খুলনার দিঘলিয়ার উপজেলার গাজীরহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় চীনা বাদাম চাষে সফলতা পাচ্ছেন। তাদের দেখাদেখি এলাকার অন্যান্য কৃষকেরও দিন দিন এ বাদাম চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। চীনা বাদামের চাহিদা প্রচুর দামও ভালো। একজন কৃষক প্রতি কেজি চীনা বাদাম ১১০ টাকা থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। চাহিদা এবং লাভ দুই’ই থাকায় এ অঞ্চলের অনেক কৃষক বাদাম চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চীনাবাদাম একটি স্বল্পমেয়াদি ফসল। এটি একটি উৎকৃষ্ট ভোজ্য তেলবীজ। চীনাবাদামের বীজে শতকরা ৪৮ থেকে ৫০ ভাগ তেল এবং ২২ থেকে ২৯ ভাগ আমিষ রয়েছে। দেশে চীনা বাদামের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী আমাদের দেশে চীনা বাদাম উৎপাদিত হচ্ছে না।
সম্প্রতি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার গাজীরহাট ইউনিয়নের চাষীরা চীনা বাদাম চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। এ বছর এ অঞ্চলের প্রায় তিনশত কৃষক চীনা বাদাম চাষ করে সাফল্য পেয়েছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও তারা বেশ লাভবান হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ কিশোর আহমেদ খুলনা গেজেটকে বলেন, এ উপজেলার গাজীরহাট ইউনিয়নের আবাদী জমির বেশ কিছু এলাকার মাটি বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এলাকার কৃষকেরা চীনা বাদাম চাষ করে সফলতা পাচ্ছে পাশাপাশি তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতি হেক্টর জমিতে চীনা বাদাম চাষে খরচ পড়ে ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। খরচ খরচা বাদ দিয়ে একজন কৃষক প্রতি হেক্টর জমিতে চীনা বাদাম চাষ করে ১ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টাকা আয় করতে পারেন। এ বছর গাজীরহাট ইউনিয়নে ১৫ হেক্টর জমিতে বিনা ৪ ও ৮ জাতের চীনা বাদাম চাষ হয়েছে। এ অঞ্চলের ২৯০ জন কৃষক চীনা বাদাম চাষের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। এ বছর উৎপাদিত চীনাবাদাম থেকে তাদের নীট আয় ১৯ লাখ ৭২ হাজার ৫০০ টাকা। বাদাম চাষের এ সফলতা অন্যান্য চাষীদেরও আগ্রহী করে তুলছে।
তিনি বলেন, আগামী বছর অতিরিক্ত আরো ২০ হেক্টর জমিতে চীনা বাদাম চাষের আওতায় আনা হবে। বাংলাদেশে বছরে ৯০ হাজার হেক্টর জমি থেকে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চীনাবাদাম উৎপন্ন হয়। আমাদের দেশে হেক্টরপ্রতি চীনাবাদামের গড় ফলন মাত্র ১ দশমিক ৫২ মেট্রিক টন। তবে উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে চীনাবাদামের ফলন বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
চীনা বাদামের পুষ্টিগুণ
পৃথিবীতে উৎপাদিত বাদামের মধ্যে চীনাবাদাম সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। কাঁচা ও ভাজা তো বটেই মাখন, জ্যাম, চানাচুর, কেক, বিস্কুট, তরকারি, ভর্তা ও তেল তৈরিতে চীনাবাদাম ব্যবহার করা হয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চীনাবাদামের রয়েছে নানা রকমের অবদান। যেমন চীনাবাদামের প্রোটিন দেহ গঠনে ও মাংশপেশি তৈরিতে সাহায্য করে। চীনাবাদামের মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এর উচ্চমাত্রার নিয়াসিন দেহকোষ সুরক্ষা করে, বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধ করে, মস্তিষ্ক সুস্থ রাখে ও রক্ত চলাচলে সহায়তা করে। চীনাবাদাম প্রতিরোধ করে কোলন ক্যানসার, ব্রেস্ট ক্যানসার ও হাটের্র রোগ। এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকে, যা হাড় গঠনেও সহায়ক। চীনাবাদামে আরও আছে প্রচুর আয়রন। এ উপাদান রক্তের লোহিত কণিকার কার্যক্রম বৃদ্ধি করে। চীনাবাদামের ক্যারোটিন ও ভিটামিন ই ত্বক এবং চুল সুন্দর রাখে।