারনেট সংযোগ, আইসিটি-সুবিধা সরবরাহের কাজও তারা করে থাকে। শিক্ষার উন্নয়ন বাজেটের সিংহভাগ এ দপ্তরের জন্য বরাদ্দ থাকে। এ খাতে সব ঠিকাদারকে ৫ শতাংশ কমিশন দিয়ে কাজ নিতে হতো। ইইডি’র পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল দীপু মনির ভাই টিপুর হাতে।

৩৫৯ কোটি টাকা দুর্নীতিতে চাঁদপুরে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

নিজ জেলায় চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শুধু জমি অধিগ্রহণে ৩৫৯ কোটি টাকা দুর্নীতির পাঁয়তারা করেন দীপু মনি। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের আগেই সেখানকার সাড়ে ৬২ একর জমি মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি দাম দেখিয়ে দলিল করে নেন তার নিকট আত্মীয়রা। তারা ভূমি অধিগ্রহণে প্রশাসনিক অনুমোদনের আগেই চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে জায়গা ঠিক করে নিজেদের নামে দলিল করিয়ে নেন। পরবর্তী সময়ে সেসব জমিই প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচন করে এবং জেলা প্রশাসনকে অধিগ্রহণের জন্য বলে। সেখান থেকে ৩৫৯ কোটি অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এই অধিগ্রহণের বিরোধিতা করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস। তিনি চাঁদপুরে দীপু মনির ভাইসহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীর জমি দখলের বিরুদ্ধে অবস্থানের জন্য আলোচিত ছিলেন। টিপুসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী ভুয়া দলিলের মাধ্যমে ৪৮ একরের বেশি জমির দখল নেওয়ার প্রতিবাদ জানানোর ৪৮ ঘণ্টা পর তাকে নেত্রকোণায় বদলি করা হয়।

চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু উত্তোলনেও চোখ ছিল দীপু মনির। তার খাস লোক হিসেবে পরিচিত লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সেলিম খানকে সেই বালু তোলার লিজ দেন তিনি। চাঁদপুরে মেঘনা নদী থেকে সেলিম খানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বালু তোলার প্রতিবাদ যারাই করেছেন তারাই দীপু মনির রোষানলে পড়েছেন।

মুখে নোট গাইড বইয়ের বিরোধিতা করলেও দীপু মনি নোট-গাইড বিক্রেতাদের কাছ থেকে নিয়মিত কমিশন নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কাজে তাকে সহায়তা করতেন একজন প্রকাশনীর মালিক। সেই প্রকাশনীর মালিকের বাড়ি চাঁদপুরে
সম্প্রতি গণপিটুনিতে ছেলেসহ নিহত হন চাঁদপুরের সেই চেয়ারম্যান সেলিম খান। তার অবৈধ বালু উত্তোলন সম্রাজ্যের মদদদাতা ছিলেন দীপু মনি। এ কারণে খোদ জেলা আওয়ামী লীগ নেতারাই বিভিন্ন সময়ে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন এ দুজনের দিকে।

চাঁদপুর জেলার আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সেলিম খান একসময় ছোটখাটো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি দীপু মনির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন এবং তখনই মেঘনা থেকে বালু তুলতে শুরু করেন। বছরের পর বছর ধরে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে সেলিম খানকে বলা হতো ‘বালুখেকো সেলিম’।

নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বালু তোলার সমালোচনা করে পদ হারান। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নদী দিবসের আলোচনায় তিনি বলেন, মেঘনায় অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করছেন, তাদের সঙ্গে চাঁদপুরের একজন নারী মন্ত্রীর সম্পর্ক আছে। এর দুইদিন পরই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

সরকারি খাস জমিতে দীপু মনির ভাইয়ের ‘টিপু নগর’

নীলকমল ইউনিয়নের বাহেরচরে বিপুল পরিমাণ খাসজমি নিজের কবজায় নিয়ে দীপু মনির ভাই টিপু তৈরি করেন মাছের ঘের, গবাদি পশুর খামার ও সবজি বাগান। কেবল সরকারি জমির ওপরই নিয়ন্ত্রণ নেননি, ওই এলাকার নাম বদল করে নিজের নামে রেখেছেন ‘টিপু নগর’।

নোট ও গাইড বই থেকে তিন মাস অন্তর ২৫ কোটি টাকার কমিশন

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, নোট গাইড বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও সারা দেশে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে এসব বই। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী নোট বা গাইডের ওপর নির্ভরশীল। মুখে নোট গাইড বইয়ের বিরোধিতা করলেও দীপু মনি নোট-গাইড বিক্রেতাদের কাছ থেকে নিয়মিত কমিশন নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কাজে তাকে সহায়তা করতেন একজন প্রকাশনীর মালিক। সেই প্রকাশনীর মালিকের বাড়ি চাঁদপুরে।

ঢাকার এক নোট-গাইড প্রকাশক জানান, তিন মাস পরপর অন্তত ২৫ কোটি টাকা কমিশন নিতেন দীপু মনি।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!