বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নিয়েছেন। ঈদের পর প্রথম কার্যদিবসে আজ সকাল ১০টায় তিনি নতুন এই দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাকে বরণ করে নেন। তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়। বিদায়ী গভর্নর ফজলে কবিরের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন রউফ। তিনি দেশের ১২তম গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নরের দায়িত্ব পাওয়া আবদুর রউফ তালুকদারের সরকারি চাকরির মেয়াদ ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত। গভর্নর পদে যোগ দিতে তাকে সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিতে হয়েছে। ১১ জুলাই থেকে তার স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন রাষ্ট্রপতির কার্যালয় অনুমোদন দিয়েছে।
সরকারি চাকরি বিধি, ২০১৮-এর দ্বাদশ অধ্যায়ে ‘অবসর, ইস্তফা ইত্যাদি’ বিষয়ে বিবরণ দেওয়া আছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর যেকোনো সময় একজন সরকারি কর্মচারী অবসর নিতে পারেন। তবে অবসর গ্রহণের ৩০ দিন আগে ওই কর্মচারীকে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার ইচ্ছা লিখিতভাবে জানাতে হবে। আরও উল্লেখ আছে, এ ইচ্ছা চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং তা সংশোধন বা প্রত্যাহার করা যাবে না।
আবদুর রউফ তালুকদারের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে এমবিএ করেছেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি থেকে উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
বিসিএস ১৯৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা আবদুর রউফ তালুকদার সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন সচিবালয় ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে। এ ক্যাডার বিলুপ্ত হয়ে প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে একীভূত গেছে প্রায় ২০ বছর আগে। কর্মজীবনে তিনি শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতরের উপনিবন্ধক, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও তথ্য মন্ত্রণালয়ে সহকারী সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব ছিলেন।
বিসিএস ৮৫ ব্যাচের আব্দুর রউফ তালুকদারকে ২০১৮ সালের ১৭ জুলাই অর্থসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর সিনিয়র সচিব হিসেবে পদমর্যাদা দেওয়া হয়। করোনাকালীন দেশের অর্থনীতির ক্রান্তিকালে তিনি অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় তার পরামর্শ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রশংসনীয় হয়েছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, করোনার দুই বছরে অর্থ বিভাগ পরিচালনার ক্ষেত্রে তার কাজ ছিল এক কথায় ডায়নামিক। অনেকটা তার নেতৃত্বেই চলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, রউফ তালুকদার দীর্ঘ ১৮ বছর অর্থ বিভাগে বিভিন্ন পদমর্যাদায় কাজ করেছেন। এছাড়াও শিল্প, খাদ্য ও তথ্য মন্ত্রণালয়েও কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। এক সময় তিনি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি (কমার্শিয়াল) হিসেবে কাজ করেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সংস্কারপ্রক্রিয়ায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে বাজেট সংস্কার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, অবসরভোগী সরকারি চাকুরেদের ইএফটির মাধ্যমে পেনশন প্রদান এবং সঞ্চয়পত্রের অটোমেশনে তার ভূমিকা ছিল অনেক। ২০২১ সালে ‘ন্যাশনাল ইন্টিগ্রিটি অ্যাওয়ার্ড’ পান আব্দুর রউফ তালুকদার।
উল্লেখ্য, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ পদত্যাগ করেন তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমান। একই বছর চার বছরের জন্য গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান ফজলে কবীর। বিদেশে থাকা ফজলে কবীর দেশে ফিরে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০ মার্চ। যদিও ওই হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ১৯ মার্চ।
কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩৪ দিন আগে, অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গভর্নর হিসেবে তার মেয়াদ ৩ মাস ১৩ দিনের জন্য বাড়িয়ে দেয় সরকার। এতে বলা হয়, ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিনি গভর্নর থাকবেন। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডারে চার বছরের জন্য কাউকে গভর্নর পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা থাকলেও সরকার এ মেয়াদ আরেক দফা বাড়াতে পারে বলে অর্ডারে বলা রয়েছে। ফজলে কবীরের ৬৫ বছর বয়স শেষ হয় ২০২০ সালের ৩ জুলাই। তার আগেই মে মাস থেকে শুরু হয় গভর্নর পদের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধনের কাজ। পরবর্তীতে অর্ডার সংশোধন করে গভর্নরের চাকরির মেয়াদ ৬৭ বছর পর্যন্ত করা হয়।
খুলনা গেজেট/ এস আই